একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি, শেখ মেহেদি হাসানকে আপনি কি ভাবেন, অলরাউন্ডার নাকি স্রেফ বোলার? জাতীয় দলে অন্তত শেখ মেহেদী হাসানের খেলা উচিত একজন বোলার হিসেবেই। যিনি প্রয়োজনের মুহূর্তে স্রেফ টিকে থাকার কাজটা করতে পারবেন ব্যাট হাতে। একটু রুঢ় শোনালেও এটাই বাস্তব।
শেখ মেহেদী বল হাতে দারুণ। ইকোনমিক্যাল বোলিং বলুন কিংবা উইকেট শিকারি বোলিং- দু’টোই করতে জানেন তিনি প্রয়োজন অনুসারে। অফব্রেক বোলার হিসেবে নেহায়েত মন্দ নন। তাইতো টি-টোয়েন্টিতে বোলিং ইনিংসের উদ্বোধনেও তাকে বল করতে দেখা যায়। পাওয়ার প্লে-তে তিনি বল করেন হরহামেশাই। এমনকি ডেথ ওভারেও তাকে বোলিং করতে দেখা যায়।
এর পেছনের কারণ- বলের উপর তার নিয়ন্ত্রণ। আঁটসাঁট লাইনলেন্থে জোরের উপর বল করতে পারেন মেহেদী। সে কারণেও ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের মধ্যেও তার উপর আস্থা রাখা যায়। আস্থার প্রতিদান তিনি প্রায়শই দেন বটে। এখন অবধি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে স্রেফ ৬.৭৩ ইকোনমি রেটে বোলিং করছেন মেহেদী। পাওয়ার প্লে, ডেথ ওভার বোলিং বিবেচনায় নিলে এই ইকোনমি যথেষ্ট ভাল।
এছাড়াও ৫৪ ইনিংসে ৪৮ উইকেট রয়েছে তার। অতএব তিনি বোলার হিসেবে কার্যকর- সে কথা প্রমাণিত। কিন্তু তাকে নিয়ে অসুবিধা ভিন্ন জায়গায়। তার ব্যাটিং কোনভাবেই টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়। এমনকি তার ব্যাটিং টেকনিকও বেশ দৃষ্টিকটু। বাইশ গজে তাকে দেখলে মনে হয় একজন জাত বোলার, যিনি কখনো ব্যাট ধরেননি- এমন একজন ব্যাটিং করছেন।
পাশাপাশি তার ব্যাটিংয়ের কোন উপকারিতাও নেই। ক্রিকেটের এই আধুনিক যুগে তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইকরেট মাত্র ৯৮.৯১। এখনকার দিনে এই স্ট্রাইকরেটে ওয়ানডেতে ব্যাটিং করলেও কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাটাররা কটু কথা শোনেন। তবুও শেখ মেহেদী বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পান। জাকের আলি অনিক, শামীম হোসেন পাটোয়ারিদের পাঠানো হয় তার পরে।
যুক্তি নিশ্চয়ই দাঁড় করানো হয়- মেহেদী পিঞ্চহিটার। কিন্তু তার স্ট্রাইকরেট কোনভাবেই তার পিঞ্চহিটিংয়ের পক্ষে কথা বলে না। একজন পিঞ্চ হিটারের গড় কম হতে পারে, তবে স্ট্রাইকরেট অন্তত ১০০ এর নিচে হতে পারে না। অতএব শেখ মেহেদী হাসান পুরোদস্তুর একজন অলরাউন্ডার নন।
অথচ তাকে অলরাউন্ডার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে বাংলাদেশ দল। সহ-অধিনায়কের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে তাকে। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের এই ঘাটতি যেন দূর হবার নয়। তারা বুঝতেই পারেন না কার শক্তি কি, কার দূর্বলতা কি।
এই যেমন শামীম হোসেন পাটোয়ারিকে একজন পাওয়ার হিটার বানানোর প্রচেষ্টা সেই ছেলেবেলা থেকে। অথচ বারংবার শামীম বলে এসেছেন তিনি একজন প্রোপার ব্যাটার। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে- যেদিন শামীম সময় পেয়ে দারুণ কার্যকরী সব বড় ইনিংস খেলেছেন।
কিন্তু সেই শামীমকে জাতীয় দলে শেষের দিকে পাঠানো হয় স্লগ করে দ্রুত কিছু রান তোলার জন্যে। একজন খেলোয়াড়ের স্বভাবজাত খেলার ধরণ কিংবা প্রতিভা ধ্বংসের এর থেকে ভাল পন্থা সম্ভবত আর হয় না। বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট কবে খেলোয়াড়দের সক্ষমতা আর আউটকামের মধ্যে ফারাকটা বুঝতে পারবে?