‘আমি বুমরাহকে আবার চার্জ করব’। একেবারে দ্বিধাহীন কণ্ঠে এমনটাই বলেছিলেন স্যাম কন্সটাস। বিরাট কোহলি হয়ত চেয়েছিলেন স্যাম কন্সটাসের মনোযোগ টলাতে। কিন্তু সেটাই যেন ‘ব্যাকফায়ার’ করে ভারতের জন্য। নিজের বলা কথার উপর অটল থেকেছেন স্যাম কন্সটাস। তিনি সত্যি সত্যিই বুমরাহকে চার্জ করেন, তুলে নেন ১৮ রান।
মেলবর্ন টেস্টের প্রথম দিনটা ছিল ভীষণ ঘটনাবহুল। আর অধিকাংশ ঘটনার প্রধান চরিত্র ছিলেন ১৯ বছর বয়সী স্যাম কন্সটাস। ভারতের অভিজ্ঞতার সামনে তারুণ্যের নির্ভীক সেনানী রূপে হাজির হয়েছিলেন এই অজি তরুণ। তাতেই যেন মেজাজ হারিয়ে ফেলে ভারত, বিশেষ করে বিরাট কোহলি।
জাসপ্রিত বুমরাহকে সমীহ করে বিশ্বের প্রায় সকল ব্যাটার। কিন্তু নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা স্যামের চোখে-মুখে ছিল না ভয়ের কোন ছিটেফোঁটা। এমনকি স্কুপ, রিভার্স স্কুপে তিনি বেশ সাবলীল ভঙ্গিমায় তিনি সামলে যাচ্ছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহকে।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা জাসপ্রিতের রেকর্ড ভেঙেছেন অজি তরুণ। ৪৪৮৩ বল পর টেস্টে ছক্কা হজম করেছেন বর্ষীয়ান এই ক্রিকেটার। ভারত তাই দ্রুতই পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিল স্যাম কন্সটাসের আগ্রাসন থেকে। সেজন্য তারা স্লেজিংয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
প্রথম সেশনে দশম ওভার শেষ হওয়া মাত্র বিরাট কোহলি ঘটিয়ে ফেলেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। অনেকটা ইচ্ছাকৃত ভাবে তিনি ধাক্কা দিয়ে বসেন তরুণ কন্সটাসকে। দশম ওভার শেষ সতীর্থ উসমান খাজার দিকে উইকেটের অপর প্রান্তে এগিয়ে যাচ্ছিলেন স্যাম। নিজের সম্ভাব্য গতিপথ বদলে কন্সটাসকে ধাক্কা দেন বিরাট। ঠিক কতটা অধৈর্য হয়ে গেলে এমন কাণ্ড করা যায়!
ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা একজন ব্যাটার বিরাট, তাতে তো কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া মাঠে তার আগ্রাসন, প্রতিপক্ষকে এক চুল ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা প্রশংসা কুড়িয়েছে বহুবার। কিন্তু এমন ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ করে বিরাটের হীনমন্যতাকে।
সেই ঘটনার পর দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ঘটে। এরপর বিরাটকে শাস্তিও দিয়েছে ম্যাচ রেফারি। ম্যাচ ফি থেকে ২০ শতাংশ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে বিরাটকে। এছাড়া এক ডিমেরিট পয়েন্ট যুক্ত হয়েছে বিরাটের নামের পাশে।
তবে কন্সটাসকে আঘাত দিয়েও অবশ্য খুব একটা ফায়দা হয়নি। বিরাটের আঘাতের পালটা জবাবটা সইতে হয়েছে বুমরাহকে। এগারোতম ওভারটা করতে এসেছিলেন বুমরাহ। তার এক ওভারে ১৮ রান তুলে নেন স্যাম কন্সটাস। একটি ছক্কা ও দুইটি চার হাঁকান অজি এই ব্যাটার।
প্রথম বলেই মিড অফ দিয়ে চার আদায় করেন। লেগ সাইডে সরে গিয়ে রুম বানিয়ে বাউন্ডারি মারেন কন্সটাস। পরের বলও একই কায়দায় খেলতে চাইলেও স্লোয়ার বল ঠেকিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন। এর পরের বলে শর্ট বল করেন বুমরাহ। সেটাকেও পুল শটে মিডউইকেটে পাঠিয়ে দেন কন্সটাস। তাকে যেন থামানো দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল ভারতের জন্য।
চতুর্থ বলে মিড অনের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান কন্সটাস। এরপরের বলের ঠিকানাও হয় বাউন্ডারিতে। এবারের যাত্রা পথ ‘গালি’ অঞ্চল। শেষ বলে দুই রান নেন কন্সটাস। এই যে তুমুল স্লেজিংয়ের পরও নুইয়ে না যাওয়া, স্যাম কন্সটাসের দৃঢ় মানসিকতার প্রতিফলন। বলে-কয়ে বুমরাহর ওভারে আগ্রাসী ব্যাটিং করা অকুণ্ঠ আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।
এদিন ৬০ রানে থেমেছেন কন্সটাস। তার যাত্রা হয়ত এখানেই থামছে না। অকুতোভয় অজি মানসিকতার আরও এক ধারক হয়ে তিনি বিচরণ করতে চলেছেন। ক্রিকেটের রঙিন ভুবনে তিনি লেপ্টে দিতে চলেছেন স্যাম কন্সটাস নামক নতুন এক রঙ।