লোকেশ রাহুল, চরিত্র বদলে ইনিংস গড়েন তিনি

বিশ্বকাপ তখনও শুরু হয়নি। ভারতের ক্রিকেট পাড়ায় আলোচনা, সমালোচনা কিংবা মাথাব্যথার নাম মিডল অর্ডার সমস্যা। ২০১৯ বিশ্বকাপে উড়ন্ত ভারতের পথযাত্রা সেমিতে আটকে দিয়েছিল এই মিডল অর্ডার ব্যর্থতাই। শেষ ৪ বছরেও সেই ব্যর্থতাকে পুরোপুরি মুছে ফেলা গিয়েছিল, তেমনটি নয়।

বিশ্বকাপ শুরুর আগে অধিনায়ক রোহিত শর্মা তো এক রকম স্বীকারই করে নিলেন, যুবরাজ সিংয়ের পর তাঁর জায়গায় যে যোগ্য উত্তরসূরি হতে পারেননি কেউ। তবে এশিয়া কাপ থেকে শুরু করে বিশ্বকাপের মঞ্চ পর্যন্ত ভারতের সেই মিডল অর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তার মেঘ যেন এক নিমিষেই সরিয়ে দিচ্ছেন লোকেশ রাহুল।

২০১৯ বিশ্বকাপেও একটি সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন লোকেশ। তবে সেই সেঞ্চুরিটি এসেছিল ওপেনিংয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে। ৪ বছর বাদে, এবারের বিশ্বকাপেও সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন লোকেশ রাহুল। তবে এবার তিনি তিন অঙ্কের দেখা পেলেন একজন মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবে। যে যুবরাজ সিংয়ের যোগ্য উত্তরসূরি নিয়ে এতো চর্চা, সেই যুবরাজের পথ অনুসরণ করেই ২০১১ বিশ্বকাপের পর আবারো পাঁচ নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করলেন কোনো ভারতীয় ব্যাটার।

ডাচদের বিপক্ষে লোকেশ রাহুল সেঞ্চুরি পেলেন মাত্র ৬২ বলে। যা এখন ভারতীয় ব্যাটার হিসেবে বিশ্বকাপের মঞ্চে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। অথচ এই লোকেশ রাহুলই ওয়ানডে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন একজন ওপেনার হিসেবে। অভিষেকটাই রাঙিয়েছিলেন শতক হাঁকিয়ে। এরপর ওপেনিংয়ে নেমে আরো দুটি সেঞ্চুরি করেছেন রাহুল। কিন্তু দলের প্রয়োজনে সেই প্রিয় পজিশনটাই তাঁকে ছেড়ে আসতে হয়েছে।

অবশ্য ওপেনিং ছেড়ে মিডল অর্ডারে নেমে লোকেশ রাহুল নিজের ব্যাটিংয়ে যেমন উন্নতি ঘটেছে, তেমনি ভারতের মিডল অর্ডার নিয়ে বহুদিনের সমস্যাও ঘুচেছে। পুরোদস্তুর মিডল অর্ডার ব্যাটাররা যে চাওয়া পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে ওপেনিং থেকে চার পাঁচে নেমে এসে ভারতের চাওয়াটা দারুণ ভাবেই মেটাচ্ছেন লোকেশ রাহুল।

রোহিত-গিলের ওপেনিং জুটি। তিনে কোহলি। চারে কিংবা পাঁচে কে? বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগ অবধি ভারতের চিন্তাদায়ক ব্যাপার ছিল ঐ দুটি জায়গা নিয়েই। তবে বিশ্বকাপে এসেই যেন সব চিন্তা নিমেষে উবে গেল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে আজ চার ও পাঁচে নামা আইয়ার, লোকেশ-দুজনই সেঞ্চুরি পেয়েছেন। আর তাদের ঝড়ো ২০৮ রানের জুটিতেই ৪১০ রানের রানপাহাড়ে বসেছে ভারত।

ইনজুরির কারণে লোকেশ রাহুল দলের বাইরে ছিলেন বেশ কয়েক মাস ধরেই। বিশ্বকাপ ঘনিয়ে আসতে লোকেশ স্কোয়াডে থাকবেন কিনা, সেই শঙ্কাও ছিল প্রবলভাবেই। তবে নিজের প্রত্যাবর্তনটা রাঙিয়েছিলেন এশিয়া কাপের মঞ্চে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ক্রিকেট ফিরেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। আর এর পর থেকেই ভারতীয় মিডল অর্ডারে প্রাণ দিতে শুরু করেন লোকেশ। ঐ ম্যাচের পর থেকে তিনি ব্যাটিং করেছেন ৭২.৪৪ গড়ে। আর এ সময়কালে ১৪ ম্যাচের ৫ টিতেই তিনি পেরিয়েছেন পঞ্চাশ। যার মধ্যে দুটি সেঞ্চুরিও ছিল।

ওপেনিংয়ে লোকেশ রাহুলের ব্যাটিং গড় চল্লিশ পেরিয়ে ৪৩.৫৭। তবে ওপেনার লোকেশ রাহুল যখন মিডল অর্ডার ব্যাটার হয়ে উঠলেন, তখন গড় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮.৭৮-এ। চার নম্বরে তিনি ৬০.১৩ ব্যাটিং গড়ে ব্যাট করেছেন। আর ৫ নম্বরে ব্যাট করেছেন প্রায় ৫৫ গড়ে। তবে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি রান তিনি পেয়েছেন এই পজিশনে ব্যাটিং করেই।

ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, ওপেনার হিসেবে রূপ বদলে মিডল অর্ডার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়াতেই কতটা বদলে গেছেন লোকেশ রাহুল। তবে এ সময়ে শুধু লোকেশই বদলে যাননি, বদলে গিয়েছে ভারতের মিডল অর্ডারের চেহারাও। ব্যাটিং অর্ডারে যেন সকল চিন্তা সরিয়ে ভারত এখন আকছে পূর্ণতাঁর চিত্র। যার নেপথ্যের নায়ক হচ্ছেন লোকেশ রাহুল।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link