লিভারপুলের নীরবতা ও অর্ধেক গ্লাস

গরমের গরম ট্রান্সফার মার্কেটে অর্থের ছড়াছড়ি। ছিল খেলোয়াড় নিয়ে কাড়াকাড়ি। প্রতিটা দলই চেয়েছে এবারের দলবলের, দলের ঘাটতি ঘুচিয়ে নিতে। ব্যতিক্রম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লিভারপুল। মাত্র একটি খেলোয়াড়কেই কেবল তারা দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়েছে।

ইব্রাহিমা কোনাটে; লিভারপুলের একমাত্র সাইনিং। ২২ বছর বয়সী এই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারকে দলে ভেড়াতে অল রেডরা খরচ করেছে ৩৬ মিলিয়ন পাউন্ড। মাত্র ২২ বছর বয়সী একজন খেলোয়াড়ের জন্যে এত অর্থ ব্যয় যথার্থ কি না সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

তবে আলোচনার বিষয়- এছাড়া আর কোন ধরনের দলবদলের হাকডাকে অংশ নেয় নি লিভারপুল। ডিয়ান লভরেনে অভাবটা তড়িঘড়ি করে ঘুচাতেই হয়ত অন্যদিকে নজর দিতে ভুলে গেছেন ক্লপ।

এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি শঙ্কার কারণ লিভারপুলের অ্যাটাকিং জোন। ৪ জন ভাল মানের আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড় রয়েছে বর্তামানে অল রেড শিবিরে। দুশ্চিন্তার বিষয় মোহামেদ সালাহ, সাদিও মানে, রবার্তো ফিরমিনো, জটা এদের যোগ্য বা সমতুল্য বিকল্পের ঘাটতি রয়েছে ক্লপের এবারের দলে। এদের মধ্যে সালাহ, ফিরমিনো, মানে এদের বয়স এ বছর ত্রিশ হবে। বয়সের ভারে যেকোন একজনের ইনজুরিতে একাদশ সাজাতে বেগ পোহাতে হতে পারে জার্মান কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে।

বিকল্প হিসেবে রয়েছেন শুধু ডিভোক ওরিগি আর তাকুমি মিনামিনো৷ সালাহ, মানে, ফিরমিনো এদের বিকল্প হিসেবে লিভারপুলের হয়ে ম্যাচ জিতিয়ে নিয়ে আসার মতো সামর্থ্য ওরিগি, মিনামিনোদের রয়েছে কিনা সেটা বড় রকমের চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে সমর্থকদের কপালে।

আসছে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য আফ্রিকান ন্যাশনস কাপের জন্য অনুপস্থিত থাকবেন সালাহ, ও সাদিও মানে। তখন দলে থাকা ফিরমিনো কিংবা জটা ইনজুরি আক্রান্ত হলে ক্লপ কি করবেন তা এখন দেখবার বিষয়।

অন্যদিকে গত দুই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের ৭৬ ম্যাচ থেকে লিভারপুলের হয়ে ৭৫ ম্যাচে অংশগ্রহণ করা গিনি উইনালডামকে ফ্রি-তে ছেড়ে দিয়েছে লিভারপুল। তার মতো অভিজ্ঞ এবং এ পরিমাণ সার্ভিস দেওয়ার মতো কাওকেই দলে ভেড়াতে পারেনি অল রেডরা। মিডফিল্ডেও ঘাটতির এক সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঘাটতি পূরণে ফ্যাবিনহো, থিয়াগো, কেইতা, মিনলারের উপর ভরসা করতেই পারে অল রেড সমর্থকরা।

তবে আশার বিষয় দলবদলে মনোযোগ না দিলেও লিভারপুল ম্যানেজমেন্ট প্রশংসনীয় কাজ করেছে দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের সাথে চুক্তি বাড়িয়ে। হেন্ডারসন, ভার্গিল ভ্যান ডাইক, ফ্যাবিনহো, আলেক্সান্ডার আরনল্ড, অ্যালিসনের মতো অবিচ্ছেদ্য খেলোয়াড়দের সাথে চুক্তি নবায়ন করেছে অল রেড় কর্মকর্তারা।

যেহেতু ইয়ুর্গেন ক্লপ দলবদলে আগ্রহ দেখাননি, সেহেতু তিনি হয়ত ভরসা রাখছেন তার এই দলের উপরই। তার কাছে বিকল্প কোন পরিকল্পনা রয়েছে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারের। লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ, প্রিমিয়ার লিগ জেতা এই কোচের উপর খানিকটা ভরসা করতেই পারে অ্যানফিল্ডে আসা কিংবা টিভি সেটের পর্দায় বসে থাকা দর্শক, সমর্থকেরা।

সাদা চোখে লিভারপুলের দলটা বেশ শক্তিশালী। তবে, এখানে বিন্দুমাত্র ভূুলের সুযোগ নেই, সেটা পেন্ডুলামের মত দুলছে। আর দুলতে দুলতে সেটা যতক্ষণ গত মৌসুমের মত তাঁদের পক্ষে থাকছে – ততক্ষণ কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এদিক সেদিক হলেই বিপদ – মুহূর্তের মধ্যে শিরোপার দৌঁড় থেকে ছিটকে যেতে পারে লিভারপুল।

– ফোরফোরটু’র ছায়া অবলম্বনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link