আড়ালে থাকা প্রদীপের আলো

চোখের আড়াল হওয়া মানেই বোধ হয় মনের আড়াল হওয়া। অথবা আলোচনার বাইরে চলে যাওয়া। যেমন মেহেদী হাসানের কথাই ধরুণ। তরুণ ক্রিকেটার। কার্য্যকর অলরাউন্ডার। তিনি কেবল বাংলাদেশের হয়ে খেলেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নেই, তিনিও নেই আলোচনায়। প্রতিভাবান খেলোয়াড় তবুও রয়ে যান আড়ালে।

মেহেদী হাসান, ‘পিঞ্চ হিটার’ নামক একটা তকমা তিনি জুড়ে নিয়েছেন। আবার আমরা জুড়ে দিয়েছি সেটাও বলা যায়। মাঠের ফাঁকা জায়গার পূর্ণ ব্যবহার তিনি করতে পারেন বেশ ভালই। বাংলাদেশ দল তাঁকে টি-টোয়েন্টির প্রায় সব পজিশনে হয়ত ব্যাট হাতে নামিয়ে দেবে। কেননা এমন ব্যাটারদের কখনোই নির্দিষ্ট পজিশন থাকে না। অন্তত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে।

দলের প্রয়োজন বুঝে, মেহেদীদের বিলিয়ে দিতে হয় নিজের সেরাটা। তাইতো নিজ থেকে অনুশীলন করে সবসময়ই প্রস্তুত থাকেন। নিজেকে শাণ দিয়েই রাখেন। তিনি জানেন প্রচণ্ড চাপের মুখে হয়ত তাঁকে নামতে হবে। তিনি এটাও জানেন দল তাঁর থেকে দ্রুত কিছু রান চাইবে। চাপ সামলে সে রানটা করার জন্যে মেহেদী প্রস্তুতি সেরে রাখেন শতভাগ।

তবুও কি কোথাও কি মনে হয়, মেহেদি খানিকটা অবহেলিত? ওয়ানডে ফরম্যাটেও কিন্তু তাঁকে দারুণভাবে ব্যবহার করা যায়। লোয়ার মিডল অর্ডারে মেহেদী হাসান মিরাজের সাথে তিনি কিন্তু ব্যাট চালিয়ে দ্রুত রান তোলার সক্ষমতা রাখেন। কিন্তু তাঁর তো একাদশে জায়গা হবার সুযোগই নেই। দলে তো এখনও অভিজ্ঞতার দামটা খানিক বেশি। যদিও সে অভিজ্ঞতা খুব একটা কাজে লাগে না আজকাল।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশই খানিকটা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। তবে আমরা বড্ড সেকেলে। মেহেদি দলে সুযোগ পেলে কিন্তু আরেকটা বাড়তি সুবিধা হয়। একটা বাড়তি বোলিং বিকল্প মেলে। তিনি তো বেশ ভাল বোলার। এমনকি টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের স্ট্রাইক বোলারদের একজন। একটা ফরম্যাটের স্ট্রাইক বোলারকে দল আরেকটা ফরম্যাটে সুযোগই দিচ্ছে না। প্রতিভার অপচয়?

তবে প্রতিভার অপচয় হোক অথবা হোক প্রতিভার পরিপক্কতার অপেক্ষা। সবকিছু ঠেলে মার্চের পর আবার বাংলাদেশের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। তিনি যাচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ওই সেই টি-টোয়েন্টিতেই সীমাবদ্ধ মেহেদি। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবেন। সে সিরিজকে সামনে রেখেই নিজেকে একটু ঝালাই করে নিচ্ছেন তিনি।

চাপের মুখে নামতে হয় মেহেদিকে। এবার চাপটা খানিক বেশি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম টেস্টেই বাংলাদেশি ব্যাটারদের ভরাডুবি। হেরে সিরিজে পিছিয়ে রয়েছে টাইগাররা। টেস্ট সিরিজের পরপরই শুরু হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ/ দ্বিতীয় টেস্টেও যদি হেরে যায় বাংলাদেশ নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় তবে পারফরম করার একটা বাড়তি চাপ এসে পড়বে টি-টোয়েন্টি দলে থাকা সবার উপর। সেখান থেকে বাদ যাবেন না মেহেদি হাসানও।

তিনি সম্ভবত পরিস্থিতিটা জানেন। তিনি জানেন দল তাঁর কাছ থেকে ঠিক কি প্রত্যাশা করবে। মেহেদি সেভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলতেও নিশ্চয়ই চাইবেন। তাছাড়া জাতীয় দলের সাথে সে অর্থে বিদেশের মাটিতে খেলার সুযোগ কমই পেয়েছেন মেহেদি। এক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়া তেমন বলার মত তেমন কিছুই নেই। বিদেশের মাটিতে পারফরম করাটাও একটা বাড়তি চাপের কারণ। চ্যালেঞ্জও বটে।

জাতীয় দলে খেলা বাংলাদেশের প্রতিটি কিশোরের স্বপ্ন। মাত্র একটি ফরম্যাটে নিয়মিত খেলার সুযোগ মেলে মেহেদির। সেখানেও খানিকটা পা হড়কে গেলে একেবারে অতলে তলিয়ে যেতে পারেন তিনি, সেটাও নিশ্চয়ই জানেন মেহেদি। এখন চ্যালেঞ্জ তিনি কতটুকু নিতে পারবেন, সেটা হয়ত সময় বলে দেবে। তবে নিজেকে স্থায়ী করবার একটা জেদ নিশ্চয়ই রয়েছে তাঁর। তাইতো ব্যাট না হোক বল হাতে পুষিয়ে দেওয়ায় তিনি ষোল আনা পটু। আলোচনার থাকতে চাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না নিশ্চয়ই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link