রিলি মেরিডিথের শর্ট বলটা কাউ কর্ণার দিয়ে নিয়ে ফেললেন গ্যালারিতে। ৬১ বলে তুলে নিলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। একপ্রান্তে অনেকটা নিয়মিত বিরতিতে ক্রিজে আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন ব্যাটাররা। কিন্তু আরেকপ্রান্তে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বোলারদের শাসন করছিলেন লখনৌ সুপার জায়েন্টসের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। তাঁকে যোগ্য সমর্থনটা দিতে পারেননি কেউই। অবশ্য তার প্রয়োজনও ছিল না। একপ্রান্তে একাই ব্যাট হাতে চালিয়েছেন তাণ্ডব।
একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এক ম্যাচ আগেও ছিলেন এমন ভয়ংকর রূপে। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে হাঁকিয়েছিলেন ঝড়ো সেঞ্চুরি। সেই মুম্বাইয়ের বিপক্ষে আবার তাণ্ডব। বাকিরা ব্যর্থ হলেও রাহুলের ব্যাট নামক তরবারিতে কাঁটা পড়েছেন মুম্বাইয়ের বোলাররা।
এইত ম্যাচ দুয়েক আগেই আউট হয়েছিলেন ইনিংসের প্রথম বলে। সোনালি হাঁসের লজ্জাটা কোনো ব্যাটারই নিতে চান না। রাহুল এবারের আসরে সেই লজ্জায় ডুবেছেন দুই দুই বার। আসরের শুরুটাই ছিল গোল্ডেন ডাক দিয়ে। সেখান থেকে সবশেষ তিন ম্যাচে করলেন দুই সেঞ্চুরি।
লক্ষ্য দৃঢ় হলে, ব্যর্থতা কখনোই দমিয়ে রাখতে পারে না। সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে হলে অনেক বাধা বিপত্তি পার করেই আসতে হবে। আগের দিনের খারাপ সময়টা যেন কখনোই আজকের দিনটার ক্ষতি করতে না পারে। ধ্বংস্তূপ থেকেও ফুল ফোটে। আগের দিনের ব্যর্থতা থেকে ২২ গজে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য তো প্রয়োজন স্রেফ একটা ভাল ইনিংস। সেই ঘুরে দাঁড়ানোর সবচেয়ে ভাল উদাহরণটা সম্ভবত রাহুলের ব্যাটেই দেখা মিলল।
রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ট্রেন্ট বোল্টের তোপের সামনে দাঁড়াতে পারেননি। দুর্দান্ত এক ইনস্যুইং ডেলিভারিতে গোল্ডেন ডাকের শিকার হন রাহুল। এবারের আসরের দ্বিতীয় গোল্ডেন ডাক। রাজস্থানের বিপক্ষে মুখ থুবড়ে পড়া রাহুল ঘুরে দাঁড়ান পরের ম্যাচেই। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ব্যর্থতার দাগ মুছে দিয়ে ব্যাট হাতে সাজিয়েছিলেন আলোর পসরা। সেই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষেই গেল রাতে দেখা পেলেন আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি!
প্রথম আট ম্যাচে হেরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মুম্বাই শিবির। মুম্বাইয়ের মুখ থুবড়ে পড়ার সেই সুযোগটা নিয়েছেন রাহুলও। মুম্বাইয়ের দু:সময়ে ব্যাট হাতে বোলারদের তুলোধুনো করেছেন রাহুল। প্রথম দেখায় খেলেছিলেন ৬০ বলে ১০৩ রানের ঝড়ো ইনিংস। এরপর সবশেষ ম্যাচে মুম্বাইয়ের ঘরের মাঠ ওয়াংখেড়েতে খেললেন ৬২ বলে ১০৩ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস।
রাহুলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ৩৬ রানের জয় পেল সুপার জায়েন্টসরা। আর রাহুল দাপটে আট হারে ভরাডুবির মাত্রায় আরেক দাগ যোগ করলো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
সবশেষ তিন ম্যাচের দু’টিতেই সেঞ্চুরি। আইপিএলে এখন চার সেঞ্চুরির মালিক তিনি। এই চার সেঞ্চুরির তিনটি করেছেন মুম্বাইয়ের বিপক্ষে। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে খেলতে নামলেই যে বোলারদের জন্য যমদূতে রূপ নেন রাহুল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মূল্যবান কমলা টুপির দৌঁড়ে আছেন দ্বিতীয় অবস্থানে। এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচে ৬১ গড়ে করেছেন ৩৬৮ রান। আগের আসরগুলোতেও ধারাবাহিক রান পেয়েছেন। তবে স্ট্রাইক রেট নিয়ে ছিলেন সমালোচনার কেন্দ্রে। কিন্তু এবারের আসরে পারফরম্যান্স গ্রাফের সাথে সাথে রাহুলের স্ট্রাইক রেটও আকাশছোঁয়া। প্রায় ১৪৮ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন লখনৌর এই অধিনায়ক। আইপিএলের এবারের আসরে জশ বাটলারের ৪৯১ রানের পর এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬৮ রানের মালিক তিনি। ইংলিশ তারকা বাটলার শীর্ষে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয়দের মধ্যে রাহুল এখন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে নিজের শততম আইপিএল ম্যাচে দেখা পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি। খেলেছিলেন ১০৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। কিন্তু ওই ম্যাচে স্লো ওভার রেটের দায়ে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল রাহুলকে। একই চিত্র দেখা গেল ওয়াংখেড়েতেও। গেল ম্যাচে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে আবারও খেলেছেন ১০৩ রানের ইনিংস। কাকতালীয়ভাবে সেই মুম্বাইয়ের বিপক্ষেই আবারও স্লো ওভার রেটের কারণে শাস্তির মুখে পড়েছেন রাহুল!
বেশ কয়েক আসর ধরেই ব্যাট হাতে ধারাবাহিক রাহুল। আইপিএলে গেল কয়েক আসরের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার তিনি। গেল চার আসরেই গড়ে প্রায় ছয়শোর বেশি রান করেছেন এই তারকা। স্ট্রাইক রেট নিয়ে খানিকটা সমালোচনা হলেও এবারের আসরে সেটিও আকাশচুম্বি। চলতি আসর সহ সবশেষ পাঁচ আসরে রাহুলের ব্যাটিং গড় পঞ্চাশের উপরে। ধারাবাহিকতার সাগরে ভেলা ভাসিয়ে তিনি যে দিব্যি ছুঁটে চলেছেন সেটা তাঁর পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।