দুর্দিনের নেতাই আসল নেতা

আসন্ন শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দলে ফিরেছেন জেসন হোল্ডার এবং ড্যারেন ব্রাভো। এই টেস্ট সিরিজের দলে আছে সম্প্রতি শেষ হওয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে থাকা অনেক ক্রিকেটার। কিন্তু এই দলে সবচেয়ে বড় চমক হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দলের নিয়মিত অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের অধিনায়কত্ব হারানো।

হোল্ডার কেন টেস্ট অধিনায়কত্ব হারালেন?

বিষয়টা খুবই স্বচ্ছ এবং সহজ। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অধিনায়কত্ব করে বেশ সফল হয়েছেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে করোনার অজুহাতে বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে আসেননি ওয়েস্ট দলের নিয়মিত অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। তাঁর পরিবর্তে অন্তবর্তীকালীন অধিনায়ক হিসেব দায়িত্ব পালন করেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েট।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে আসার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের নিয়মিত অনেক ক্রিকেটার বাংলাদেশে আসতে অনীহা প্রকাশ করেন। তাদের অজুহাত ছিলো যে, করোনার ভয় ও কোয়ারেন্টিনের বিরক্তির কারণে তারা সফর করবেন না। তবে নিন্দুকেরা বলে তারা জাতীয় দলের হয়ে সিরিজ খেলার চেয়ে অন্য টি-টোয়েন্টি লিগ খেলার জন্য বেশি মনযোগী ছিলেন। এই কারণেই মূলত তারা বাংলাদেশ সফরে আসতে চাননি। এই কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বাধ্য হয়ে তাদের দ্বিতীয় সারির এক দল বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে পাঠায়। ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের কাছে হোয়াটওয়াশ হলেও টেস্ট সিরিজে বেশ ভালো ফিরে এসেছিলো।

এর আগে বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিয়মিত দল সিরিজ হেরেছিলো। এইবারের সিরিজে দ্বিতীয় সারির জাতীয় দল দেখে অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদমাধ্যম ধারণা করেছিলো বাংলাদেশ দল অনেক সহজেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুই ফরম্যাটেই হোয়াটওয়াশ করেব। ওয়ানডে সিরিজে প্রত্যাশামত ফলাফল করতে পারলেও টেস্ট সিরিজে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয় নাই বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জিতে বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে দেশে ফিরেছে। আর এই কারণেই এই সিরিজের অনেক নতুন মুখ এইবারের শ্রীলংকা সিরিজে আবারো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছিলেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশেকে টেস্টে হোয়াট করেছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই সিরিজের আগে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তী ক্লাইভ লয়েড একটি খোলা চিঠি দিয়েছিলো ওয়েস্ট দলের জন্য। যাতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন তিনি নিজে কিভাবে জাতীয় দলে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করেছিলেন। এই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে এই সিরিজের পর। টেস্ট সিরিজে দূর্দান্ত অধিনায়কত্ব করার সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্তবর্তীকালীন অধিনায়ক থেকে নিজেকে পূর্ন অধিনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েট।

এমনিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে ক্রিকেটার এবং বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব সব সময় লেগে থাকে। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ নির্দিষ্ট কোনো একটি দেশ নয়। কয়েকটি দ্বীপ দেশ একসাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে খেলে। আর এই ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মানুষের কাছে পেশাদারিত্ব এবং দেশ একটি ভিন্ন বিষয়। তারা কখনো পেশার সাথে দেশপ্রেমকে একসাথে করে না। এই কারণেই তাদের কাছে জাতীয় দলে খেলা কখনোই খুব গুরুত্বপূর্ন নয়। তাদের কাছে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের নিজের পেশাকে ঠিক রাখা। এর জন্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে একজন অধিনায়ক দীর্ঘদিন জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিতে পারে না। কারণ তারা সব সময় জাতীয় দলের জন্য আগ্রহী থাকে না।

এক সিরিজে অধিনায়কত্ব না করে যেমন জাতীয় দলের নেতৃত্ব হারালেন জেসন হোল্ডার। এমন রীতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের জন্য নিয়মিত একটি ঘটনা। জেসন হোল্ডারের জন্য অধিনায়কত্ব ধরে রাখাটা সহজ ব্যাপার হত, যদি বাংলাদেশে এসে ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ব্যর্থ হতেন। কিন্তু সেটা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত অধিনায়কত্ব হারাতে হল তাঁকে।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link