অ্যাকশন বদলেছে, মাশরাফি নন

কাগজে কলমে তাঁর বয়স ৩৯-এরও বেশি। জাতীয় দলের আলোচনারও অনেক অনেক দূরে তিনি। ক্রিকেটটা তিনি আজও খেলেন স্রেফ ভালবাসার খাতিরেই। আর সেই ভালবাসাটাই বারবার আগুন হয়ে ঝরে বাইশ গজে। মাশরাফি বিন মুর্তজা আজও যেন মাঠে নামেন নিজের সেরাটা দেওয়ার তাড়না নিয়েই।

আর সেরা দিনে মাশরাফি কি করতে পারেন সেটার আরেকটা ঝলক দেখা গেল বিকেএসপিতে, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ম্যাচে। দুর্দান্ত বোলিং জাদুতে তুলে নিয়েছেন ৫ টি উইকেট। সেটাও যেন তেন দলের বিপক্ষে নয়, খোদ মোহামেডানের বিপক্ষে।

মাশরাফির বোলিং তোপে মোহামেডানকে মোটে ৮০ রানে অলআউট করে দেয় লিজেন্ড অব রূপগঞ্জ। স্কোরকার্ডেই স্পষ্ট যে – মাশরাফিদের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডান।

এদিন অবশ্য মাশরাফিকে দেখে চেনার কোনো উপায়ই ছিল না। রান আপটা কমিয়ে ফেললেন অনেকটাই। অ্যাকশনেও খানিকটা ভিন্নতা। ঠিক যেন, নব্বইয়ের দশকের সেই ডিবলি-ডবলি বোলারদের মত – কোনোক্রমে অল্প একটু দৌঁড়ে এসে বলটা ছুঁড়ে মারা। তবে, এতেই তিনি কার্যকর।

নিজের করা তৃতীয় ওভারের শেষ ডেলিভারিতে মোহামেডান অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে বোল্ড করেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। ভারত থেকে আসা অনুষ্টুপ মজুমদারের পরিণতি একই। ফিরে যান মাশরাফির বিপক্ষে বোল্ড হয়ে।

ছয় বলে তিন রান করা শুভাগত হোমও সাজঘরে ফেরেন নড়াইল এক্সপ্রেসের বলে। তাঁর ক্যাচ নেন পারভেজ হোসেন ইমন। মাশরাফির আরও দুই শিকার কামরুল ইসলাম রাব্বি ও খালেদ আহমেদ।

আট ওভার চার বল বোলিং করে মাত্র ১৭ রান হজম করেছেন মাশরাফি। মেইডেন নিয়েছেন তিনটি। এর অর্থ হল, ওভারপ্রতি রান তিনি দিয়েছেন দুই-এর নিচে।

শুধু বোলিংয়েই নয়, মাঠে দারুণ চাঙ্গা ছিলেন মাশরাফি। তাঁর ফিল্ডিং ছিল দর্শনীয়। দু’টো ক্যাচ ধরেছেন। এর মধ্যে অফ স্পিনার নাঈম ইসলাম জুনিয়রের বলে স্লিপে দাঁড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে একটা ক্যাচ নিয়ে প্রমাণ করেন – বয়স কেবলই একটা সংখ্যা।

আসলে মাশরাফির উপস্থিতিটাই এমন। তিনি থাকলে এমন কিছু করবেন – যেটা দলের ওপর প্রভাব ফেলবেই। তবে, এদিনটা একটু বেশিই স্মরণীয় হয়ে রইল।

মাত্র ২২.৪ ওভারেই অলআউট হয় মোহামেডান। জবাবে ৮.২ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় রুপগঞ্জ। কোনো উইকেট না হারিয়েই। জিতে যায় ১০ উইকেটে। তবে, জয়-পরাজয় ছাপিয়ে বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে এদিন সবটুকু আলোই তো কেড়ে নিলেন মাশরাফি একাই।

এদিন অনেকগুলো রেকর্ডেও নাম লিখিয়েছেন মাশরাফি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সে ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ড এখন তাঁর। আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর বয়স আজ ৩৯ বছর ১৭৩ দিন। এই রেকর্ড আগে ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের দখলে, ৩৭ বছর ২৫৮ দিনে।

রেকর্ড এখানেই শেষ নয়, প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪৫০ উইকেটও পূর্ণ হল মাশরাফির। ৩২৪ ম্যাচে উইকেট এখন ৪৫২টি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে সপ্তম বারের মত পাঁচ উইকেট, শেষ চার ম্যাচে ১১ উইকেট। মাশরাফি যেন এখন আকাশে উড়ছেন।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link