বাপ কা বেটা

অন্যান্য সকল খেলার মত ক্রিকেটেও পারিবারিক অংশগ্রহণ আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে ক্রিকেটীয় পরিবেশে গড়ে উঠা কিছু ক্রিকেটারকে।

একসময় ভাবা হত বাবার সাফল্য ধরে রাখতে পারবেন না ছেলেরা। কিন্তু সেটাকে ভুল প্রমাণিত করে অনেক ক্রিকেটীয় পরিবার থেকে আসা ক্রিকেটাররা তাদের পূর্বসূরীদের থেকে বেশ সফল হয়েছেন। বাবা এবং ছেলে দুইজনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছে এমন তালিকা নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

  • অমরনাথ

লালা অমরনাথ ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের এক কিংবদন্তি। তাঁর দুই পুত্র সরিন্দার অমরনাথ এবং মহিন্দার অমরনাথ দুই জনই টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছেন।

লালা অমরনাথ তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে করেছেন একটি মাত্র সেঞ্চুরি। তাঁর মতই সুরিন্দার অমরনাথ ক্যারিয়ারের অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু ক্যারিয়ার পরবর্তীতে আর কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি তিনি।

অপরদিকে মহিন্দর অমরনাথ ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেতে খেলেছেন আট বছর এবং টেস্টের হিসাবে ১৪ টেস্ট। মহিন্দর তাঁর ক্যারিয়ার শেষ করেন ১১ টেস্ট সেঞ্চুরি নিয়ে।

  • ব্রড

এই তালিকায় একমাত্র ইংলিশ জুটি হলেন ব্রড জুটি। বাবা ক্রিস ব্রডের মত ব্যাট হাতে সফল না হলেও ছেলে স্টুয়ার্ট ব্রড ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা পেসার। বাবা ক্রিস ব্রড ক্যারিয়ারে ছয়টি সেঞ্চুরি করেছেন তাঁর মধ্যে চারটি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে।

অপরদিকে স্টুয়ার্ট ব্রড ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি করেছেন একটি। ক্রিকেট মক্কা খ্যাত লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরি করেন তিনি।

  • মোহাম্মদ

ক্রিকেটে একমাত্র বাবা-ছেলে জুটি যারা কিনা ২০০ টির উপরে টেস্ট খেলেছে। হানিফ মোহাম্মদ পাকিস্তানের এক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। তিনি পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে করেছেন ১২ টি সেঞ্চুরি। এর মধ্যে ছিলো ৩৩৭ রানের সেই ইনিংস। এছাড়াও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লাহোরে ২০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন হানিফ মোহাম্মদ।

অপরদিকে ছেলে শোয়েব মোহাম্মদ দুইবার ২০৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। লাহোরে ভারতের বিপক্ষে এবং করাচিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। শোয়েব মোহাম্মদ ক্যারিয়ারে করেছেন মোট সাত সেঞ্চুরি।

  • হ্যাডলি

ওয়াল্টার হ্যাডলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন সময়ে নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন। তিনি ১৯৪৬-৪৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন তিনি। তাঁর পাঁচ ছেলের মধ্যে তিনজন টেস্ট ক্রিকেটে খেলেছেন। এর মধ্য শুধুমাত্র টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন।

রিচার্ড হ্যাডলি কলম্বোতে শ্রীলংকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন। এছাড়াও তিনি টেস্ট ক্রিকেটে শিকার করেছেন ৪৩১ উইকেট।

  • পতৌদি
নবাব পরিবারের পারিবারিক ছবি।

অন্যসব বাবা ছেলে জুটির থেকে ভিন্ন ছিলো এই জুটি। বাবা এবং ছেলে দুইজন দুই দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন।

বাবা ইফতেখার আলি খান পতৌদি সেঞ্চুরি করেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে আর ছেলে মনসুর আলি খান পতৌদি টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছেন ভারতের হয়ে।

  • মার্শ

জিওফ মার্শ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন ৫০ টেস্ট। জিওফ মার্শের দুই ছেলে শন মার্শ এবং মিচেল মার্শও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে।

জিওফ মার্শ ক্যারিয়ারে করেছেন চারটি সেঞ্চুরি। অপরদিকে তাঁর দুই পুত্র শন এবং মিচেল দুইজনই অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি করেছেন। তারা দুইজনই অস্ট্রেলিয়া দলের নিয়মিত সদস্য।

  • নাজার

নাজার মোহাম্মদ পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। তিনি ১৯৫২-৫৩ সালে লাক্ষ্ণৌতে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন।

নাজার মোহাম্মদের ছেলে মুদাসসার নাজার পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন ৭৬ টেস্ট। এই সময়ের মধ্যে পাকিস্তানের হয়ে করেছেন ১০ সেঞ্চুরি। এর মধ্যে ছয়টি সেঞ্চুরিই করেছেন ভারতের বিপক্ষে।

  • রাদারফোর্ড

কেন রাদারফোর্ড নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক। তিনি ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৫৬ টেস্ট। এর মধ্যে ১৮ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডকে। ১৯৮৪-৮৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন তিনি। এরপর ক্যারিয়ার জুড়ে মোট তিন সেঞ্চুরি করেন তিনি।

কেন রাদারফোর্ডের ছেলে হামিশ রাদারফোর্ড। তিনি নিউজিল্যান্ডের ওপেনার ব্যাটসম্যান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছেন ১৮ টেস্ট। এখানে সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র একটি।

  • মাঞ্জরেকার

ভারতের শুরুর দিকের ব্যাটিং তারকা ছিলেন বিজয় মাঞ্জরেকার। তিনি ভারতের হয়ে খেলেছেন ৫৫ টেস্ট। এর মধ্যে করেছেন ৭ সেঞ্চুরি।

ভারতীয় ব্যাটিং তারকা বিজয় মাঞ্জেরেকারের ছেলে হলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার। তিনি ভারতের হয়ে বেশিদিন খেলেননি। তাঁর ছোটো ক্যারিয়ারে করেছেন চারটি সেঞ্চুরি।

  • নৌর্স

এই তালিকায় একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকান জুটি নৌর্স জুটি। বাবা ডুভ নৌর্স প্রোটিয়াদের হয়ে খেলেছেন ৪৫ টেস্ট। ১৯২১ সালে তিনি সবচেয়ে বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন।

অপরদিক ডুভ নৌর্সের ছেলে হলেন ডুডলে নৌর্স। তিনি ক্যারিয়ারে করেছেন নয়টি সেঞ্চুরি করেছেন। ৪০ বছর বয়সে ক্যারিয়ারে শেষ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।

  • লাথাম

১৯৯২ সালের ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের প্রধান শক্তি ছিলো মিডিয়াম পেস বোলিং। এই মিডিয়াম পেস শক্তির অন্যতম ছিলেন রড লাথাম। রড লাথাম ক্যারিয়ারে খেলেছিলেন মাত্র চার টেস্ট। এখানে তিনি তাঁর টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম এবং একমাত্র সেঞ্চুরি করেন।

রড লাথামের ছেলে টম লাথাম। তিনি নিউজিল্যান্ডের দলের নিয়মিত সদস্য। তিনি নিউজিল্যান্ডের হয়ে করেছেন ১১ টেস্ট সেঞ্চুরি এবং এখনো খেলে যাচ্ছেন।

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link