আর্জেন্টিনার বিশ্ব জয়ের রেশ এত তাড়াতাড়ি কাটছে না, কাটবেও না। ডিসেম্বরের শীতল রাত্রে বিশ্বকাপে চুমু এঁকেছে রোজারিওর বাসিন্দা। ওই রাত্রেই সম্পূর্ণ হয়েছে অনেক গুলো অধ্যায়। লিওনেল স্ক্যালোনি থেকে পাবলো আইমার হয়ে মারিয়া, লিওনেল মেসি—সম্পূর্ণ অনেক কিছু। এমন কি মাঠে কিংবা ড্রেসিংরুমে বিশ্বজয়ের উচ্ছ্বাসে সামিল হওয়া সার্জিও কুন আগুয়েরোও হয়তো সম্পূর্ণ করে নিলেন নিজেকে, বিশ্বকাপ ছুঁয়ে।
এমন সম্পূর্ণ রাত্তিরেও কিছু আফসোস তো রয়েই যায়। মেসির প্রথম সিনিয়র বিশ্বকাপ ২০০৬, এই লেখকেরও প্রথম দেখা বিশ্বকাপ ২০০৬-য়েই। ২০০৬ বিশ্বকাপ মেসি মুখর ছিল না কোনোমতেই বরং তা ছিল বুফনময়, জিদানময় কিংবা পিরলোময়।
তবুও, নেদারল্যান্ডস ম্যাচে তাঁর কিছু টাচ মনকে এখনও ভাবিয়ে তোলে — কী হত যদি একবার মাঠে নামার সুযোগ পেতেন কোয়ার্টারের জার্মানি ম্যাচটায়? কী হত যদি ক্যাম্বিয়াসো না নেমে হুয়ান রোমান রিকুয়েলমেকে না তুলে ক্রেসপোর পাশে রোজারিওর এই দুরন্ত বাচ্চাটাকে রাখা হত আশি মিনিটের পর?
তিনি, লিওনেল মেসি। মাঠে নামেননি সেদিন। আয়ালার গোলে এগিয়ে যাওয়া আর্জেন্টিনার প্রায় জেতা ম্যাচ হেডে করে ঘুরিয়ে দিয়েছেন মিরোস্লাভ ক্লোজে নামের একজন যাঁর জার্মানির জার্সি গায়ে মাঠে নামাটাই ছিল এক পোলিশ দম্পতির সুবিশাল সংগ্রামের পথ। জার্মান গোলের সামনে দুর্ভেদ্য হয়ে উঠছে লেহমানের দস্তানা।
ক্যাম্বিয়াসো নামছেন, রিকার্ডো ক্রুজ নামছেন – কিন্তু তিনি নামলেন না। সাইড লাইনের বেঞ্চে বসে রইলেন একাকী। নি:সঙ্গ হয়ে অপেক্ষা করে বসে রইলেন কোচ পেকারম্যান কখন তাঁকে সাবস্টিটিউট ইউনিফর্ম ছেড়ে নেভি ব্লু ন্যাশানাল অ্যাওয়ে জার্সিটা পরার ডাক দেন।
তবে, তিনি ডাক পেলেন না। জার্মানির কাছে কোয়ার্টারে হেরে গেল আর্জেন্টিনা। তিনি, লিওনেল মেসি, মাঠে নামেননি সেদিন। তিনি মাঠে নামলেন আরও ষোলো বছর পর। মাঠে নামলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হয়ে। পুরো একশো কুড়ি মিনিট খেললেন।
দুটো গোল করলেন। টাইব্রেকারে হুগো লরিসকে পরাস্ত করলেন। বিশ্বকাপ জিতলেন। রাত ভর উল্লাস করলেন। পরদিন সকালে একহাতে বিশ্বকাপ আরেক হাতে পানীয়র কাপে চুমুক দেওয়া ছবি পোস্ট করে ঝড় তুলে ফেললেন গোটা বিশ্বে।
তিনি, লিওনেল মেসি। নাম তো নিশ্চয়ই শুনেছেন।