দ্য চ্যাম্পিয়ন’স সেলফি, ভগ্ন রাজত্বের পুনরুত্থান

সেখান থেকে আর্নে স্লট দলটাকে গোছালেন। নতুন দর্শন ইঞ্জেক্ট করলেন। আর তাতে করে বদলে যাওয়ার দারুণ রসদ নিয়ে হাজির হয়েছে লিভারপুল।

গোল করলেন মোহাম্মদ সালাহ। ছুটে গিয়ে এক দর্শকের কাছ থেকে ফোন নিলে তুললেন সেলফি, ‘দ্য চ্যাম্পিয়ন’স সেলফি’। আনন্দের হিল্লোলে মুখরিত অ্যান্ডফিল্ড। শিরোপা যে এসে গেছে। তারা যে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন। বছর চারেক ধরে চলমান অপেক্ষার অবসান। চার ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল।

‘ইউ ইউল নেভার ওয়াক অ্যালন’- অ্যানফিল্ডে এসে এমন বার্তাই হয়ত দিয়েছিলেন আর্নে স্লট। ভরসা দিয়েছিলেন মুষড়ে পড়া এক জনগোষ্ঠীকে। ইয়ুর্গেন ক্লপের ফেলে যাওয়া এক বিধ্বস্ত রাজত্বের মেরামতের দায়িত্ব নিজের কাজে তুলে নিলেন। তার সেনাপতি হয়ে সামনে এলেন ম্যাক অ্যালিস্টার।

তাদের জাদুকরি ছোঁয়ায় ভঙ্গুর একটা দল যেন প্রাণ ফিরে পায়। চলতি মৌসুমটা কেটে যাবে ক্লপের শোকে, জেতা হবে না কোন শিরোপা, ট্রানজিশনেই কেটে  যাবে পুরোটা সময়। কিন্তু না, আর্নে স্লটের দল দর্শকদের হতাশার নোনা জলে ডোবালেন না। বরং তিনি চার ম্যাচ বাকি থাকতেই জেতালেন প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা।

 

টটেনহ্যামকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেছে অলরেডরা। অথচ পুরোটা সময়জুড়ে কাঁধের উপর নিঃশ্বাস ফেলে যাচ্ছিল উড়ন্ত আর্সেনাল। কিন্তু হোচট খাওয়া তাদের চিরায়ত অভ্যাস। আর তাতেই শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পান আর্নে স্লট ও তার দল।

অবশ্য এরই মাঝে দু’খানা শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার দুঃখ চেপে বসেছিল অলরেডদের হৃদয়ে। নতুন ফরম্যাটের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারা দাপট দেখিয়েছে প্রথম রাউন্ডে। সবচেয়ে বেশি জয়। ২১ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে থেকে নিশ্চিত করেছিল পরের রাউন্ড।

কিন্তু এক অদম্য প্যারিস সেইন্ট জার্মেই তাদের হতাশার মায়াজালে আটকে দিয়েছে। এরপর আবার লিগ কাপের ফাইনালে তাদেরকে হতম্ভব করে দিয়ে শিরোপা উৎসবে মেতে ওঠে নিউক্যাসেল ইউনাইটেড। অলরেডদের যক্ষের ধন হিসেবে তখন স্রেফ বাকি ছিল প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা। সেটা অন্তত হাতছাড়া করতে চায়নি মোহাম্মদ সালাহরা।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের সাথে পয়েন্ট ব্যবধান পাক্কা ১৫ পয়েন্ট। হাতে থাকা চার ম্যাচ হেরে গেলেও শিরোপা বঞ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই লিভারপুলের সামনে। এই যাত্রায় যতটা না আর্নে স্লটের কৃতীত্ব প্রাপ্য, ঠিক ততটাই প্রশংসার দাবিদার ম্যাক অ্যালিস্টারও।

‘দ্য মিডফিল্ড মায়েস্ট্রো’- লিভারপুলের মধ্যমাঠের নিরব কারিগর। কখনো আবার দলের প্রয়োজনে হয়েছেন প্রবল সরব। বিশাল এক বাদক দলের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে বেশ সফল ম্যাক অ্যালিস্টার। মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খেলা পরিচালনা করেছে, আক্রমণভাগে বলের জোগান দিয়েছেন, তৈরি করেছেন প্রতিপক্ষের জন্যে হুমকি। এসব কিছুই মিসিং ছিল গেল মৌসুমে।

ক্লপের বিদায় বেলায় স্রেফ লিগ কাপটা জুটেছিল কপালে। ক্লপের অবশ্য করারও কিছু ছিল না তেমন। রক্ষণের সেনানী ভার্জিল ভ্যান ডাইক ইনজুরিতে ছিলেন মাঠে বাইরে, একই দশা গোলবারের অতন্দ্র প্রহরী অ্যালিসন বেকারেরও।

সেখান থেকে আর্নে স্লট দলটাকে গোছালেন। নতুন দর্শন ইঞ্জেক্ট করলেন। আর তাতে করে বদলে যাওয়ার দারুণ রসদ নিয়ে হাজির হয়েছে লিভারপুল। এবার প্রিমিয়ার লিগ নিয়েই সন্তুষ্ট লিভারপুল নিশ্চয়ই পরের মৌসুমে জিততে চাইবে সবকিছু। দলটার রসায়নও যে একেবারে দারুণ।

Share via
Copy link