গতির ভাটায় শিকারীর জোয়ার

গত বছর ইনজুরির সুবাদে বড় একটা সময় মাঠের বাইরে কাটাতে হয়েছে পাকিস্তানের পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদিকে। হাঁটুর লিগামেন্টের ইনজুরিতে পাকিস্তানের হয়ে মাত্র এক তৃতীয়াংশ ম্যাচে কেবল খেলতে পেরেছেন এই তারকা। ইনজুরি থেকে ফেরার পর আগের চাইতে বলের গতিটাও খানিকটা কমেছে এই বাঁহাতি পেসারের।

অভিষেকের পর থেকেই নিয়মিত পারফরম্যান্সের সুবাদে জাতীয় দলের সবচেয়ে বড় তারকাদের একজন শাহীন। এই তারকাও জানেন সেটা, সেই কারণেই কিনা ইনজুরি থেকে দ্রুত ফিরতে নিজের খরচেই লন্ডনে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে একই হাঁটুতে আরো একবার ইনজুরির শিকার হয়ে বোলিংয়ের কোটা পূরণ করতে পারেননি।

তবে ইনজুরি থেকে সুস্থ হবার পর নিজের পুরনো ছন্দে ফিরতে মোটেই সময় নেননি। মাঠে দারুণ পারফরম্যান্স এবং নেতৃত্বগুণ দিয়ে লাহোর কালান্দার্সকে এনে দিয়েছেন পিএসএলে টানা দ্বিতীয় শিরোপা। এরপর থেকে গুঞ্জন আছে বাবর আজমকে সরিয়ে জাতীয় দলের নেতৃত্বও তুলে দেয়া হতে পারে তাঁর কাঁধেই।

সদ্য নাম লিখিয়েছেন ইংল্যান্ডের টি টোয়েন্টি ব্ল্যাস্টেও। এবারের আসরে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে মাঠ মাতাতে দেখা যাবে তাঁকে। ইনজুরি থেকে ফেরার পর গতি কিছুটা কমে গেলেও এখনো আগের মতো উইকেট তুলে নিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। পিএসএলে ১৯ উইকেট শিকারের পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সীমিত ওভারের সিরিজে তুলে নিয়েছেন ১৪ উইকেট।

শাহীন বলেন, ‘প্রত্যেকের আলাদা মতামত আছে। কিন্তু আমি এ নিয়ে ভাবছি না। আপনি যদি ১১০ কিমি গতিতে বল করেও নিয়মিত উইকেট তুলে নিতে পারেন, তাহলে চিন্তার কিছু দেখি না আমি। আমি মাঠে নিজের শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করি, এটাই সবচেয়ে জরুরি। সময়ের সাথে সাথে গতি বাড়বে, এ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বকাপের আগের দুই মাস মাঠের বাইরে ছিলাম, বিশ্বকাপের পরেও। সুতরাং পুরনো ছন্দে ফিরতে কিছুটা সময় লাগা স্বাভাবিক। সেই ছন্দটা নিয়মিত ম্যাচ খেলতে খেলতেই পেয়ে যাবো। পিএসএল এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যত ম্যাচ খেলেছি, ততই আগের চাইতে ভালো অনুভব করেছি।’

হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে ঘরের মাঠে গত মৌসুমের সবগুলো টেস্ট মিস করেছেন। এমনকি তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ম্যাচে এমসিসিতে বিশ্বকাপের ফাইনালে সবচেয়ে দরকারি সময়ে তাঁকে মাঠে পায়নি পাকিস্তান। ফাইনালে হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ লুফে নিতে গিয়ে আরো একবার ইনজুরির শিকার হন এই তারকা। যদিও ১৬তম ওভারে চেষ্টা করেছিলেন ফিরে আসার, কিন্তু এক বল করার পরেই বাধ্য হন মাঠ ছাড়তে।

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই প্রতিটি ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার। তাছাড়া ২০২১ বিশ্বকাপের ঘটনাটাও আমার এখনো মনে আছে। এবারের বিশ্বকাপে যদি ইনজুরির শিকার না হতাম, তাহলে হয়তো আমরা ম্যাচটা জিততেও পারতাম। তবে কিছু করার নেই, ইনজুরি যেকোনো সময়ই হতে পারে।’

জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা জিততে না পারলেও পিএসএলের আসরে দারুণ উজ্জ্বল শাহীন। তাঁর হাতে অধিনায়কত্ব তুলে দেবার পরই টানা দুবার পিএসএলের শিরোপা জিতেছে লাহোর কালান্দার্স। অধিনায়কত্ব পেয়েই যেন গোটা দলটাকে বদলে দিয়েছেন শাহীন। বিশেষ করে চাপের মুখে দারুণ সিদ্ধান্ত নেবার পাশাপাশি তরুণদের আগলে রাখা এবং দলকে এক সুতোয় গেঁথেছেন এই পেসার।

শাহীন বলেন, ‘অধিনায়কত্ব বোলিং করার চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা একটা ব্যাপার। আপনাকে পুরো দলের কথা ভাবতে হবে। অন্যদিকে বোলার হিসেবে কেবল আপনি নিজের বোলিং নিয়েই ভাববেন, কি করে অধিনায়কের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়। তাছাড়া দলের প্রতিটি সদস্যের কথা ভাবতে হয়, তাঁরা কেমন বোধ করছে সেটা জানতে হয়। তবে অধিনায়কত্বের দায়িত্বটা আমি বেশ উপভোগ করছি।’

তিনি বলেন, ‘অধিনায়কত্ব করার সময় আপনি জানেন চাপের মুখে আপনাকে ঠিক কোন বোলারকে কখন বোলিংয়ে আনতে হবে। অধিনায়ক হিসেবে আমার কাছে সবসময় অপশন ছিল নিজেকে বোলিংয়ে আনার। কারণ চাপের মুখে আমি যদি সামনে থেকে নেতৃত্ব না দেই, তাহলে দলের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সবাই ভাবতে পারে অধিনায়ক নিজেকে লুকিয়ে রাখছে।’

কেবল বোলিং নয়, অধিনায়কত্ব পাবার পর শাহীনের ব্যাটিংয়েও আমূল পরিবর্তন এসেছে। শেষদিকে নেমে নিজেকে রীতিমতো ক্লিন হিটারে পরিণত করেছেন এই তারকা। পিএসএলের ফাইনালে তো মুলতান সুলতান্সের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৫ বলে ৪৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস।

শাহীন বলেন, ‘সেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সময় থেকেই আমি ব্যাটিং করতে পছন্দ করতাম। ইনজুরিতে পড়ার পর থেকেই আমি নিজের ব্যাটিং নিয়ে কাজ করতে শুরু করি যেহেতু বোলিং করতে পারছিলাম না। আমি আগেও একই পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাট করতাম, কিন্তু যেহেতু এখন ছক্কা হাঁকাতে পারছি তারমানে আমার ব্যাটিংয়ে উন্নতি এসেছে।’

তাঁর ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনার পেছনে অবদান আছে তাঁর শ্বশুর শহীদ আফ্রিদিরও। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই লালার অবদান আছে। তাঁর সাথে মিলেই আমি শেষদিকে কিভাবে বেশি ছক্কা হাঁকানো যায় এ নিয়ে অনুশীলন করেছি। তাঁর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা বেশ ভালো ছিল অনেক কিছুই শিখতে পেরেছি।’

শাহীন বলেন, ‘আমার প্রথম প্রায়োরিটি অবশ্য এখনো বোলিংই। তবে যদি বল হাতে বাজে সময় যায়, তবে ব্যাট হাতে সুযোগ থাকে অবদান রাখার। যদি ব্যাট হাতেও কিছু না হয়, তবে ফিল্ডিংয়ে সুযোগ থাকে।’

ইংল্যান্ডের মাটিতে এর আগে বেশ ভালো সময় কাটিয়েছেন শাহীন। ট্রেন্টব্রিজে তো একা হাতেই ম্যাচ জিতিয়েছেন জাতীয় দলকে। এবারে টি টোয়েন্টি ব্ল্যাস্টের সুবাদে ইংল্যান্ডে বেশ সময় কাটাতে হবে শাহীনকে।

তিনি বলেন, ‘পরিসংখ্যান বলে এখানের উইকেটগুলোতে প্রচুর রান হয়। তবে আপনি যদি সঠিক জায়গাতে বল করতে পারেন, তবে উইকেট পাবেন। নতুন পরিবেশ আমি বেশ উপভোগ করছি। আশা করছি এখানে সময়টা ভালো কাটবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link