ভাগ্যিস, মিরাজ ও লিটন ছিলেন!

সেখানে লিটন দাসের নামের পাশে সেঞ্চুরি থাকবে, অর্ধশত রান দেখাবে মেহেদী হাসান মিরাজের নামের সাথে। তবে পরিস্থিতিটা কেউ হয়ত বলবে না। ওই সেঞ্চুরি আর হাফসেঞ্চুরির পেছনের গল্প হয়ত কেউ বলবে না। 

বহুকাল ধরে মনে গেঁথে রবে এই জয়। অন্তর্জালের লক্ষাধিক ডাটার মাঝে কোথাও একটা বেঁচে রইবে রাওয়ালপিন্ডির দ্বিতীয় টেস্টের স্কোরকার্ড। সেখানে লিটন দাসের নামের পাশে সেঞ্চুরি থাকবে, অর্ধশত রান দেখাবে মেহেদী হাসান মিরাজের নামের সাথে। তবে পরিস্থিতিটা কেউ হয়ত বলবে না। ওই সেঞ্চুরি আর হাফসেঞ্চুরির পেছনের গল্প হয়ত কেউ বলবে না।

পাকিস্তানের বিপক্ষের ঐতিহাসিক সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সেই সিরিজ জয়ের পথে দ্বিতীয় টেস্ট জয় পাওয়া নিয়ে ছিল সংশয়। যদিও মেহেদি হাসান মিরাজ প্রথম ইনিংসেই জয়ের পথটা সুগম করার কাজটা করেছিলেন। পাঁচ উইকেট বাগিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের। পিন্ডির পেস বান্ধব উইকেটে, অফস্পিনার মিরাজ ছড়ি ঘুরিয়ে গেছেন।

যদিও তারপর এসে যায় সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যেখান থেকেই বাংলাদেশ দল ফিনিক্স পাখি হয়েছে। মিরাজ আর লিটনের জুটি ভষ্ম হয়ে যাওয়া স্বপ্নকে দিয়েছিল নব জাগরণ। ২৬ রান তুলতেই বাংলাদেশের স্কোরবর্ডে নেই ৬ উইকেট। মাত্র ১২ রানের ব্যবধানে ব্যাটিং অর্ডারের অর্ধেকের বেশি প্যাভিলিয়নে ফেরত চলে গেছে। রীতিমত এক ধ্বংসস্তুপ।

যুদ্ধবিদ্ধস্ত একটা দেশের নিদারুণ মানসিক যন্ত্রনার সাথে কোন কিছুর তুলনা হয়না। তবে যুদ্ধক্ষেত্রের ধ্বংসাবশেষের সাথে তুলনা করা যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংকে। সেখান থেকে দায়িত্ব নিয়ে মহাকাব্য লেখার পথে ছুটলেন লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

এই দুইজনে মিলে তিলে তিলে গড়ে তুললেন বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড। সময়ের সাথে ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে গেলেন লিটন ও মিরাজ। ধ্বংসস্তুপ থেকেই জন্ম নিল এক নতুন সম্ভাবনা। ৭৮ রানে মিরাজ থামলেও, হাসান মাহমুদকে সঙ্গী বানিয়ে ১৩৮ অবধি হেটে গেলেন লিটন। ঠিক সেখানেই ম্যাচের মোমেন্টাম বাংলাদেশের হয়ে গেল।

আরও একবার লিটন ম্যাচের মোমেন্টাম বাংলাদেশের পক্ষে এনেছেন পাকিস্তান সফরে। সেটা প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে। আগ্রাসনের জবাব তিনি দিয়েছিলেন আগ্রাসন দিয়ে। ঝড়ো এক হাফসেঞ্চুরি করে তিনি একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন সেদিন- বাংলাদেশ দল সহজে নুইয়ে পড়বে না। সেখান থেকেও মোমেন্টাম বাংলাদেশের হল।

মিরাজ ও লিটনের আলাদা পারফরমেন্স বাংলাদেশের প্রাপ্তি। তাদের গড়া অনবদ্য, অবিশ্বাস্য ১৬৫ রানের জুটি বাংলাদশের প্রাপ্তি। ইতিহাস গড়া জয় নিয়ে পাকিস্তান সফর শেষ করা বাংলাদেশ তৃপ্তির ঢেঁকুর চাইলেই তুলতে পারে। তবে দৃপ্ত পায়ে গোটা দল যখন রাওয়ালপিন্ডিতে নেমে এলো ম্যাচ শেষে- তখনই বরং বোঝা শেষ, এই দলের ক্ষুধা মেটেনি বরং বেড়েছে অনেক।

Share via
Copy link