সাধনায় গড়া লোকেশ রাহুলের নিরব বৈপ্লবিক সেঞ্চুরি

আলো যারা চায় না, তারা বুঝিয়ে দেয়, আলোর চেয়ে অনেক বেশি কিছু আছে এই খেলায়। তারা দলের প্রয়োজনে, দলের হয়ে খেলেন। পারফর্ম করেন, দল জয়লাভ করে, দলের কৃতিত্ব বাড়ে। পারফর্ম করেন না, হারিয়ে যান।

সেইরকম এক ব্যাটসম্যান কে এল রাহুল। তিনি যেন ক্রিকেটের পিয়ানোবাদক। কর্ড বদলায় না, সুর বদলায় না, তবু প্রতিটা স্পর্শে কান্না আসে চোখে।

 

কে এল রাহুল সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু করেন এমনভাবে, যেন সেঞ্চুরি নয়, এটা তাঁর কর্তব্য। একজন পোস্টম্যান চিঠি বিলি করে যেমন, একজন শিক্ষক ক্লাস নেন যেমন, তেমনই রাহুল করেন সেঞ্চুরি। একটুও বাড়াবাড়ি নেই। নেই কোনও হাত তুলেই দাঁড়িয়ে থাকা নাটক, নেই গর্জন। শুধু একটু চোখ মেলে দেখেন ড্রেসিং রুমের দিকে। জানিয়ে দেন—”আমি এসেছি, খেলা বুঝে নিয়েছি।”

সেঞ্চুরি করতে রাহুল খেলেন ২০২ বল। বল কন্ট্রোল ৯২ শতাংশ। এত নিয়ন্ত্রণ, এত সংযম, যেন কোনও ব্যাটসম্যান নয়, কোনো সন্ন্যাসীর ধ্যান।

সিনেমার হিরোরা চিৎকার করে আসে। রাহুল আসেন স্লো মোশনে। বাউন্ডারি দেন না, জাস্ট বলকে বলে দেন, “তুই থাক, আমি থাকি, দর্শকরাও থাকুক, ক্রিকেটের সৌন্দর্যটা বাঁচুক।” তিনি অফ স্টাম্পের বাইরের বলটাকে কখনও ছোঁন না। যেন বলটাকে তিনি নিজের ঘরে ঢুকতে দেন না। অথচ, ইনসুইং হলে তিনি ভেতর থেকে এমন স্ট্রোক খেলেন, মনে হয় চোখ বন্ধ করেও যেন এমন কাভার ড্রাইভ সম্ভব!

কোহলি হাঁকে, রোহিত বাজে, গিল চোখে জ্বলে। রাহুল? তিনি নীরব বিপ্লব। শূন্য থেকে এক। উষ্ণতা ছাড়াই আগুন।
যেন রবীন্দ্রসংগীতের মতো, যতই শুনো, ততই ভেতরে গিয়ে বাজে।

রাহুল জানেন, শতাব্দীর সেরা ইনিংসগুলো হয়তো টিভিতে থাকে, হেডলাইনেও আসে। কিন্তু ক্রিকেটের আত্মা থাকে সেসব ইনিংসে, যেগুলো নীরবে খেলা নিয়ন্ত্রণ করে। দলকে উদ্ধার করে। স্কোরবোর্ড না, ড্রেসিং রুম যাদের প্রণাম করে।

যতদিন খেলবেন, হয়তো আলো পাবেন না। কিন্তু একদিন এই খেলাই যখন ফিরে তাকাবে, তখন এক নিঃশ্বাসে বলবে—
“যারা আলোয় খেলত, তারা ছিল চিত্রনায়ক। আর যে আলো ছায়ার মাঝখানে থেকেও খেলাটাকে ধরেছি, সে ছিল কে এল রাহুল।”

Share via
Copy link