লালের লজ্জা, লালের জয়যাত্রা

২৪ অক্টোবর ২০২১। দিনটা মনে রাখার দিন। অন্তত ক্রীড়াপ্রমীদের মনে দিনটা গেঁথে রইবে বহুকাল। তা সুনিশ্চিত। ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ। বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদের মধ্যকার এল ক্ল্যাসিকো। তারই সাথে ম্যানচেস্টার ইউনাটেডের সাথে লিভারপুলের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচ। ক্রীড়াপ্রেমী দর্শকদের রবিবারটা সত্যিকার অর্থেই কেঁটেছে ‘সুপার সানডে’ রুপে।

তবে নি:সন্দেহে রাতটাকে ভুলে যেতে চাইবে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবলের দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। নিজেদের ঘরের মাঠে চিরপ্রতিদ্বন্দীর বিপক্ষের লজ্জার হারের দিন কে ভুলে যাওয়াটাই যেন শ্রেয়। কষ্ট খানিকটা যেন একটু লাঘব পাওয়ার উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে দিনটাকে ভুলে থাকলে।

উত্তেজনার ম্যাচ, উৎকণ্ঠার ম্যাচ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দুই চির প্রতিদ্বন্দী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও লিভারপুল কিংবা রেড ডেভিল বনাম অল রেডের মধ্যকার ম্যাচ। ঘরের মাঠে স্বভাবতই ফেবারিটের তকমা এঁটে যায় যেকোন দলের।

তবে ম্যানচেস্টারের গত কয়েকটি হোম ম্যাচের পরিসংখ্যান অন্তত তাঁদেরকে ফেভারিট তকমা দেওয়ার পক্ষে কথা বলে না। শেষ পাঁচ হোম ম্যাচে রেড ডেভিলরা ওয়েস্ট হাম ও অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে হেরেছে দুই ম্যাচ, ড্র করেছে এভারটনের বিপক্ষে এবং কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে ভিয়ারিয়াল ও আটলান্টার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে।

তবুও ভক্ত-সমর্থকেরা মাঠে এসেছিলেন প্রিয় দলে খেলা দেখতে। তাঁর স্বপক্ষে গগন বিদারী চিৎকারে গলা ফাঁটিয়ে সমর্থন করতে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, সম্মান-মর্যাদার ম্যাচে দলকে যে জেতাতেই হবে। অতিথী দল লিভারপুল। গত পাঁচ ম্যাচে হারেনি একটি ম্যাচও। জিতেছে তিনটি ম্যাচ। তাঁর মধ্যে দুইটিতে রয়েছে পাঁচ গোল করে। উড়তে থাকা লিভারপুলের পাইলট মোহাম্মদ সালাহ।

শেষ ম্যাচে স্প্যানিশ পরাশক্তি অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিভারপুল হারিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো করেই ৩-২ ব্যবধানে, যেমটা রেড ডেভিলরা হারিয়েছিল আটলান্টাকে। দুই দলের আত্মবিশ্বাসের ফাঁরাক ছিল নিশ্চয়ই কিংবা ফাঁরাক ছিল দুই দলের রক্ষণে। গোলের মাঝারি বন্যায় থিয়েটার অব ড্রিমকে ভাসিয়ে দিয়ে যায় সফরকারী অলরেডরা।

৫-০ গোলের বিশাল জয়ে, টেবিলের দ্বিতীয় স্থানটায় শক্তপোক্ত এক অবস্থান নিতে পেরেছে ইউর্গেন ক্লপের শীর্ষরা। এদিনের গোলের খাতার শুভসূচনা করেন লিভারপুলের আফ্রিকান মিডফিল্ডার নেবি কেইতা। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই রেড ডেভিল রক্ষণে ভাঙন ধরান কেইতা। এর আট মিনিট বাদে দলের আরেক ফরোয়ার্ড ডিয়েগো জটা ব্যবধান বাড়িয়ে নেন বল জালে জড়িয়ে। তারপর যেন শুধুই মোহাম্মদ সালাহর কীর্তি।

এই মৌসুমে অদম্য, দুর্দমনীয় সালাহকে আটকাবার কোন উপায় যেন জানা ছিল না ম্যানচেস্টার কোচ ওলে গুনার সোলশায়ারের। সোলশায়ারের কাছে বোধ হয় কোন ধরণের আক্রমণ প্রতিহত করবার পরিকল্পনার অভাব রয়েছে কিংবা হ্যারি মাগুয়ের এবং ভিক্টর লিন্ডেলফ ভুলে গেছেন রক্ষণ কর্তব্য।

সে যাই হোক, তাঁদেরকে বোকা বানিয়ে হোক কিংবা পরিকল্পনা চুরমার করে হোক ম্যাচের ৩৮-৫০ মিনিটের মধ্যে মোহাম্মদ সালাহ করেন তিন তিনটি গোল। সবগুলো গোলই আসে ওপেনপ্লে থেকে। এতেই রেড ডেভিল রক্ষণের দূর্বলতা যেন স্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়।

যদি ধরে নেওয়া হয় ম্যানচেস্টার রক্ষণে নেই কোন দূর্বলতা তবুও এটা খানিক অনুমেয়ই ছিল যে এই রক্ষণের পতনে থাকবে সালাহর অবদান। লিভারপুলের হয়ে খেলা টানা দশ ম্যাচেই প্রতিপক্ষের জালের সন্ধান পাওয়া সালাহ নিশ্চয়ই তাঁর এই অনবদ্য কৃতীত্বের ইতি টেনে নিতে।

অপরদিকে পুরো ম্যাচে মলিন ছিলেন ম্যানচেস্টার তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তিনি শুধু মলিন নয় ছিলেন নিষ্প্রভ। তবে দর্শকদের অবাক করেছে তাঁর অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ। খেলার নিয়ন্ত্রণ হারানোর সাথে সাথে রোনালদো হারান তাঁর মেজাজ। লিভারপুলের বদলি খেলোয়াড় কার্টিস জোনসের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার রোনালদোর প্রচেষ্টা ছিল প্রচণ্ডরকম দৃষ্টিকটু।

টেম্পারমেন্ট হারিয়েছিল গোটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে শুরু করে দর্শকরাও। এমন হওয়াটাও ভীষণরকম স্বভাবিক। ঘরের মাঠে এমন হার অপমানজনক। টেম্পারমেন্ট হারিয়ে গুরুতর সব ফাউল করতে শুরু করে রেড ডেভিল খেলোয়াড়েরা। বিনিময়ে তাঁদের কপালে জোটে ছয়টি হলুদ ও একটি লাল কার্ড। মারাত্মক ফাউলের জন্যে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন রেড ডেভিল মিডফিল্ডার পল পগবা।

শেষমেশ পাঁচ গোলেই সন্তুষ্ট থাকে লিভারপুল। অপরদিকে আর গোল হজম করতে হয়নি দেখে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খেলোয়াড়দের খুব সম্ভবত খানিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ম্লান হয়েছে হতাশার দীর্ঘশ্বাসে। এই পরাজয়ে লিগ শিরোপা জয়ের আশা যেন আরো একটু অস্পষ্ট হয়ে গেলো রেড ডেভিলদের। সাথে বেজে গেল ওলে গুনার সোলশায়ারের বিদায় ঘন্টা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link