কিং মেকার কিংবা কিংকর্তব্যবিমূঢ় সালাহউদ্দিন

দলের ভেতর প্রধান কোচের ভূমিকা থাকলে যা হয়, সেটাই হচ্ছে। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী যেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ক্যারিবিয়ান কোচ ফিল সিমন্স যেন নীরব দর্শক।

বাংলাদেশ দলের সাথে কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সম্পর্ক ছিন্ন হতে চলেছে। শ্রীলঙ্কা সফর শেষেই ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সফল এই কোচ পদ হারালে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

দলের ভেতর প্রধান কোচের ভূমিকা না থাকলে যা হয়, সেটাই হচ্ছে। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী যেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। ক্যারিবিয়ান কোচ ফিল সিমন্স স্রেফ নীরব দর্শক।

মাঠে, ড্রেসিংরুমে, প্র্যাকটিস সেশনে, সবখানেই সালাহউদ্দিনের সক্রিয়তা দেখে মনে হতেই পারে — আসলে তিনিই হচ্ছেন এই দলে ‘কিং মেকার’। বিষয়টা নিয়ে ভেতরে ভেতরে খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ক্ষুব্ধ। অবস্থা এতই বেগতিক যে এই কোচের বিপক্ষে ব্যবস্থা নিতে চলেছে বোর্ড।

এই মুহূর্তে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু আছেন শ্রীলঙ্কায়, দলের সাথে। তিনি খেলোয়াড়দের সাথে কোচিং স্টাফ ইস্যু কথা বলছেন। সেখানে থাকছে সালাহউদ্দিনের ইস্যু। প্রধান নির্বাচকের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সালাহউদ্দিনের বিপক্ষে এই সিরিজ শেষেই ব্যবস্থা নিতে পারে বিসিবি।

দলের ভেতরের রাজনীতি এখন বারুদের স্তূপে পরিণত হয়েছে। কোচ সিমন্স দলে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেন না। এমনকি অনুশীলনেও তিনি সব সময় থাকেন না। দল চলে মূলত সালাহউদ্দিনের দিক নির্দেশনায়।

শ্রীলঙ্কা সফরের পুরোটা সময় ফিল সিমন্সকে পাশেও পায়নি বাংলাদেশ দল। তিনি লন্ডনে গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে। তাঁকে ছাড়াই মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ দল। ‘অনলাইন’ কোচিং ধোপে টেকে না। অনলাইন কোচিং নয়, তিনি আসলে সালাহউদ্দিনের ভরসায় রেখে যান দলকে।

সহকারী কোচ মূলত কোচিংয়ে সমন্বয়ের ভূমিকায় থাকেন। কিন্তু, জাতীয় দলে সালাহউদ্দিনের ভূমিকা আরও বেশি। ক্রিকেটারদের সাথেও তাঁর সম্পর্ক ও বোঝাপড়া ভাল। তবে, এই ইতিবাচকতা ধীরে ধীরে নেতিবাচকতায় মোড় নিচ্ছে।

একাদশ নির্বাচন, খেলোয়াড়দের ব্যাটিং অর্ডার নির্ধারণ – এসব কিছু নাকি সালাহউদ্দিনই করেন। এমনকি দল নির্বাচনে তাঁর নিজস্ব একটা ‘পছন্দের তালিকা’ও আছে। অভিযোগ আছে—সালাউদ্দিন নাকি নিজের পছন্দের ক্রিকেটারদের সুযোগ দিচ্ছেন।

এমনকি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ বিসিবিরও কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। গুঞ্জন আছে, প্রথম টি-টোয়েন্টিতে এক সাথে চার ওপেনারকে নামিয়ে দেওয়াও নাকি সালাহউদ্দিনের পরিকল্পনা।

অনেক আয়োজন করে দেশি পণ্যের জয়োগান করে মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে সিনিয়র সহকারী কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তিনি আসার পর দলের উন্নতির চেয়ে অবনতি হয়েছে বেশি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলেছে সালাহউদ্দিন ভাল কোচ, সেটা বিসিবি মেনে নিয়েছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ হিসেবে সাফল্য পেতে কোচের যে তেমন কোনো ভূমিকা রাখার দরকার পরে না সেটা এখন প্রকাশ্য দিবালোকের মত সত্য।

প্রশ্ন আসতে পারে, কোচের ভাল মন্দ দেখা নির্বাচকের কাজ নয়। এটা ক্রিকেট অপারেশন্সের কাজ। তাহলে দায়িত্বে কেন প্রধান নির্বাচক লিপু? কারণ, তিনি এই মুহূর্তে দলের অভিভাবক হিসেবে আছেন শ্রীলঙ্কায়, তিনি বোর্ডের আস্থাভাজন, তাই তিনি বোর্ডের তরফ থেকেই এই দায়িত্ব পেয়েছেন।

বলাই বাহুল্য, সালাহউদ্দিনে হাতে কোনো জাদুর কাঠি নেই। সাকিব আল হাসানের শৈশবের কোচ তিনি। সাকিব অনেকদিন যাবৎ নিজের যেকোনো সমস্যায় ছুটে গেছেন সালাহউদ্দিনের কাছে। এটা সাকিবের কমফোর্ট জোন ছিল।

কিন্তু, সেটা পুরো জাতীয় দলের ক্ষেত্রে সত্য হবে – তেমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কিন্তু, সত্যিকার অর্থেই যদি সালাহউদ্দিনের জন্য দলে কোনোরকম কোন্দল বা গ্রুপিং সৃষ্টি হয় – তাহলে দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়ালই ভাল!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link