পেস ব্যাটারির পতাকাবাহী

অভিজ্ঞতা বলতে ঝুলিতে তখন শুধু একটা অনুর্ধব-১৯ বিশ্বকাপ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্র চারটি ম্যাচ খেলা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির দীর্ঘদেহী এক বোলারকে খুঁজে আনলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

অভিষেক টেস্ট সিরিজেই তাঁর শরীরি ভাষা, গতি, আগ্রসান বলে দিচ্ছিল তাঁর রক্তে ক্যারিবীয় ক্রিকেট ঐতিহ্যটা দারুণ ভাবে বইছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের দুর্দিনে কোর্টনি ওয়ালশ কিংবা কার্টলি অ্যামব্রোসদের যোগ্য উত্তরসূরি হয়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন কেমার রোচ।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সাথে দেনা পাওনা নিয়ে বোর্ডের দ্বন্দ্ব তখন তুঙ্গে। প্রতিবাদে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে নামেনি সিনিয়র ক্রিকেটাররা। ফলে নয় জন অনভিষিক্ত ক্রিকেটার নিয়ে টেস্ট দল ঘোষণা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সেই সিরিজে মোট সাত জন ক্রিকেটার ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট অভিষিক্ত হন। তাঁদেরই একজন ছিলেন কেমার রোচ। তবে তিনি পরবর্তীকালে নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরাদের কাতারে। ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারির সেই স্বর্ণযুগ আজ ইতিহাসের পাতায় মিলিয়ে গেছে, তাঁর টুকটাক রেশ আজো পতাকাবাহী হয়ে বয়ে নিয়ে চলেছেন রোচ।

সেই টেস্ট সিরিজ বাংলাদেশ সহজেই জিতলেও দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছিলেন তিনি। সাকিব আল হাসানের উইকেট নিয়ে টেস্টে নিজের খাতা খুলেন তিনি। সবমিলিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টেই নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেই তুলেন নেন আরো ছয়টি উইকেট।

সবমিলিয়ে ২ টেস্টে ১৩ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে পদার্পন করেন এই পেসার। ওয়ানডে সিরিজেও ছিলেন একইরকম বিধ্বংসী। ৩ ম্যাচের সিরিজে ১৬.২০ গড়ে নিয়েছিলেন ১০ উইকেট। সেই সিরিজে ফলাফল যাই হোক, রোচকে অন্তত আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

ফলে সেবছরই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ক্রিস গেইল, শিবনারায়ন চন্দরপালের মত সিনিয়র ক্রিকেটাররা ফিরলেও দলে নিজের জায়গা ধরে রেখেছিলেন এই পেসার। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ১৩ উইকেট নিয়ে দলের সেরা পেসার ছিলেন তিনি।

এছাড়া নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে বিশ্বকাপ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন রোচ। এরপর আর কখনো ফিরে তাকাননি তিনি। গত এক দশক ধরে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলিং অ্যাটাক সামলে যাচ্ছেন তিনি।

বিশেষ করে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের জন্য যেনো যম হয়ে উঠেছেন কেমার রোচ। ডানহাতি এই পেসার বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ক্রিজে আসলেই রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে বল করেন। ফলে নতুন ব্যাটসম্যানদের ডানহাতি পেসারের রাউন্ড দ্য উইকেটের বল খেলতে যে বেশ অস্বস্তি হয় তা রোচ ভালো ভাবেই দেখাচ্ছেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ওপেনার ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালও কেমার রোচের এই বল নিয়ে তাঁর ভীতির কথা জানিয়েছিলেন। আর জানাবেনই না কেনো। তামিমকে এখন অবধি মোট ১১ বার রোচের বলে আউট হয়েছেন। আসলে শুধু তামিম কেনো, যেকোনো বাঁহাতি ব্যাটসম্যানই হয়তো রোচের বোলিং নিয়ে আতঙ্কে থাকেন।
টেস্ট ক্রিকেটে কেমার রোচের সবচেয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। এ

খন অবধি ১৩ টেস্ট খেলে দেশটির বিপক্ষে নিয়েছেন ৫০ টি উইকেট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে দুইবার। এছাড়া ৮ ম্যাচ খেলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও আছে ৩৬ টি টেস্ট উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এখন পর্যন্ত ৬৫ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন রোচ।

সেখানে ২৭.৩২ গড়ে নিয়েছেন ২২৩ উইকেট। এই ফরম্যাটে ৯ বার পাঁচ উইকেট ও ১ বার দশ উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে তাঁর। এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটেও ৯২ ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ১২৪ উইকেট।

সবমিলিয়ে কেমার রোচ বোধহয় পৃথিবীতে এসেছিলেন পেসার হওয়ার জন্য। তাঁর উচ্চতা, দৈহিক গড়ন কিংবা শারীরিক ভাষায় একজন পেস বোলারের স্পষ্ট ছাপ। যার মূল অস্ত্র একেবারে নিখাঁদ গতি। ঠিক যেন ক্যারিবিয়ান আদি পেস ব্যাটারির নতুন সংস্করণ। কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস কিংবা কেমার রোচদের এই জয়গান চলতে থাকুক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link