‘ব্যাটিংয়ে দায়িত্বজ্ঞান দেখতে চাই’

একসময় জাতীয় দলের সাথেই ছিলেন। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরেও দলের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু গত কিছুদিন নানা কারণেই জাতীয় দলের সাথে ছিলেন না। অবশেষে খেলোয়াড় ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে আবার জাতীয় দলের সাথে ফেরানো হয়েছে খালেদ মাহমুদ সুজনকে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে তিনি টিম ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করবেন। এই পদটা স্থায়ীও হতে পারে। নতুন এই দায়িত্ব শুরু করার আগে দল গোছানো, বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স এবং ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলেছেন সুজন।

খেলা ৭১-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে বলেছেন দলের নানা দিক নিয়েই।

আবার জাতীয় দলে ফিরলেন। সময়টা তো খুব ভালো যাচ্ছে না। এই সময় দায়িত্ব নেওয়াটা কী একটু বাড়তি চ্যালেঞ্জিং?

সব কাজই তো চ্যালেঞ্জিং আসলে। এটা কোন নতুন কিছু না। বাংলাদেশ দলে কাজ করাই চ্যালেঞ্জের একটা ব্যাপার আছে। এটাতো নতুন না যে, খারাপ সময়ে আমি কাজ করছি। এরকম আরো উদাহরণ আছে, বাংলাদেশের খারাপ সময়ে আমাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছে। চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই। বাংলাদেশের যে কোন খেলাই চ্যালেঞ্জ; যে কোন সিরিজই চ্যালেঞ্জ।

বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স আমাদের টিম ম্যানেজমেন্টকে কী একটা বাড়তি চাপে ফেলেছে?

ম্যানেজমেন্টকে চাপে তো ফেলছে অবশ্যই। তবে ওই সময় আমি ম্যানেজমেন্টের ভিতর ছিলাম না। ম্যানেজমেন্ট চাপে ছিল অবশ্যই। খেলোয়াড়রাও এক ধরণের চাপে আছে। এখন আমার কাজ হচ্ছে ওই চাপ থেকে দলে বের করে আনা। দলকে ওখান বের করা আনা, স্বাভাবিক খেলায় ফিরিয়ে আনা। আমি মনে করি, বাংলাদেশ যা খেলেছে ওটা বাংলাদেশ দলের আসল খেলা না। এর থেকে ভালো খেলার ক্ষমতা আছে ছেলেদের। এটি আপনিও বিশ্বাস করেন, আমিও বিশ্বাস করি। আমাকে এই বিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনতে হবে। এই কাজটাই আমার যে স্বাভাবিক খেলায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা দলকে। সবাইকে উজ্জ্বীবিত করা, একটা দল হিসাবে খেলা, সত্যি কথা বলতে এটাই চাই।

সুজন ভাই, এটা ব্যাপার বলা হচ্ছে যে, বিশ্বকাপের ওই সময় থেকে বের করে আনার জন্য দলটাকে একটা রিফর্ম করা দরকার। দলে কিছু ফ্রেশ ব্লাড দরকার। আপনারও কী তাই মনে হয়?

হ্যাঁ। এরকম একটা চিন্তা তো আছেই, অবশ্যই আছে। অনুশীলনেই এগুলো কিছুটা দেখেছেন আপনারা। বুঝতেও পারছেন যে, কিছু নতুন মুখ দেখা যাবে। একটা চিন্তা তো আছেই। তবে নতুন মুখ আনলেই যে সব ঠিক হয়ে যাবে, তাও নয়। আমাদের একটা প্রত্যাশা যে টি-টোয়েন্টিতে আমরা যেনো ছেলেদের স্বাধীনতা দিতে পারি। এই ফরম্যাটে আমাদের নতুনদের পরখ করার সুযোগ আছে। আমাদের টেস্ট ও ওয়ানডেতে সব ঠিক করাই আছে। বিশেষ করে ওয়ানডেতে পরিবর্তনের কিছু নাই। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে একটা পরিবর্তনের সুযোগ আছে বা নতুন কিছু ছেলেকে দেখার সুযোগ আছে। বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়া মানে তো টি-টোয়েন্টি শেষ হয়ে যাওয়া না। সামনে আরো একটা বিশ্বকাপ রয়েছে। এগুলো মাথায় নিয়ে এখন নতুন করে চিন্তা করতে হবে।

সিনিয়রদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে এখন তরুনদের দিকে তাকানোর সময় এসেছে?

এভাবে ভাবছি না আমরা। কথাটা সিনিয়র-জুনিয়র না, কথাটা হচ্ছে পারফরম্যন্স। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে আপনি পারফরম করছেন কিনা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তো একটু বেশি ডিমান্ডিং। মানে যদিও বিশ ওভারের খেলা, কিন্তু ইনটেন্স যদি দেখেন সবচেয়ে বেশি ইনটেনসিটি কিন্তু এই খেলায়। এইটা মাথায় থাকবে। তবে সিনিয়র জুনিয়র করে ভাবার কিছু নেই। আমাদের সিনিয়ররা তো আনফিট না কেউ। যদি মাহমুদউল্লাহর কথা বলেন, তামিমের কথা বলেন, মুশফিক বা সাকিবের কথা বলেন; কেউ তো আর আনফিট না। সবাই তো ফিট। এখান আমাদের দেখতে হবে, পারফরম্যান্স কার কেমন। পারফরম্যন্সটা মুখ্য বিষয়।

তারপরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটা ব্যাপার তো থাকেই।

তা ঠিক। আমাদের নতুন ছেলেদেরও তৈরি করতে হবে এটাও একটা তো বড় কথা। মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, সাকিব এরা আর বাংলাদেশ দলে কত বছর খেলবে? ওরা এত বছর ধরে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা তো ওদের কাজটা করেছে। এদিকে আমরা নতুনদের সুযোগ দিচ্ছি, কিন্তু তারা নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না। লিটন-সৌম্যর কথাই বলি ওরা অনেক দিন ধরে খেলছে, কিন্তু ধারাবাহিক পারফরম্যন্স ওদের ভিতর নাই। হ্যাঁ ওরা ভালো ক্রিকেটার কোন সন্দেহ নেই, আমিও ওদের ভক্ত। কিন্তু আমরা আরো নতুন ছেলেদের দেখতে চাই। আমরা বলি ওরা (তরুণরা) ঘরোয়াতে পারে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারবে না। আসলে আমরা তো জানিনা ওরা পারবে কী পারবে না।

পাকিস্তানের মত কঠিন একটা সিরিজ। সুযোগ পেয়ে এই তরুনরা কেউ ব্যর্থ হলেই কী আপনারা আবার পুরোনোদের ফেরাবেন?

এটা সত্যি, পাকিস্তান সিরিজটা কঠিন হবে। তবে নতুনদের দেখতে তো অসুবিধা নাই। আমি জানি যে পাকিস্তান সিরিজটা তরুণদের জন্য অনেক কঠিন হবে। সাথে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে ছেলে গুলোকে আমরা সুযোগ দেই, একটা সিরিজ পরে যেন তাদের ফেলে না নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটে এরকম একসময় হয়েছে। তবে আমি চাই কাউকে যদি সুযোগ দেই, যেন সঠিক ভাবে সময় নিয়ে সুযোগ দেই। এক সিরিজ পর এই ছেলে পারবে না বলে অন্য কাউকে নিয়ে আসি, এটা যেন না হয়। তাহলে আত্মবিশ্বাসে উন্নতি হবে না।

বিশ্বকাপের খেলাগুলো তো বাইরে থেকে দেখেছেন। আসলে কেনো আমরা এতো হতাশাজনক পারফরম্যান্স করলাম?

সত্য কথা বলতে প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা তো ক্রিকেটটাই ভালো খেলি নাই। কোন ম্যাচে কাকে খেলাবো এখানেও একটা সমস্যা হয়েছে বলে আমি মনে করি। সঠিক একাদশ আমরা মাঠে নামাতে পেরেছি বলে আমার মনে হয় না। আরেকটা জিনিস আমি মনে করি যে কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের ঠিক হয়নি। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার মনে হয় আমরা অতিরিক্ত চাপ নিয়ে ক্রিকেট খেলেছি। একটা জড়তা ছিল, জড়তা নিয়ে ক্রিকেট খেলেছি।

দলকে মাঠে খুব নিষ্প্রাণ মনে হয়েছে।

হ্যা। খুব জড়তা ছিলো। অন্যান্য ফরম্যাটে জড়তা থাকলেও আস্তে আস্তে সেট হলে সেটা কেটে যায়। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে একবার জড়তা আসলে সেটা আর কাটানোর সময় পাওয়া যায় না। কারণ টি-টোয়েন্টিতে সময় কম, জড়তা কাটানোর সময় পাওয়া যায়না। জড়তার ভিতর দুই চারটা ডট বল হইছে, মেরে আউট হয়ে গেছি। ঐ চাপটা আমরা সবসময় নিতে পারিনি আসলে।

বলা হচ্ছে যে, বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের ফলে দলের কোচিং স্ট্যাফে বেশ রদলবদল হবে। আদৌ সেরকম কিছু হবে?

অবশ্যই হবে। সম্প্রতিই হতে যাচ্ছে। এই সিরিজেই আমরা একজনকে দেখবো না। রায়ান কুক থাকবে না। তবে বাকী জায়গাগুলোতে পরিবর্তন আসতে কিছু সময় লাগবে।

প্রধাণ কোচ, ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ বদলানো হবে না?

দাদা আমি শতভাগ বলতে পারবো না যে বদলানো হবেই। একটা সুযোগ আছে। যদি আমরা ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, হেড কোচ সবখানে আসতে পারে। কিন্তু সেটা একটা সময়ের ব্যাপার। আসলে এখনো বোর্ডে বসা হয় নাই। ছোট খাটো বিষয় গুলো নিয়ে একটু আলোচনা হয়েছে। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা যাকেই পরিবর্তন করি তাঁর জায়গাতে তো একটা লোক নিতে হবে।

ফিল্ডিং কোচকে তো বাদ দিতে পারলেন। বাকীদের ব্যাপারে জটিলতা কেনো হচ্ছে?

ফিল্ডিংটা কোন টেকনিক্যাল ইস্যু না, আমাদের স্থানীয় কোচরাই এটা করাতে পারবে। ব্যাকফুটে গিয়ে ক্যাচ ধরতে হবে, ফন্ট্রফুটে গিয়ে ক্যাচ ধরতে হবে, এরকম কিছু তো নেই। এজন্য ফিল্ডিং কোচ পরিবর্তন করতে পারছি। সামনে হয়তো পরিবর্তন আসতে পারে, তবে এর আগে আমাদের ভালো কোচ ঠিক করতে হবে।

চান্দিকা হাথুরুসিংহেকে আবার ফেরানোর কথা শোনা যাচ্ছে। আসলেই সে ফিরবে?

আপাতত মনে হয় না। ও এখন ব্যস্ত আছে। আপাতত মনে হয় ও সময় দিতে পারবে না। চেষ্টা চলছে, দেখা যাক। তবে আমার মনে হয়না ও এখন আসবে। আসলেও সময় লাগবে তার।

পাকিস্তান সিরিজে ঠিক কী দেখতে চান দলের কাছ থেকে?

আমি চাই ভালো একটা পারফরম্যন্স। ব্যাটিংয়ে আমাদের খারাপ সময় গেছে। আমরা ১৪০ রান তাড়া করতে পারি নাই। আমরা ৮৪ ও ৭৩ রানে অলআউট হয়েছি। আমরা যদি ১৭০-১৮০ এর মত রান করতে পারি, এরপর যদি হেরে যাই আমি মাইন্ড করবো না। আগে তো আপনি তো বোলারদের এই রান ডিফেন্ড করতে দিবেন। এই রান এনে দিলে বোলাররা এক ম্যাচ না পারলে আরেক ম্যাচে আটকাতে পারবেই। ব্যাটিংটা আমাদের চিন্তার জায়গা। আমরা টি-টোয়েন্টিতে ঐ রানটা করতে চাই। আমি চাই ওরা ঐরকম রান করতে পারলে সেটা আটকানোর সুযোগ বোলারদের সামনে আসুক। জেতা হারাটা তো একটা আলটিমেট লক্ষ্য। কিন্তু সেটাই সবকিছু না। কিন্তু প্রসেসটা হলো গুরুত্বপূর্ণ। প্রসেসটা নিয়ে আমি কাজ করতে চাই, প্রসেসটা যেন ঠিক থাকে। আমরা দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করছি কিনা, সেটা দেখতে চাই। সত্যি কথা বলতে বিশ্বকাপে আমরা দায়িত্বহীন ব্যাটিং করেছি। আমি চাই ছেলেরা দায়িত্ব নিয়ে ক্রিকেট খেলুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link