সোনা খুঁজতে হারানো হীরের আংটি

কেকেআর আবার ফিরবে পুরোনো ছক। রাহানে ফিরবেন নেতৃত্বে, আইয়ারও দলে থাকবেন। নারাইন আবার হয়ে যাবেন সেই চেনা অলরাউন্ডার। তবু কে না জানে— ‘সেই দিন’-এর নারাইন আরও একবার অন্তত ভাবতে বাধ্য করবেন।

মুখচ্ছবি দেখে মনের আয়না আঁকা যায় না— এ তো চিরন্তন সত্য। কিন্তু কে জানত, কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে বছর ১৪ পেরুনো সুনীল নারাইনের জীবনে এই আপ্তবাক্য এমন স্পষ্ট করে ধরা দেবে?

চুপচাপ, মুখচাওয়া, অনুভবহীন— এমনই এক ছবি যেন সময়ের পাতায় আঁকা নারিনের। তিনি উইকেট পান, মন্থর পায়ে ফেরেন। মার খান, একই ছন্দে হাঁটেন। উৎসবে তিনি নেই, বিফলে তিনি নেই। নাইট ভক্তদের ভাষায়, ‘কে সবচেয়ে কম হেসেছেন— গম্ভীর না নারিন— এ নিয়ে আলাদা প্রতিযোগিতা হতেই পারে!’

তবে সত্যি বলতে, এই সুনীল নারাইন এক বিস্ময়পুরুষ। বিশেষ করে কেকেআরে। যে মানুষটাকে দেখলে মনে হয়, চিরস্থায়ী গাম্ভীর্যের মূর্ত প্রতীক, সেই তিনিই কী দারুণ নাচেন, হুল্লোড় করেন, রসিকতা ভালোবাসেন! ক্রিকেট নিয়ে তাঁর জ্ঞান, স্মৃতি আর বোধ— এ যেন একটা সচল তথ্যভাণ্ডার!

শোনা যয়, ইডেনে গুজরাটের বিরুদ্ধে শুভমান গিল হাফ সেঞ্চুরি করার পর নিজেও ভুলে গিয়েছিলেন এটা তাঁর কত নম্বর ইনিংস। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নারাইন ঠাস করে বলে দেন সঠিক উত্তর! এমনই তাঁর স্মৃতিশক্তি, এমনই তাঁর খেলার প্রতি নিষ্ঠা।

তবু, মানুষ তাঁকে চিনল না। ‘পারসেপশন’— শব্দটা যেন অভিশাপ হয়ে এল তাঁর জীবনে। সবাই ধরে নিয়েছে, তিনি এক নি:শব্দ সৈনিক, কথাহীন, অনুভবহীন। নতুন ক্রিকেটাররাও দ্বিধায় থাকে— নারিনকে গিয়ে কিছু বলা চলবে তো?

আসলে মানুষ জানে না, নারিনের মাঠে-না-উৎসব করার পেছনেও একটা গল্প আছে। তাঁর বাবা নাকি ছোটবেলায় বলেছিলেন, ‘আজ যার উইকেট নিয়ে উল্লাস করছো, কাল সে যদি তোমায় পালটা মারে, তখন কী করবে?’ সেই শিক্ষা হৃদয়ে তুলে নিয়েছেন নারিন। কেউ জানতে চাইলে বলেন— ‘শেষ ম্যাচে উদযাপন করবো কী? পরে অবসরের কমেন্ট্রি বক্সে যদি আবার দেখা হয়ে যায়, তখন পাল্টা আক্রমণ হবে না – সেই গ্যারান্টি আছে?’

এই ব্যতিক্রমী মনন, এই আত্মস্থতা, হয়তো অনেকের চোখেই পড়ে না। তাই হয়তো যখন গম্ভীরের পর অধিনায়ক খোঁজা হচ্ছিল নাইট শিবিরে, কেউ ভাবেনি নারাইনকে নিয়ে। অথচ নাইটদের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে নারাইন তো নেতৃত্বই দিয়েছেন— আবুধাবি নাইট রাইডার্সে ক্যাপ্টেন তিনি!

দিন কয়েক আগে দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলায় যা ঘটল, সেটাই যেন শেষপর্যন্ত নারাইনের জবাব। অধিনায়ক চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন, সহ-অধিনায়ক ছিলেন না। সেই সময়, মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে ভয়াল হয়ে উঠলেন সুনীল নারিন। বল হাতে ঘূর্ণিতে ছিন্নভিন্ন করে দিলেন প্রতিপক্ষকে, ব্যাট হাতে রানের ঝড়, এমনকি ফিল্ডিংয়েও বাজিমাত। আর অধিনায়কত্বে তুখোড় – ফিল্ড প্লেসমেন্ট, বোলিং পরিবর্তন— সবই যেন কাব্যের মত সাজানো!

কেকেআর আবার ফিরবে পুরোনো ছক। রাহানে ফিরবেন নেতৃত্বে, আইয়ারও দলে থাকবেন। নারাইন আবার হয়ে যাবেন সেই চেনা অলরাউন্ডার। তবু কে না জানে— ‘সেই দিন’-এর নারাইন আরও একবার অন্তত ভাবতে বাধ্য করবেন।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link