চ্যাম্পিয়ন লিটনের রিয়েলিটি চেক

বাস্তবতার এই ধাক্কাটা লিটনের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। লিটন এবার ঘুরে দাঁড়াবেন, কিন্তু তিনি যদি না পারেন, তবে আরও এক নক্ষত্র পতনের কাব্য রচিত হবে। 

ক্যারিয়ারের সম্ভবত সবচেয়ে নড়বড়ে অবস্থানে রয়েছেন লিটন দাস। তবে এমন পরিস্থিতিতেও মানসিকভাবে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ঠিক যেন চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার। কিন্তু পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর নয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাকে দলে নেওয়ার তীব্র আগ্রহ যেন নেই কোন ক্লাবের।

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের দলবদল শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দল চূড়ান্ত হয়নি লিটন দাসের। গেলবার আবাহনীর হয়ে খেলেছিলেন জাতীয় দলের এই তারকা ব্যাটার। সে দলেও এবার যাননি তিনি। মূলত আর্থিক অনটনে রয়েছে আবাহনী। এছাড়া প্রায় প্রতিটা ক্লাব থেকেই খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক বেশ কমিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে।

অধিকাংশ খেলোয়াড় কম পারিশ্রমিকের বিষয়টি মেনে নিয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন দলগুলোতে। কিন্তু লিটন নিজের পারিশ্রমিক কমানোর বিষয়ে ছিলেন অনড়। তিনি পারিশ্রমিক কমিয়ে খেলতে চান না। বাংলাদেশের ঘরোয়া সার্কিটে খেলা প্রতিটা খেলোয়াড়েরের আয়ের বড় উৎস এই ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ।

এই পারিশ্রমিকের উপর ভিত্তি করে সত্যিকার অর্থেই খেলোয়াড়দের সংসার চলে। এই পারিশ্রমিকের ছাড় দেওয়ার রীতি তৈরি হওয়ায়, একটা বাজে সংস্কৃতির সূত্রপাত ঘটেছে ঘরোয়া ক্রিকেটে। কিন্তু লিটন সেই ধারাতে যুক্ত হলেন না, হতে চাইলেন না। তিনি এমন নেতিবাচকতার পালে হাওয়া দিলেন না। অন্তত এই রেজিসটেন্স পরবর্তীতে দেশীয় খেলোয়াড়দের সহয়তা করবে।

এখানেই লিটনের মানসিকতার দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এখানেই লুকায়িত আছে লিটনের দুর্দশার চিত্রও। লিটনের ব্যাটে রান নেই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। সে কারণেই সম্ভবত তার প্রতি অনীহা বাকি ক্লাবদের।

নিজের চেনা রুপে থাকাকালীন লিটনকে নিয়ে রীতিমত কাড়াকাড়ি লেগে যাওয়ার কথা ঢাকার ক্লাবগুলোর। তার পারিশ্রমিক কমানোর আলোচনাও হয়ত কোন কোন ক্লাব করত না। কিন্ত এখন যখন লিটন রয়েছেন বিপাকে, তখন সেই পরিস্থিতিতে তাকে নিয়ে অনীহা। এটাই সম্ভবত লিটনকে দেখিয়ে দিচ্ছে মুদ্রার ওপরপীঠও।

পারফরমেন্স ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও উপলব্ধি করার কথা লিটনের। ক্রিকেটটা দিনশেষে পারফরমিং আর্ট। পারফরমেন্সের ভিত্তিতেই খেলোয়াড়দের পারিরশ্রমিক নির্ধারিত হয়, খেলোয়াড়দের চাহিদার সৃষ্টি হয়। লিটন সেই আকাঙ্ক্ষার অভাবটা স্পষ্টই অনুভব করতে পারছেন।

যদিও শোনা যাচ্ছে প্রিমিয়ার ডিভিশনের নতুন যুক্ত হওয়া এক ক্লাবে যেতে পারেন লিটন দাস। তবে বাস্তবতার এই ধাক্কাটা লিটনের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। লিটন এবার ঘুরে দাঁড়াবেন, তেমনটাই প্রত্যাশা সকলের। কিন্তু তিনি যদি না পারেন, তবে আরও এক নক্ষত্র পতনের কাব্য রচিত হবে।

Share via
Copy link