ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক এখন আর শচীন টেন্ডুলকার একা নন। তাঁর ৪৯ শতকের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন বিরাট কোহলি। ইডেন গার্ডেনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পথে এই রেকর্ড ছুঁয়েছেন ভারতীয় এ ব্যাটার।
৪৯টি শতক করতে টেন্ডুলকার খেলেছিলেন ৪৫১ ইনিংস। কোহলি সেটি ছুঁয়ে ফেললেন ২৭৭ ইনিংসেই। তবে কোহলি এ দিন শুধু সেঞ্চুরি সংখ্যাতেই শচীনতুল্য হননি, এক দিনের ক্রিকেটে ছাপিয়ে গিয়েছেন অনেক কীর্তিতেই।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রতি ৯.২২ ইনিংসে সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার। সেখানে এখন পর্যন্ত প্রতি ৫.৬৫ ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন বিরাট কোহলি। রান চেজের ক্ষেত্রেও শচীনের চেয়ে বেশ এগিয়ে কোহলি। ৪৯ সেঞ্চুরির মধ্যে এ ব্যাটার রান তাড়া করতে নেমেই করেছেন ২৭ টা সেঞ্চুরি। যার মধ্যে ২৩ টা ম্যাচই ভারত জিতেছে। রান চেজের ক্ষেত্রে শচীন টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি করেছেন ১৭ টা। আর সেই ১৭ সেঞ্চুরিতে ভারত ম্যাচ জিতেছে ১৪ টাতে।
তবে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে সেঞ্চুরি সংখ্যায় আবার এগিয়ে রয়েছেন শচীন। শচীন যেখানে প্রথমে ব্যাট করে ৩২ টা সেঞ্চুরি করেছেন, সেখানে বিরাটের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ২২। শচীনের চেয়ে বিরাট পিছিয়ে আরেকটি জায়গাতেই। শচীন তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১১ টা দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছেন।
কিন্তু, কোহলি এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৯ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সেঞ্চুরির দিক দিয়ে এগিয়ে বিরাট কোহলি। শচীন তাঁর ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৯ টা সেঞ্চুরি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আর বিরাট কোহলি ১০ টা সেঞ্চুরি করেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
আইসিসির পূর্ণ সদস্য বিবেচনায়, শচীন তাঁর ক্যারিয়ারের ৪৯ টা সেঞ্চুরির ৪৪ টা করেছেন পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর বিপক্ষে। বাকি ৫ টি সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সহযোগী দেশের বিপক্ষে। আর কোহলি তাঁর ক্যারিয়ারের ৪৯ সেঞ্চুরির সবকটিই পেয়েছেন পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর বিপক্ষে।
দেশ এবং বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরির দিক দিয়ে, দুই ক্ষেত্রেই শচীনের চেয়ে এগিয়ে বিরাট কোহলি। ভারতের মাটিতে শচীনের সেঞ্চুরি ২০ টা, বিরাটের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ২৩। আর বিদেশের মাটিতে যেখানে শচীনে ১২ টি শতক হাঁকিয়েছেন সেখানে, কোহলি পেয়েছেন ২১ টি শতক।
তবে, নিরপেক্ষ ভেন্যুতে সেঞ্চুরির দিক দিয়ে আবার শচীনে এগিয়ে। নিরপেক্ষ ভেন্যুতে বিরাট কোহলি এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরি পেয়েছেন ৫ টি। সেখানে শচীন টেন্ডুলকার সেঞ্চুরি করেছেন ১৪ টা। এ ছাড়া বিরাট কোহলি যেখানে ৯ টি দেশ ও ৩২ টা স্টেডিয়ামে সেঞ্চুরি করেছেন, সেখানে শচীন তাঁর ৪৯ টা সেঞ্চুরি পেয়েছেন ১২ দেশের ৩৪ টা স্টেডিয়ামে।
দলের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান হিসেবেও শচীনের সেঞ্চুরি সংখ্যা বেশি। ভারতের হয়ে ৪৯ টা সেঞ্চুরির মধ্যে ৩২ টা তেই তিনি দলের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ছিলেন। আর একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে বিরাট কোহলির ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ২১।
তবে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরির দিনে ভারতই বেশি ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেয়েছে। তাঁর ৪৯ টা সেঞ্চুরিতে ৪১ টা ম্যাচই ভারত জয়ের মুখ দেখেছে। কিন্তু শচীন টেন্ডুলকারের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৩৩। অর্থাৎ ক্যারিয়ারে ১৬ বার সেঞ্চুরি করেও শচীন ছিলেন বিজীত দলের অংশ।
শচীন আর বিরাট, দুই জন দুই প্রজন্মের ক্রিকেটার। শচীন যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকে শুরু করেছিলেন বিরাট কোহলি। এ সময়কালে ক্রিকেটের অনেক কিছুই বদলে গেছে। তাই যে কোনো পরিসংখ্যানেই এ দুই ক্রিকেটারকে আর যাই হোক একেবারে তুলনায় বসিয়ে দেওয়া যায় না। তবে ১১ বছরে ব্যবধানে দুই ব্যাটার ৪৯ সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করবেন, এটাই বা কে ভেবেছিল।
ক্রিকেটের প্রায় দেড়শো বছরের ইতিহাসে এমন নজির মেলেনি কখনোই। তাই দুই ক্রিকেটারের প্রায় আকাশসম এমন অর্জন নিয়ে চর্চা হবে, ব্যবচ্ছেদ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে এ কথা বলা এখন শ্রেয়ই বটে, শচীনের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বিরাট প্রমাণ করেছেন একদম পরিপূর্ণভাবে। ভারতের ক্রিকেট আকাশ রক্ষায় যেভাবে শচীন যেভাবে কিংবদন্তি হয়েছেন, সেই একই পথে হাঁটছেন কোহলিও।