সেনাপতির শেষ লড়াইয়ের মঞ্চ

টেস্ট ক্রিকেটে তর্ক সাপেক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্যটা এসেছে মুমিনুল হকের হাত ধরে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁদের দেশের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জেতাটা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম বড় সাফল্য। আর সেই জয়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুমিনুল হক। তবে এরপরেও ঠিক মন জয় করে নিতে পারছেন না এই অধিনায়ক। কিন্তু কেন?

এবছরের শুরুতেই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বসলো মুমিনুলের দল। সাকিবদের ছাড়া মোটামুটি তরুণ একটা দল পুরো পাঁচ দিন চোখে চোখ রেখে লড়াই করলো। সেই জয়ে মোটামুটি সবারই অবদান ছিল। তবে অধিনায়ক মুমিনুলকে কৃতিত্বটা সেভাবে দেয়া হয়নি।

এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এটাও সত্য যে প্রথম টেস্টে অন্তত চারদিন বাংলাদেশ দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। শেষ দিনে ব্যাটস্যামনদের ভরা ডুবির দায় গিয়ে পড়লো মুমিনুলের উপরেই।

দেশের বাইরে বাংলাদেশ এইযে হাঁটতে শিখেছে, একটু আধটু লড়াই করছে সেটা মূলত পেসারদের কারণে। বাংলাদেশ গত এক বছরে দারুণ একটি পেস আক্রমণ গোছাতে পেরেছে। তাসকিন নতুন করে ফিরে এসেছে, শরিফুলের মত তরুণ পেসার উঠে এসেছে, এবাদত-খালেদরা আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন। সবমিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বিদেশের মাটিতে লড়াই করার মত পেস আক্রমণ তৈরি হয়েছে।

তবে জানা যায় এর পিছনে মুমিনুল হকেরও খানিক কৃতিত্ব আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক আগে থেকেই পেসারদের উপর ভরসা রাখতেন তিনি। অন্যদল গুলো যেখানে পেসারই খেলাতো না সেখানে তিনি নতুন বল পেসারদের হাতে তুলে দিতেন। অস্বীকার করা উপায় নেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তিনি এই ভরসাটা পেসারদের উপর রেখেছেন।

এবাদতদের টানা ব্যর্থতার পরেও বল তুলে দিয়েছেন পেসারদের হাতে। বিশ্বাস করেছেন ম্যাচ জিততে হলে পেসারদেরই কিছু একটা করে দেখাতে হবে। সেই বিশ্বাসের প্রতিদানও এখন পেসাররা দিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ দলের পেসাররা মুমিনুলের এই অবদান অকপটে স্বীকার করেন।

তবে এরপরেও অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুল ঠিক ভরসার নাম হয়ে উঠতে পারছেন না। এর সবচেয়ে বড় কারণ ব্যাট হাতে মুমিনুল আসলে চাহিদা মেটাতে পারছেন না। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে আস্থার নাম ছিলেন তিনি। সে কারণেই তাঁর হাতে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছিল। তবে অধিনায়ক হবার পর থেকেই ব্যাট হাতে পুরনো মুমিনুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে মুমিনুল ৩৯.৪৮ গড়ে করেছেন ৩৫১৪ রান। তবে অধিনায়ক হবার আগে মুমিনুল হক রান করেছিলেন ৪১.৪৭ গড়ে। সেই সময়ে তাঁর ঝুলিতে ছিল ২৬১৩ রান। তবে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব কাঁধে নেয়ার পর তাঁর ব্যাটিং গড় নেমে এসেছে ৩৪.৬৫ এ। এছাড়া এবছর যে চার টেস্ট খেলেছেন সেখানে মাত্র ২১.৫৭ গড়ে করেছেন ১৫১ রান। সর্বশেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন গতবছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুধু এতটুকুই না। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নেয়ার পরই মুমিনুল জানিয়েছিলেন তাঁর দল আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলবে। তবে মাঠে তাঁর নানারকম সিদ্ধান্ত এই কথার বিরোধিতা করে। সবচেয়ে বড় প্রমাণ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে টস জিতে বোলিং নেয়া।

যদিও দলের ভিতর থেকে পাওয়া গিয়েছিল ভিন্ন খবর। জানা যায় আগে বোলিং করার এই সিদ্ধান্ত মুমিনুলের ছিল না। দলের অন্য কোন সিনিয়র ক্রিকেটার আগে ব্যাট করতে আপত্তি জানান। আর এটাও মুমিনুলের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার বড় কারণ। প্রশ্ন উঠে দলে তাঁর কর্তিত্ব নিয়ে। আসলেই কী মুমিনুল তাঁর ইচ্ছেমত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?

এছাড়া মুমিনুল সবসময়ই একটু শান্ত স্বভাবের। তাঁর মধ্যে নেতা ব্যাপারটা ঠিক দেখা যায় না। তবে ড্রেসিং রুমে কিংবা ক্রিকেটারদের সাথে তাঁর সম্পর্ক কেমন সেটা বাইরে থেকে বলা কঠিন। তবে সাদা চোখে দেখলে এমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে সবসময় নিজের পছন্দমত সিদ্ধন্তটা নিতে পারেননা এই অধিনায়ক।

ওদিকে সবমিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফর্মেন্সও তেমন সুখকর না। ফলে তাঁর উপর চাপটাও আরো অনেক বেশি। এছাড়া দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের প্রায়ই একাদশে পাচ্ছেন না তিনি। আবার রিভিউ নেয়া , না নেয়া নিয়ে আছে অনেক সমালোচনা। অধিনায়কত্বের এই চাপ নিয়ে ব্যাটসম্যান মুমিনুল তাই খুব সম্ভবত হাপিয়ে উঠেছেন। এই সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া মঞ্চ অবশ্য মুমিনুলের সামনেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাঁর ব্যাট হাসলেই হয়তো মিলবে অনেক জবাব। চাপমুক্ত হতে পারেন অধিনায়ক মুমিনুলও।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link