অবিসংবাদিত ফ্র্যাঞ্চাইজি গ্রেট

আন্তজার্তিক ক্রিকেটের পাশাপাশি ভিনদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অংশ নিয়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ফেরি করে ক্রিকেটের বিনোদন বিক্রি করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা। ক্রিকেট বিনোদন বিকিকিনি করা এই দলের একজন উইন্ডিজ তারকা কাইরেন পোলার্ড। রঙিন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের দুনিয়াতে তাঁর মত কার্য্যকর আর গ্রেট ক্রিকেটার আর এসেছেন কি না – তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ চোখ বুজেই করা যায়।

এবার একটু স্মৃতিচারণা করি। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (সিপিএল) একটা ম্যাচের কথা। সেদিন মুখোমুখি হয়েছিল বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টস আর ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্স। ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক ছিলেন কাইরন পোলার্ড। আগে ব্যাট করা বার্বাডোস ট্রাইডেন্টসের ১৪৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১২ ওভার চার বলের মাথায় ৬২ রানেই পাঁচ উইকেট নেই পোলার্ডের দলের।

এমন অবস্থায় উইকেটে এসে যা করেছিলেন পোলার্ড তা অবিশ্বাস্য। মাত্র ২৮ বলে ৭২ রান করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। ক্যাপ্টেন লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট প্রবচন-কে মাঠে প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন।

কিন্তু সেদিন এমন বিধ্বংসী ইনিংসের চেয়ে মুগ্ধ করেছিল পোলার্ডের ম্যাচ রিড করার ক্ষমতা। প্রতিপক্ষ দলে তখন ছিলেন বর্তমানের অন্যতম সেরা বোলার রশীদ খান। সেদিন প্রতিপক্ষের সেরা বোলারের বিপক্ষে অহেতুক ঝুঁকি নেননি পোলার্ড, রশীদ খানের বিপক্ষে ৯ বলে করেছিলেন মাত্র ১০ রান। অপেক্ষা করেছেন অন্য বোলারদের জন্য। তাদের উপর চড়াও হয়েই সেদিন ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।

ক্যারিবিয়ান’রা প্রায় সবাই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পটু কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝতে পারার এমন ক্ষমতা তাদের থেকে আলাদা করেছে কাইরন পোলার্ডকে। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবার আন্তজার্তিক ক্রিকেট খেলতে নেমেছিলেন কাইরন পোলার্ড। এরপরের বছরই ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে অভিষেক। মজার ব্যাপার, নিজের ক্যারিয়ারে কখনোই সাদা পোশাকে মাঠে নামা হয়নি কাইরন পোলার্ডের।

এখন পর্যন্ত ২২৪ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এই উইন্ডিজ অলরাউন্ডার। ব্যাট হাতে চার হাজারের অধিক রান করেছেন। বল হাতে নিয়েছেন ৯৭ উইকেট।

কিন্তু খামখেয়ালি এই অলরাউন্ডার কখনোই স্থায়ী ছিলেন না জাতীয় দলে। এমনকি প্রায় এক যুগ আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেন্দ্রীয় চুক্তি উপেক্ষা করে বেছে নিয়েছিলেন ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট।

তবে বয়সের সাথে সাথে পরিপক্ব হওয়া পোলার্ড অবশ্য নিজ দেশের অধিনায়কত্ব করেছেন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৬৩ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এর মাঝে জিতেছেন ২৬টি ম্যাচে।

অন্য অনেক উইন্ডিজ খেলোয়াড়দের মতই পোলার্ড কে আন্তজার্তিক ক্রিকেটের পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝা যায় না। তাদের আসলে বুঝতেই হয় না, তাদের ক্রিকেটে আগমন বিনোদন নিতে এবং বিনোদন দিতে। তাই তারা বিশ্বজুড়ে খেলে বেড়ায়; আইপিএল, বিপিএল, বিবিএল, সিপিএল সর্বত্র ব্যাটে-বলে ছড়ি ঘুরিয়ে বেড়ায়।

ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টিতে কাইরন পোলার্ড খেলেছেন অনেক দলের হয়েই। জিতেছেন, জিতিয়েছেন অনেক কিছু। বিশেষ করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ঘরের ছেলে বনে যাওয়া পোলার্ড তাদের হয়ে আইপিএলে শিরোপা জিতেছেন পাঁচবার। এছাড়া সিপিএল, বিবিএল কিংবা বিপিএল সব টুর্নামেন্টেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছেন ক্যারিবিয়ান এই তারকা।

সবসময়ই চোখ কপালে তুলে দেয়ার মত পারফরম্যান্স করতে মুখিয়ে থাকা পোলার্ড আরো একবার অবাক করেছে দর্শকদের। না, এবার বাইশ গজে পারফর্ম করে নয় বরং অধিনায়ক থাকা অবস্থাতেই আন্তজার্তিক ক্রিকেট-কে বিদায় বলে ক্রিকেট ভক্তদের অবাক করেছেন তিনি।

ক্রিকেটের সে এক কাল ছিল। ক্যারিবিয়ান কাল। যাকে অনেকে ‘ক্যারিবিয়ান ক্ল্যাসিকস’ও বলে থাকেন। ব্যাটিং কিংবা বোলিং দুই বিভাগেই ক্যারিবিয়ানদের দাপট ছিল ক্রিকেট বিশ্ব জুড়ে।

সময়ের আবর্তনে সেসব কিংবদন্তি’রা বিদায় নিয়েছে, এখন তাদের পথে পা বাড়ানো শুরু করেছেন ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ড-রাও। এইতো আর কয়েকটা দিন, এরপর হয়তো রং-বেরঙের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট গুলোতেও আর দেখা যাবে না পোলার্ড কিংবা আন্দ্রে রাসেলের মত ফেরিওয়ালাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link