তিনি জানেন, দলের কম্বিনেশনের জন্যে তার সুযোগ হয় না। তিনি অকপটে স্বীকার করেন সেটা। অভিযোগ নেই শেখ মেহেদীর। বরং যখনই সুযোগ পান, তখনই নিজের সামর্থ্যের রঙিন চিত্র এঁকে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালান। তেমনটিই করলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে।
বল হাতে ৮টি উইকেট নিয়েছেন। প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একাই বাগিয়েছিলেন চারটি উইকেট। তার সেই চার উইকেট শিকার বাংলাদেশের পক্ষে মোমেন্টাম এনে দেয়। স্বল্প সংগ্রহ থাকার পরও বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে বিজয় লাভ করে। সেই ধারাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইট ওয়াশ করেছে টাইগাররা।
তার থেকে চমকপ্রদ বিষয়, মেহেদীর বৈচিত্র্য। মেহেদী জানেন সোজাসাপ্টা অফস্পিন করে বর্তমান সময়ে ক্রিকেটে টিকে থাকা মুশকিল। তাইতো নিজের বোলিংয়ে এনেছেন নজরকাড়া বিকল্প। ইদানিং লেগব্রেক বোলিংও রপ্ত করেছেন এই ডানহাতি স্পিনার। বলের উপর রয়েছে তার শক্ত নিয়ন্ত্রণ।
তাইতো লাইনলেন্থে চাইলেই পরিবর্তন আনতে পারেন তিনি। এমনকি টি-টোয়েন্টি সিরিজে টানা তিনবার তিনি বোকা বানিয়েছেন নিকোলাস পুরানের মত ব্যাটারকে। অভিজ্ঞতার বিচারে পুরানের ধারেকাছেও নেই মেহেদী। বিশ্বব্যাপী ফ্রাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে একপ্রকার হটকেক নিকোলাস পুরান।
এমন একজন ব্যাটার বারংবার অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন শেখ মেহেদীর সামনে। সিরিজের শেষ ম্যাচে পুরানকে বোল্ড আউট করেছেন মেহেদী। এর আগে দ্বিতীয় ম্যাচে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন পুরান। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে স্ট্যাম্পিং আউট হয়েছেন পুরান। তাকে রীতিমত নাচিয়ে ছেড়েছেন মেহেদী, বানিয়েছেন নিজের ‘বানি’।
বাংলাদেশ দলের বোলিং ইউনিটে রয়েছে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি রয়েছে কার্যকর সব বিকল্প। এমন একটা বোলিং ইউনিটে জায়গা করতে যে বাড়তি কিছু করতে হবে, তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হয় না। মেহেদী কেউ বলে দেয়নি। তিনি বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। সে কারণেই নিজের অস্ত্রাগারে যুক্ত করছেন নতুন নতুন অস্ত্র।
এমন উপলব্ধি বাকিদেরও হওয়া প্রয়োজন। তবেই তো আসবে সুদিন। বাংলাদেশ ক্রিকেটও স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাবে শিখরে। এই যে নিজের শক্তি বাড়ানোর একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলেন শেখ মেহেদী, সে জন্যে নিশ্চয়ই তাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।
এছাড়া বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের বোঝা উচিত, মেহেদী ব্যাটিং অলরাউন্ডার নন। তিনি বোলিংটা দূর্দান্তভাবে করতে পারেন, আর ব্যাটিংটা করতে জানেন। সে অনুযায়ী দলের পরিকল্পনা সাজানো উচিত। অযথাই তাকে প্রত্যাশার চাপে ফেলা সমীচিন হবে না। তেমনটি ঘটলে হতে পারে হিতে-বিপরীত।