গত কয়েক বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের উত্থান চোখে পড়ার মত। গোটা ক্রিকেট বিশ্বের দর্শনই অনেকটা পাল্টে দিয়েছে ক্ষুদ্র সংস্করণের ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টিতে সফলতার লক্ষ্যে দলগুলো তৈরি করেছে স্পেশালিস্ট ফিনিশার, যাদের দায়িত্ব শেষদিকে নেমে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে জয় এনে দেয়া। অর্থাৎ পূর্বে ল্যান্স ক্লুজনার, কপিল দেব, মাইকেল বেভানদের দায়িত্বটাই আরও বড় আঙ্গিকে পালন করছেন আধুনিক ফিনিশাররা।
প্রতিটি দলে স্পেশালিস্ট ফিনিশার থাকা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাফল্য পেতে বড় বড় ছক্কা হাঁকাতে জানা ফিনিশারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এবারের বিশ্বকাপেও প্রতিটি দলে রয়েছেন এমন একাধিক ফিনিশার। আসুন দেখে নেয়া যাক এবারের বিশ্বকাপে কোন দলে কারা রয়েছেন খেলা শেষ করে আসার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে।
- অস্ট্রেলিয়া
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া আছে ফুরফুরে মেজাজেই। অভিজ্ঞ ম্যাথু ওয়েড এবং নতুন দলে আসা টিম ডেভিডের উপর থাকবে খেলা শেষ করে আসার দায়িত্ব। বর্তমানে কিছুটা অফফর্মে থাকলেও নিজের দিনে শেষদিকে নেমে মার্কাস স্টোয়িনিসও একাই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। তাছাড়া মাঝের ওভারগুলোতে স্টোয়িনিসের স্লো মিডিয়াম পেস ভীষণ কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে আসন্ন বিশ্বকাপে।
তবে সবাইকে ছাপিয়ে এবারের বিশ্বকাপে অজিদের এক্স ফ্যাক্টর হবেন সদ্য দলে আসা টিম ডেভিড। বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগগুলোতে ব্যাট হাতে রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন ডেভিড। জাতীয় দলের হয়ে মাত্র তিন ম্যাচ খেললেও শেষ ম্যাচে ২০০ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেটে খেলেছেন পঞ্চাশোর্ধ রানের এক ইনিংস। এছাড়া সিংগাপুরের হয়েও তাঁর রেকর্ড ঈর্ষণীয়, তাঁদের হয়ে রান করেছেন প্রায় ১৬০ স্ট্রাইক রেটে। ঘরের মাঠে শিরোপা ধরে রাখতে তাই ডেভিডের দিকে তাকিয়ে থাকবে অজিরা।
ফিনিশিংয়ে তাঁর সঙ্গী ম্যাথু ওয়েডও আছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে। গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন চাপের মুখে ভেঙ্গে পড়ার পাত্র নন তিনি। ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টিতে প্রায় ৯৪ গড়ে ১৬৪.৯১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, ম্যাচ শেষ করে আসার দিক থেকে অজিদের চাইতে ভালো অবস্থানে নেই আর কোনো দল।
এছাড়া হ্যাজেলউড, স্টার্ক, কামিন্স, জাম্পাদের নিয়ে গড়া বোলিং লাইনআপ বিশ্বের অন্যতম সেরা। টপ অর্ডারে অধিনায়ক ফিঞ্চ, ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ, ম্যাক্সওয়েলরা দলকে বিধ্বংসী এক শুরু এনে দেয়ার সক্ষমতা রাখেন।
- নিউজিল্যান্ড
গতবারের রানার্স আপ নিউজিল্যান্ডের হয়ে ম্যাচ শেষ করে আসার দায়িত্বে থাকবে দুই অলরাউন্ডার জিমি নিশাম এবং গ্লেন ফিলিপসের উপর। এই হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান মিডল অর্ডারে নেমে যে কোনো সময়ে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। বিশেষ করে ২০২২ সালে ফিলিপস আছেন দুরন্ত ফর্মে। এই বছরে নয় ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ১৪৫ স্ট্রাইক রেটে সংগ্রহ করেছেন ৩১৯ রান। তাঁর ৫৩.১৬ গড়ই প্রমাণ করে তিনি কতটা ধারাবাহিকভাবে রান করে গিয়েছেন এই বছরে। যদিও এই রানের সিংহভাগই তিনি করেছেন সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে, বিশ্বসেরা সব বোলারদের সামনে চাপের মুখে তিনি কতটা পারফর্ম করতে সক্ষম হন সেটাই দেখার বিষয়।
অন্যদিকে পেস বোলিং অলরাউন্ডার জিমি নিশাম বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বেরই অন্যতম সেরা ফিনিশার। ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে এই বছরে ব্যাট করেছেন প্রায় ৩৮ গড় এবং ২০৭ স্ট্রাইক রেটে। নিজের অভিজ্ঞতা আর সাম্প্রতিক ফর্ম অনুযায়ী বলাই বাহুল্য এবারের বিশ্বকাপে ব্ল্যাকক্যাপসদের সাফল্যের অনেকটাই নির্ভর করবে এই কিউই অলরাউন্ডারের উপর।
- বাংলাদেশ
হতাশাজনক এক এশিয়া কাপ কাটানোর পর আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করেছে বাংলাদেশ। পুরনোদের বাদ দিয়ে তরুণদের উপর ভর করে বিশ্বকাপে চমকে দিতে চাইছে টাইগাররা। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটার নিজেদের প্রমাণের লক্ষে বিশ্বকাপ খেলতে নামবে বাংলাদেশের হয়ে।
ম্যাচ শেষ করে আসার দিক থেকে বাংলাদেশ বরাবরই দুর্বলতম। পেশি শক্তির জোরে ছয় হাঁকানো ক্রিকেটারের সংখ্যা কম এই দলে। তবে সম্প্রতি দলে আশার আলো হয়ে এসেছেন মোসাদ্দেক হোসেন এবং উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। ২৬ বছর বয়সী মোসাদ্দেক এশিয়া কাপে দারুণ ব্যাটিং করেছেন। বিশ্বকাপে তাকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তোলার কথা ভাবা হলেও আপাতত সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ। ২০২২ সালে নয়টি টি-টিয়েন্টিতে মোসাদ্দেক প্রায় ত্রিশ গড় এবং ১৪২.৮৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন। টপ অর্ডার ভাল শুরু এনে দিলে শেষটা রাঙিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন এই ব্যাটসম্যান। তাছাড়া টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ডানহাতি অফস্পিনও সমান কার্যকরী।
ম্যাচ শেষ করে আসার দায়িত্বে তাঁর সঙ্গী নুরুল হাসান বেশ আগে থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে জনপ্রিয় ছক্কা হাঁকানোর দক্ষতার জন্য। সেই ফর্মটা তিনি টেনে এনেছেন জাতীয় দলেও, ২০২২ সালে জাতীয় দলের হয়ে ১৪২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন। এই ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিং গড়টাও দেখার মত, প্রায় ৬৫। সবমিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপে মিডল অর্ডার নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা খানিকটা কম। এখন অপেক্ষা কেবল টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের জ্বলে ওঠার।
- আফগানিস্তান
ক্রিকেটে আবির্ভাবের পর থেকেই শক্তিশালী স্পিন বোলিং লাইন আপের জন্য বড় দলগুলোর সমীহ কুড়িয়েছে আফগানিস্তান। তবে ইদানীংকালে তাদের ব্যাটসম্যানরাও ভালো করতে শুরু করেছে। যদিও এখনও বিশ্বমানের ফিনিশার খুঁজে বের করতে পারেনি আফগানরা।
তাঁদের অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী, অনেকদিন ধরেই ফর্মে নেই। ৩৭ বছর বয়সী নবীর খেলায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। এই বছরে ১৫ টি টোয়েন্টি ম্যাচে অংশ নিয়ে রান করেছেন মাত্র ১৫ গড়ে। এছাড়া স্ট্রাইক রেটটাও ১৪০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১৫ তে। যা কিনা একজন ফিনিশারের জন্য বড্ড বেমানান। তবে নিজের শেষ বিশ্বকাপটা পারফরম্যান্স দিয়ে ঠিকই রাঙিয়ে দিতে চাইবেন বর্ষীয়ান এই অলরাউন্ডার।
তবে পাঁচ নম্বরে নামা নাজিবুল্লাহ জাদরানের ফর্ম নবীর তুলনায় যথেষ্ট ভাল। ২৯ বছর বয়সী বাঁ-হাতি এই ব্যাটার ২০২২ সালে প্রায় ১৫০ ছুঁই ছুঁই স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩২৭ রান। মোহাম্মদ নবীর অফফর্মের সুবাদে বিশ্বকাপে তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকবেন আফগান সমর্থকরা। এছাড়া দলে পেস বোলিং অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাই থাকলেও জাতীয় দলে এখনো ব্যাটিং দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারেননি তিনি।
- দক্ষিণ আফ্রিকা
এবারের টি -টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শিরোপার সবচেয়ে বড় দাবিদারের নাম হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের মূল তারকাদের অবসরের পর আসা দুঃসময় ইতোমধ্যেই কাটিয়ে উঠেছে প্রোটিয়ারা। বিশ্বকাপের পরই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন জানিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন তাঁদের বর্তমান কোচ মার্ক বাউচার। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা তাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিশ্বকাপ জিতে কোচকে বিদায়ী উপহার দিতে।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের প্রায় সবাই পাওয়ার হিটার। যেকোনো মূহুর্তে ব্যাটিং এ নেমে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা। তবে খেলা শেষ করে আসার জন্য আলাদা দায়িত্ব থাকবে ডেভিড মিলার এবং ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের উপর।
৩৩ বছর বয়সী মিলার বছরখানেক ধরেই আছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে। আইপিএলের দল গুজরাট লায়ন্সকে শিরোপা এনে দেয়ার দৌড়ে রেখেছেন নৈপথ্য ভূমিকা। ফর্মটা ধরে রেখেছেন জাতীয় দলেও, ব্যাট করছেন ১৫৮ স্ট্রাইক রেটে। দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থকরা আশা করছেন এই বিশ্বকাপেই মিলারের সবচেয়ে বিধ্বংসী রূপ দেখবে বিশ্ববাসী। অন্যদিকে খুব সম্ভবত নিজের শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে আসা মিলারও চাইবেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কোনো ট্রফি জিততে না পারার আক্ষেপ মেটাতে।
মিলারের পাশাপাশি ম্যাচ ফিনিশিংয়ের দায়িত্ব থাকবে পেস বোলিং অলরাউন্ডার ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের উপরও। মাত্র ১৮ গড় হলেও বল পেটাতে প্রিটোরিয়াসের জুড়ি মেলা ভার, ব্যাট করেন প্রায় ১৭০ স্ট্রাইক রেটে। দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্সি পিচের সাথে অস্ট্রেলিয়ার গতিময় উইকেটের সাদৃশ্য থাকায় প্রোটিয়া ফিনিশাররা বাড়তি সুবিধা পাবেন। এই দুজন ছাড়াও বিশ্বকাপে তরুণ ট্রিস্টান স্টাবসের উপরও নজর থাকবে ক্রিকেট বিশ্বের। দলে আগমণের বছরখানেক না পেরোলেও যিনি নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন দারুণভাবেই।
- ইংল্যান্ড
এক যুগ আগে জেতা সিংহাসনটা ফিরে পেতে এবার আদা জল খেয়ে নেমেছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপকে পাখির চোখ করে ইতোমধ্যেই দল গুছিয়ে ফেলেছে থ্রি লায়ন্সরা। দলে পারফর্মারের ছড়াছড়ি থাকায় শেষমূহুর্তে জনি বেয়ারস্টো ছিটকে গেলেও খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি। তাঁর বদলে দলে জায়গা পেয়েছেন আরেক হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলস।
গত কয়েক বছরে সাদা বলের ক্রিকেটের দর্শনটাই বদলে দিয়েছে ইংল্যান্ড। যেকোনো মূহুর্তে ম্যাচের চিত্র বদলে দিতে সক্ষম ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। এবারের বিশ্বকাপে লিয়াম লিভিংস্টোন এবং মঈন আলীর উপর থাকবে ফিনিশিং টাচ দেয়ার দায়িত্ব। গত দুই বছরে সাদা বলের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা হার্ডহিটার লিয়াম লিভিংস্টোন। পাঁচ নম্বরে নেমে বড় বড় সব ছক্কা হাঁকাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ২০২২ সালে নয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ব্যাট করেছেন ১২৮ স্ট্রাইক রেটে।
তবে এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে ভাল ফর্ম নিয়ে যাচ্ছেন বোধহয় লিভিংস্টোনের সঙ্গী মঈন আলী। সময়ের চাহিদায় গত কয়েকবছরে নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে ফেলেছেন এই অলরাউন্ডার। এই বছর ১৭ টি-টোয়েন্টি খেলে বিস্ফোরক ১৬৪ স্ট্রাইকরেট আর ৩৩.৬৬ গড়ে রান করেছেন। বিধবংসী এই মঈনের সামনে বল করতে যেকোনো বোলারই ভয় পাবেন। এছাড়া নিজেদের দিনে ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারেন স্যাম কারান, ক্রিস জর্ডানরাও। নিচের দিকে ব্যাট করলেও ছক্কা হাঁকানোর তরিকা ভালোই জানা আছে তাঁদের।
- পাকিস্তান
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বোধহয় সবচেয়ে ভঙ্গুর মিডল অর্ডার নিয়ে যাবে পাকিস্তান। ওপেনিং এ বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান জুটি নিয়মিত রান করলেও মিডল অর্ডার সেই সুরটা ধরতে পারছে না। ফলে বড় মঞ্চে গিয়ে বারবারই ব্যর্থ হচ্ছে ২০০৯ টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। তবে দলটা পাকিস্তান বলেই বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া যাচ্ছে না, ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দলটা যে বরাবরই চমক দিতে পছন্দ করে। ম্যাচ শেষ করে আসতে আসিফ, শাদাব খানের পাশাপাশি মোহাম্মদ নওয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকবে পাকিস্তানের সমর্থকরা।
আসিফ আলি যতই নেটে প্রতিদিন ১৫০ ছক্কা হাঁকানোর কথা বলে থাকুন, ম্যাচে তাঁর প্রতিফলন দেখা গিয়েছে সামান্যই। ন্যূনতম ধারাবাহিকতাও বজায় রাখতে পারছেন না তিনি। এই বছর ১০ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে সংগ্রহ করেছেন মোটে ৭১ রান। তবে ১৫৪ স্ট্রাইক রেটটা জানান দেয়, দ্রুত রান তুলতে ক্ষমতাটা তাঁর মজ্জাগত। কেবল অধারাবাহিকতার রোগটা কাটাতে পারলেই শেষ দিকে রান তোলা নিয়ে আর ভাবতে হবে না পাকিস্তানকে।
শাদাব খানেরও একই সমস্যা আসিফ আলির মত। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত ম্যাচে তাঁর প্রতিফলন ঘটাতে পারছেন না। তবে এটাও সত্য নিচের দিকে ব্যাট করায় শাদাব নিজেকে প্রমাণের সুযোগও পাননি তেমন। এই বছরে মাত্র চার ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে করেছেন ৬৪ রান। স্ট্রাইক রেটটাও খারাপ না, ১৪১। বিশ্বকাপে এই দুজনের একজনও যদি জ্বলে উঠতে পারেন, বাকি দলগুলোর রাতের ঘুম হারাম হওয়ার জন্য তা যথেষ্ট হয়ে দাঁড়াবে।
- ভারত
দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করলেও গত দশকে আইসিসি ইভেন্টগুলোতে শিরোপা থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকেই ফিরতে হয়েছে ভারতকে। এবারের বিশ্বকাপে তাই ভালো করতে মুখিয়ে আছে ভারতীয় ক্রিকেটাররা। হার্দিক পান্ডিয়া এবং দীনেশ কার্তিকের উপর দায়িত্ব বর্তেছে ভারতের হয়ে ম্যাচ শেষ করে আসার। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই দুই ব্যাটম্যানই আছেন দারুণ ফর্মে।
এই বছরে ১৮ ম্যাচ খেলে প্রায় দেড়শ স্ট্রাইক রেটে ৪৩৬ রান করেছেন আইপিএল দিয়ে পুনরায় জাতীয় দলে ফিরে আসা হার্দিক পান্ডিয়া। সময়ের পরিক্রমায় শান্ত, পরিণত হার্দিক এখন আরও ভয়ংকর। এশিয়া কাপের মঞ্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিং করে জয় এনে দিয়ে হার্দিক বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর সামর্থ্য। এছাড়া বল হাতেও অধিনায়ক রোহিত শর্মার জন্য হার্দিক এক ভরসার পাত্র।
অন্যদিকে রূপকথার গল্প লিখেই চলেছেন দীনেশ কার্তিক। সারাজীবন অন্যদের ছায়ায় থাকলেও ক্যারিয়ারের শেষবেলায় এসে উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন আপন আলোয়। আইপিএলে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে অনবদ্য পারফর্ম করে ৩৭ বছর বয়সে ফিরেছেন জাতীয় দলে। এই বছরে ভারতের হয়ে ২২ ম্যাচে মাঠে নামলেও খুব বেশি বল খেলার সুযোগ পাননি। বেশিরভাগ ম্যাচেই অপরাজিত থেকেছেন ২-৪ বল খেলেই। তাঁর ১৩৭ স্ট্রাইক রেট ছাড়ানো ব্যাটিং হতে পারে এবারের বিশ্বকাপে ভারতের জন্য ম্যাচ নির্ধারক।