ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্যে লড়াই করার জন্য ১৪১ রানের পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশের বোলাররা। গত কয়েক ম্যাচের প্রেক্ষাপটে মিরপুরের এই মন্থর ও টার্নিং উইকেটে অবশ্যই বড় সংগ্রহ ছিল এটা। ম্যাচ জয়ের জন্য বোলারদের কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিল ব্যাটসম্যানরা। তবে ম্যাচ জয়ের পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জয়ের বড় কৃতিত্ব দিয়েছেন বোলারদের।
বাংলাদেশের অধিনায়ক জানিয়েছেন দ্বিতীয় ম্যাচের উইকেট তুলনামূলক ভালো ছিলো। দিনের আলোয় প্রথম ইনিংসে বল উচু নিচু হয়ে আসলেও ফ্ল্যাট লাইটের আলোতে বোলারদের কাজটা কঠিন ছিলো। কিন্তু দারুণ বোলিংয়ে শুরু থেকেই নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। বাংলাদেশের তিন স্পিনার ১১ ওভার বল করে ৫৮ রান দিয়ে শিকার করেছেন পাঁচ উইকেট।
সাকিব আল হাসান চার ওভারে ২৯ রান দিয়ে পেয়েছেন দুই উইকেট, শেখ মেহেদী হাসান চার ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে শিকার করেছেন দুই উইকেট। আরেক স্পিনার নাসুম আহমেদ তিন ওভারে ১৭ রান দিয়ে পেয়েছেন এক উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমানও প্রথম তিন ওভার দারুণ বল করেছিলেন। শেষ ওভারে এই পেসার ১৬ রান দিলেও স্নায়ু চাপ ধরে রেখে দলের জয় নিশ্চিত করেছেন।
নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টম ল্যাথাম শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে ৪৯ বলে ৬৫ রানের হার না মানা ইনিংস খেললেও তাকে অনেকটা সময় আটকিয়ে রেখেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। তাই সব কিছু মিলিয়ে এমন উইকেটে ১৪০ রানের পুঁজি নিয়ে জয় এনে দেওয়াতে জয়ের কৃতিত্ব বোলারদের দিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘আমার মনে হয় উইকেট আজকে বেশ ভালো ছিলো আগের ম্যাচের তুলনায়। আমরা দিনের বেলায় যখন ব্যাটিং করছিলাম একটু স্পিন ধরছিলো ও বল উচু নিচু হচ্ছিলো। আমার মনে হয় বোলাররা খুবই ভালো বোলিং করেছে। এই উইকেটে ১৪০ রান নিয়ে জয় এনে দিয়েছে। ম্যাচ জয়ের বড় কৃতিত্ব বোলারদের।’
মাহমুদউল্লাহ জয়ের কৃতিত্ব বোলারদের দিলেও প্রশংসা করতে ভোলেননি দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও লিটন দাসের। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন দু’জন। উদ্বোধনী জুটিতেই দুই ওপেনার তুলে ফেলেন ৫৯ রান। ২৮ বলে ৩৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন লিটন। আর নাঈমের ব্যাট থেকে আসে ৩৯ বলে ৩৯ রান।
নতুন বলে এই উইকেটে ব্যাট করা করা সব সময়ই কঠিন। সাত ম্যাচ পর উদ্বোধনী জুটিতে আজ পঞ্চাশের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। গত অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রতিটা ম্যাচেই ব্যর্থ ছিল দুই দলের উদ্বোধনী জুটি। যদিও আজ ৫৯ রানের জুটি গড়তে তাদের খেলতে হয়েছে ৫৭ বল। তবে উইকেটের কারণেই মাহমুদউল্লাহর কাছে লিটন নাঈমের জুটিটা দুর্দান্ত মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় নতুন বলে এই উইকেটে ব্যাটিং করাটা অনেক কঠিন। যখন বলের সিমটা অনেক শক্ত থাকে। তখন বাউন্স হয়, কিছু বল শার্প করে। নাঈম এবং লিটন ভালো ব্যাটিং করেছে। আমাদের যে রকম শুরু দরকার ছিলো পাওয়ার প্লেতে, পারফেক্ট শুরু এনে দিয়েছে। ভালো জুটি ছিলো। মাঝখানেও আমাদের কয়েকটা ভালো জুটি হয়েছে।’
বাংলাদেশের অধিনায়ক আরো বলেন, ‘আমি আগেই যেটা বললাম এই উইকেটে নতুন বলে ব্যাট করা খুব কঠিন। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে দেখেন ওপেনিংয়ে ওদের কোন সফল জুটি নেই। আমাদের হয়তো একটা ম্যাচে হয়েছে। আজকে যে ভাবে লিটন ও নাঈম খেলেছে দুর্দান্ত ছিলো।’
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জয় পেয়ে সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে জিতলেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হবে স্বাগতিকদের। তৃতীয় ম্যাচটা শুধু সিরিজ জয়ের কারণেই নয়; আরো একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ মাহমুদউল্লাহর কাছে। প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে সে দিন শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামবেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
শততম ম্যাচ নিয়ে আলাদা কোন পরিকল্পনা না থাকলেও মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছেন দলের জয়ে অবদান রেখে রাঙ্গাতে চান নিজের শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তিনি বলেন, ‘আলাদা কোন পরিকল্পনা নেই। আমার লক্ষ্য থাকে সব সময় দলের জন্য অবদান রাখা। আমি যদি সুস্থ থাকি আমার শততম ম্যাচে দলের জয়ে অবদান রাখার চেষ্টা করবো।’
জানিয়ে রাখা ভালো, আগামী পাঁচ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বিকাল চারটায়।