চেয়েছিলাম হাজার দুখের মাঝেও, সুখটাকে একটু খুঁজে নিতে। কিন্তু দু:খের মেঘগুলো এত কালো যে তার মাঝে সুখের আলোটা আর খুঁজে পাওয়া গেল না।
এটা কারো জীবন থেকে নেওয়া নয়, স্বংয় বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই বর্তমান অবস্থা। টেস্ট, টি-টোয়েন্টিকে চলছিল যা ইচ্ছে তা অবস্থা, সুখের ওডিআই ফরম্যাটেও এখন দেখা দিয়েছে দৈন্যদশা অবস্থা। বছরটা শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের সুখকর স্মৃতি নিয়ে। এরপর রঙিন পোশাকে একের পর এক সাফল্য ধরা দিয়েছে বাংলাদেশের জালে।
নিউজিল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ ড্র হয়। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েও রঙিন জার্সিতে জয়ের ধারা অব্যাহত থাকে তামিম ইকবালের দলের। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয় ইতিহাস গড়ে সফরকারীরা।
সে সাফল্যর ধারাবাহিকতা সব ফরম্যাটে সমান ভাবে ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। জার্সির রঙ বদলাতেই বদলে যায় দলের পরিস্থিতি। বরাবরে মতো হতাশা বাড়তে থাকে সাদা পোশাকের বেলায়। দক্ষিন আফ্রিকার মাটিতে ২ টেস্ট হারের পর, ঘরে মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও সিরিজ হারে বাংলাদেশ। দুই টেস্টের একটি ড্র হলেও অন্যটি হারে বড় ব্যবধানে। টেস্টে আর সুখ পাখির দেখা মেলেনি।
টেস্টে বাংলাদেশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে অনেকখানি। মারকাটারির টি-টোয়েন্টিতেও দর্শকদের হাতাশা বাড়ছে দলের পারফরম্যান্সে। অধিনায়কত্ব নিয়ে খেলা চলছে বহুদিন। সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে বিতর্ক যেন থামছেই না। এরমাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজ জুড়ে ছিলেন না মুশফিক। টেস্টে থাকলেও বাকি দুই ফরম্যাটে ছিলেন না সাকিব আল হাসান।
ক্যারিবিয়াদের বিপক্ষে, দুই টেস্টেই লজ্জাজনক হারের পর, টি-টোয়েন্টি সিরিজও খুঁইয়েছিল লাল সবুজের বাহিনী। তবে প্রিয় ফরম্যাট ওয়ানডেতে জিতেছিল ৩-০ ব্যবধানে।
বলা হয়ে থাকে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের অসময়ের সবচেয়ে বড় বন্ধু। নিছক মজা করেই লোকে বলে। কারণ, তাঁদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাফল্য নিশ্চিত, তাতে ফরম্যাট যাই হোক না কেন।
নানা গুঞ্জন উঠেছিল জিম্বাবুয়ে সফর নিয়ে। খবরের পাতায় কখনো এসেছে সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদেই জিম্বাবুয়ে সফরের কথা। কখনো বা পূর্ণ শক্তির দল যাওয়ার কথা। শেষমেষ কেবল সাকিবই গেলেন না জিম্বাবুয়েতে। বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই টি-টোয়েন্টি দলে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম এবং নিয়মিত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশ্রামে দিয়ে নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়কত্ব দেওয়ায় হয় জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য। অধিনায়ক বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি বাংলাদেশের৷ পুরো বছরের গ্লানি ভুলে জিম্বাবুয়ের গিয়েছিল এক চিলতে সুখ খুঁজতে। কিন্তু সেটাও আর হলো না। টি-টোয়েন্টি সিরিজের হারের পর, নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করা ওয়ানডে সিরিজও হেরেছে বাংলাদেশ।
তামিম ইকবালের ওয়ানডে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর বাংলাদেশের এমন খারাপ সময় আর কাটেনি। জিম্বাবুয়ে সফরের আগে তার প্রতিনিধিত্বে খেলা আট সিরিজে বাংলাদেশ কেবল শ্রীলঙ্কা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছে। দুইটি সিরিজই ছিল প্রতিপক্ষের মাঠে। এবার হারলো নিজেদের থেকে ৮ ধাপ পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ের কাছে। তুলনামূলক খর্ব শক্তির দল ছিল জিম্বাবুয়ে।
তাদের মূল দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ছিলেন না এই স্কোয়াডে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে নেই নিয়মিত অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়েছিলেন ব্যাটিং ভরসা শন উইলিয়ামস। পেসার টেন্ডাই চাতারা ও ব্লেসিং মুজারাবানি ছাড়াই খেলেছে জিম্বাবুয়ে।
তারপরও হেরেছে বাংলাদেশ! প্রথম ম্যাচে ৩০৩ ও দ্বিতীয় ম্যাচে ২৯০ করেও জিততে পারেনি সফরকারীরা। সিকান্দার রাজা একাই ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। তার সাথে কখনো ইনোসেন্ট কাইয়াঁ কখনো বা রেজিস চাকাভা বাংলাদেশকে ধরাশায়ী করে ছেড়েছেন।
টানা ১৯ ম্যাচ বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় না পাওয়া জিম্বাবুয়ে এবার জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশকে দেখিয়ে দিয়েছে ব্যর্থতার জায়গা গুলো। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং তিন ইউনিটেই বাংলাদেশ ছিল জিম্বাবুয়ে থেকে পিছিয়ে। বাংলাদেশ কি পারবে শেষ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়ে হোয়াইটওয়াশ ঠেকাতে?
এই দিনটা বাংলাদেশ ক্রিকেটে আগে নিয়মিতই আসতো। ২-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে প্রতিপক্ষ। শেষ ম্যাচটা স্রেফ নিজেদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য নামবে। আর বাংলাদেশের জন্য আরেকটা ম্যাচ, আরেকটা পরাজয়ের অপেক্ষা। সেদিন প্রায় বাসিই হয়েছিল। ওয়ানডেতে নিয়মিত জয় তো বটেই, সিরিজও নিয়মিতই জিততো বাংলাদেশ। হোক সেটা দেশে কিংবা দেশের বাইরে।
কিন্তু, হঠাৎই কেমন যেন ছন্দপতন। তাই অনেকদিন বাদে ফিরলো পুরনো স্মৃতি। এখন হোয়াইটওয়াশ ঠেকানো নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। এই ফেরাটা বেদনার, হাহাকারের। এই হাহাকার কেটে যাক!