সিকান্দার রাজা উড়তে চেয়েছিলেন। আক্ষরিক অর্থেই। পাকিস্তানের শিয়ালকোটে বসে পাইলট হয়ে বিমান চালানোর স্বপ্ন ছিল তাঁর। ১১ বছর বয়সে দেখা সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই ছিলেন ‘ফাইটার’ রাজা।
পাকিস্তানের বিমান বাহিনী কলেজে জায়গায় হয়ে যায়, ফাইটার বিমান চালানোর প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তখনই চোখের সামান্য এক সমস্যায় সব শেষ হয়ে যায়। বিমান চালাতে না পারলেও ফাইট করতে ভুলে যাননি সিকান্দার, উড়তে ভুলে যাননি রাজা।
সেই উড়ে বেড়ানোর চূড়ান্ত একটা নজীরই স্থাপন হল তাঁর। সিকান্দার রাজার ৩৬ ঘণ্টার মহাকাব্য লিখলেন জন্মভূমি পাকিস্তানে। ঐতিহাসিক টেস্ট খেলে নটিংহাম থেকে উড়ে এলেন লাহোরে, অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ জেতানো ইনিংসের গল্প লিখলেন!
২৪ ফেব্রুয়ারি, শনিবার। ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের কাছে ইনিংস ব্যবধানে জিম্বাবুয়ে। সিকান্দার রাজা খেললেন ৬০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস, লড়াই করলেন, কিন্তু দল হেরে গেল। এখান থেকেই শুরু হয় এক ‘পাগলানে জার্নি’।
লক্ষ্য—পরদিন পিএসএল ফাইনালে লাহোরের হয়ে নামা! ভারতবর্ষে অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেটকে ডাকত সিকান্দার নামে। সেই নামকরণের স্বার্থকতাই যেন প্রমাণ করতে উড়লেন রাজা। কিন্তু, এ যে আলেকজান্ডারের রাজ্যজয় থেকেও কঠিন। পাল্লা দিলেন সময়ের সাথে।
নটিংহাম থেকে গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন বার্মিংহামে। রাতের খাবার সেখানেই, তারপর রাত জুড়ে ৭.৫ ঘণ্টার ফ্লাইটে করে আসলেন দুবাই।
২৫ ফেব্রুয়ারি, রোববার। সকালবেলা দুবাইতে নাস্তা সেরে ছুটে গেলেন আবুধাবি, গাড়ি ড্রাইভ করে। দুপুরে আবুধাবি থেকে তিন ঘণ্টার ফ্লাইটে লাহোর। প্লেন থেকে নামলেন লাহোরে, তখন টস হতে মাত্র ১০ মিনিট বাকি!
তখনো মাঠে পৌঁছাননি, কিন্তু লাহোর কালান্দার্সের একাদশে ঠিকই তাঁর নাম রেখে দিল। তড়িঘড়ি করে মাঠে ঢুকলেন একদম অন্তিম মুহূর্তে। বল হাতে নিলেন—চার ওভার বল করলেন।
তারপর এল সেই মুহূর্ত। ফাইটার ‘রাজা’র ম্যাজিকাল মোমেন্ট। যুদ্ধজয়ের শেষ রাজপাট। সিকান্দারের তলোয়াড় গর্জে ওঠার শেষ মুহূর্ত।
লাহোরের জিততে চাই ২০ বলে ৫৭ রান। ব্যাট হাতে নামলেন রাজা। শট খেললেন বুঝেশুনে, আর শেষটা করলেন একেবারে সিনেমার মতো — ৭ বলে অপরাজিত ২২ রান, জয়ের রানটাও এল তাঁর ব্যাট থেকেই, এক বল বাকি থাকতে! সিনেমাতেও কি এই চিত্রনাট্য ভাবা সম্ভব!
দুটো দেশ, পাঁচটা শহর, ঝড়ের গতির এক লম্বা সফর, আর অবিশ্বাস্য এক পারফরম্যান্স — নাম সিকান্দার রাজা। ক্লান্তি নেই, অজুহাত নেই — শুধু ক্রিকেট, শুধু লড়াই করার আকাঙ্খা, শুধু উড়তে চাওয়ার বাসনা, শুধু যুদ্ধ জিততে চাওয়ার লোভ। ভাগ্যিস, ফাইনাল খেলার লোভটা তিনি সংবরণ করেননি। করলে, পাইলটের এমন বিমান চালানো দেখার সৌভাগ্য হত আর কি করে!