লঙ্কা দ্বীপের রক্ষাকবচ

অভাগা যেদিকে যায় সেদিকে নাকি নদী শুকিয়ে যায়। কুশল মেন্ডিস নিজেকে ঠিক অভাগা মানবেন কিনা, সেই সিদ্ধান্ত তার। তবে ৯০ এর ঘরে এলেই তার রানের নদী শুকিয়ে যায়। তবে এদফা যেন ড্রেজার দিয়ে সমস্ত পানি সেঁচে নিয়েছেন মোহাম্মদ হারিস।

সুপার ফোরে নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি দুই আয়োজক দেশ। দুইজনের সামনেই সুযোগ ছিল ফাইনালে যাবার। কেননা বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা উভয়ই ম্যাচ জিতেছিল। তবে ভারতের কাছে তাদেরকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তাইতো জিতলেই ফাইনালে চলে যাওয়ার সুযোগ।

এমন এক ম্যাচে খানিকটা ব্যাটিং বিপর্যয়েই পড়েছিল পাকিস্তান। আগে ব্যাটিং করতে নেমে ধুকতে হয়েছে পাক ব্যাটারদের। তবে সে পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ মেলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে। লড়াই করবার মত ২৫২ রানের পুঁজি পায় পাকিস্তান।

তবে এদিন লঙ্কান ব্যাটাররা যেন ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। বিশেষ করে কুশল মেন্ডিস। তিনি বেশ দ্রুতগতিতেই রান তোলার মিশনে নেমেছিলেন। তবে দ্রুত রান তোলার কাজটা প্রথমে শুরু করেন আরেক কুশল, কুশল পেরেরা। তবে তিনি তা বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু কুশল মেন্ডিস ঠিকই নিজের ইনিংসটি লম্বা করেছেন। দলকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন।

কুশল পেরেরার বিদায়ের পর পাথুম নিসাঙ্কার সাথে ৫৭ রানের জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস। এরপর আবার সাদিরা সামাভিক্রামার সাথে ১০০ রানের জুটি। মূলত এই দুই জুটিতেই ম্যাচের লাগামটা পুরোপুরি নিজেদের করে নেয় শ্রীলঙ্কা। যার সিংহভাগ কৃতীত্ব কুশল মেন্ডিসের প্রাপ্য। প্রায় ১০৫ স্ট্রাইকরেটে তিনি ব্যাটিং করেছেন।

রান করেছেন ৯১টি। বল খেলেছন মাত্র ৮৭টি। ৯১ রানের এই ইনিংসটিতে ছিল ৮টি চার ও ১টি ছক্কা। তিনি হয়ত দলের জয় নিশ্চিত করেই ফিরতেন। তবে তেমনটি হতে দেয়নি মোহাম্মদ হারিসের দুরন্ত এক ক্যাচ। ব্যাটের খোঁচায় বল ভেসে যায় হাওয়ায়। শর্ট মিড উইকেট অঞ্চলে বাতাসে ভেসে সেই ক্যাচ লুফে নেন হারিস। তালুবন্দী হওয়ার আগে বল আর মাটির মধ্যে দূরত্ব ছিল স্রেফ একটি আঙুল।

অসাধারণ সেই ক্যাচের ফলাফল আউট কি না, তা জানতে আম্পায়াররা তৃতীয় আম্পায়ারের শরণাপন্ন হন। শেষ অবধি কুশলকে ফিরতেই হয় প্যাভিলনে। তবে তিনি নিজের কাজটি করে দিয়েই ফিরেছেন। দল তখন ৪৩ রান দূরে ছিল জয় থেকে।

তবে কুশলের দুর্ভাগ্যটা ঠিক অন্য জায়গায়। এবারের এশিয়া কাপে এই নিয়ে দ্বিতীয় দফা তিনি আউট হয়েছে নব্বইয়ের ঘরে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৯২ রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯১ রানে। খুব কাছে গিয়েও তিনি থেকে যাচ্ছেন বহুদূরে। ছুঁয়ে দেখা হচ্ছে না তিন অঙ্কের সেই ম্যাজিক্যাল ফিগার। আক্ষেপ না হয়ে আর উপায় কি!

তিন ম্যাচে হাফসেঞ্চুরির দেখা অবশ্য তিনি পেয়েছেন। ধারাবাহিকভাবে পারফরম করবার পুরষ্কার সাময়িক সময়ের জন্যে হলেও তিনি পাচ্ছেন। বর্তমানে এবারের এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। তার এমন দূর্দান্ত পারফরমেন্সের উপর ভর করেই আরও এক শিরোপা জয়ের স্বপ্ন বুনছে শ্রীলঙ্কা।

তিনিই তো আস্থার স্তম্ভ হয়ে দলের ব্যাটিং অর্ডার আগলে রাখছেন। প্রতিনিয়ত দলকে দেখাচ্ছেন জয়ের পথ। পাকিস্তানের বিপক্ষে যে পথ ধরেই ফাইনালে পৌঁছেছে তার দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link