‘ভালো খেলার জন্য অনুশীলন চালিয়ে যাব।’ পুরষ্কার জেতার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমন দৃঢ় প্রত্যয়ী মনোভাবই ব্যক্ত করেছেন তিনি। তাইতো বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জেতার পরদিনই মিরপুর ইনডোর মাঠে হাজির লিটন কুমার দাস। কথা আর কাজের মেলবন্ধন ঘটানোর প্রয়াশ।
স্বপ্নের মত একটা বছর কাটিয়েছেন তিনি ২০২২ সালে। নিজের খারাপ সময়টা পেছনের ফেলে দূর্বার গতিতে এগিয়ে জাচ্ছিলেন লিটন দাস। দেশের ক্রিকেটে বেশ সম্ভাবনার মশাল জ্বালিয়েই তার আগমন। সেই মশালে যেন আরও বেশ খানিকটা জ্বালানি সরবরাহ করেন তিনি ২০২২ সালে।
তিন ফরম্যাট মিলিয়ে রান করেছেন প্রায় হাজার দুই। সেঞ্চুরি করেছেন তিনটি। হাফ সেঞ্চুরি ১৩টি। ঠিক কতটা ধারাবাহিক ছিলেন তিনি, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দূর্দান্ত সেই সময়ের জন্যে পুরষ্কারও পেয়েছেন তিনি। বেশকিছু সংগঠন তাকে সম্মাননা জানিয়েছে তার দূর্দান্ত পারফরমেন্সের জন্যে। সেই সম্মাননাগুলোও বেশ উৎফুল্ল করেছে তাকে।
কুল-বিএসপিএ বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ লিটন বলেন, ‘প্রতিবছর কষ্ট করি যেন পারফরম করতে পারি, দেশকে ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে পারি। সেখান থেকে যদি কোন পুরষ্কার পাই সেটা একজন খেলোয়াড়ের জন্যে অনেক বড় পাওয়া। এই জিনিষটাই আমাকে পরবর্তীতে আগ্রহ জাগাবে যেন আমি আবার ভাল কিছু করতে পারি।’
২০২২ সালে দুরন্ত লিটনের বছর ঘুরতেই যেন আবারও মুদ্রার অপরপিঠটি সামনে চলে এলো। ধারাবাহিকতার অভাবটা তাকে আবারও ঘিরে ধরেছে। চলতি বছরের মধ্যভাগ অবধি তিনি কেবল চারটি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। সেসব কেবলই সাদা বলে। তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারটা এ বছর ছুঁয়ে দেখতে পারেননি। এমনকি লাল বলে নেই কোন অর্ধশতক।
যদিও এই বছর একটিমাত্র টেস্টই খেলেছেন লিটন। সামনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের আগের তাই প্রস্তুতি সেরে নিতেই মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে হাজির লিটন কুমার দাস। গ্রীষ্মে প্রচণ্ড রোদে শুকিয়ে নিয়েছেন নিজের ক্রিকেটীয় সরঞ্জাম। উত্তপ্ত গ্লাভস-হেলমেট সাথে নিয়ে তিনি চলে গেছেন ইনডোরে। সেখানেই সবার আড়ালে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন লিটন।
নিজের খারাপ সময় নিয়ে লিটন বলেছেন, ‘আপনি প্রতিদিন আপনার খেলার সেরা ফর্মে থাকতে পারবেন না। এটি অসম্ভব। একদিন আপনি ভালো খেলবেন, অন্যদিন আপনার খারাপ দিন যেতে পারে। তাই আমি চিন্তিত নই।’
লিটন দাস চিন্তার করতে চাইবেনই বা কেন! তিনি তো জানেন এই অধারাবাহিকতার টোটকা। একটা সময়ে সম্ভাবনা ছাপিয়ে লিটনকে সহ্য করতে হয়েছে সমালোচনা, নিন্দা আর ট্রল। সেই সময়টায় লিটন নিজেকে আরও খানিকটা ভেঙেছেন। যেন নতুন করে গড়তে পারেন। সে সময়ে নিজের ব্যাটিং মসৃণ করতে পরিশ্রম চালিয়ে গেছেন। তিনি জানেন সবকিছুর একটা শেষ আছে। সেই শেষটায় পৌঁছানোর পথটা একটু কঠিন।
লিটন অন্তত আস্থা করবার মত নিজের সেই জায়গাটি করে নিয়েছেন জাতীয় দলে। তার দূর্দান্ত সব ইনিংস নিশ্চয়ই একেবারে আড়ালে চলে যায়নি। উত্থান-পতনের মিশ্রণেই তো খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ার এগিয়ে চলে। হতাশ হওয়া নেহায়েত বোকামি। আর পরিশ্রম ছেড়ে দেওয়া সবচেয়ে বড় ভুল। লিটন দু’টোর কোনটিতেই নিজের সময় নষ্ট করছেন না। তিনি বরং নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার মিশনে দিচ্ছেন মনোযোগ।