আর্জেন্টিনার ‘মাংসময়’ বিশ্বকাপ

দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ – ফুটবল বিশ্বকাপ। গোল হোক আর না হোক, এখন বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টের ৩২ দল ইতোমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে কাতারে। পৌঁছে গিয়েছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাও। আর্জেন্টিনার এই সফরে শুধু খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, সাংবাদিকসহ প্রায় ৭২ জন রয়েছে কাতার সফরে। এখানেই শেষ নয়। মজার বিষয় হল এই ৭২ সদস্য বিশিষ্ট আর্জেন্টিনার বিশাল বহরের সাথে সাথে প্রায় নয়শ কেজির বেশি গরুর মাংসও সফর সঙ্গী হয়েছে আর্জেন্টিনা দলের। অবাক করা তথ্য হলেও এটাই হয়েছে।

লিওনেল মেসির জন্য এটা হতে চলেছে তার শেষ বিশ্বকাপ। ফুটবলের সম্ভাব্য সব শিরোপার স্বাদ পাওয়া হলেও সোনালি এই ট্রফি ছুঁয়ে দেখা হয় নি মেসির। মেসির সাথে সাথে ১৯৮৬ এর পর প্রায় ৩৬ বছর যাবৎ বিশ্বকাপ জেতেনি আর্জেন্টিনাও। আর এবার সেই ট্রফি জিততেই যেন উঠে পড়ে লেগেছে আর্জেন্টাইন ফুটবল এসোসিয়েশন। বিশ্বকাপ জিততে  বিশ্বকাপ চলাকালীন দলের খেলোয়াড়দের চাঙ্গা রাখতে সম্ভাব্য সকল সুযোগ সুবিধারই ব্যবস্থা করেছে দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

তারই ফলাফল হিসেবে মেসিদের জন্য প্রায় ৯০০ থেকে ৯১০ কেজি সমপরিমাণ গরুর মাংস সুদূর আর্জেন্টিনা থেকে কাতারে টেনে এনেছে দেশটির ফুটবল এসোসিয়েশন। শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের খাওয়া এবং ফুরফুরে রাখার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে এই কাজ।

মাংস বয়ে আনার এই কাজ শুধু মেসির আর্জেন্টিনায় করেনি। একই কাজ করেছে তাদের প্রতিবেশ দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ উরুগুয়ে। বিশ্বকাপে লুইস সুয়ারেজ, এডিনসন কাভানিদের খাবারে যেন সমস্যা না হয় সেই জন্য উরগুয়ে থেকে আর্জেন্টিনার মতই প্রায় ২০০০ পাউন্ড গরুর মাংস কাতারে উড়িয়ে এনেছে তারা। জানিয়ে রাখা উচিত যে, মাংস উৎপাদন, বিক্রি এবং ভোগে আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ে বিশ্বে সেরা তিন দেশের মধ্যেই পড়ে।

বিশেষ করে দক্ষিন আমেরিকা অঞ্চলে গরুর মাংসের তৈরি ‘আসাদো’ নামক তৈরি এক ধরনের পদ যা খুবই বিখ্যাত। মূলত এটা ‘মাংসের স্টেক’ জাতীয় খাবার যা লিওনেল মেসিসহ পুরো দক্ষিন আমেরিকার বাসিন্দাদের কাছেই অত্যন্ত জনপ্রিয়।

নিজেদের বহরের সাথে এত পরিমান মাংস টেনে আনা সম্পর্কে আর্জেন্টিনা দলের কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেন, ‘এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আমরা যখন কথা বলি, হাসি, নির্ভার থাকি, অন্যদের সঙ্গে মিশি… তখন আসাদো থাকে। এটা আমার প্রিয় খাবার। তবে এখানে ব্যাপারটা আরও বড়। এর মাধ্যমে দলের ভেতরে রসায়ন আরও মজবুত হবে, একতা বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি হবে।’

মূলত নিজেদের খেলোয়াড়দেরকে নির্ভার রাখতে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) সব ধরনের আয়োজনই করেছে।বিশ্বকাপে তারা নিজেদের এবারের ডেরা গেড়েছে  কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে। যার অন্যতম কারণ হল, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের খোলা জায়গা। ট্রেনিং সুবিধার পাশাপাশি এত খোলামেলা জায়গাতে নিজেদের ইচ্ছামত রান্না বান্না করে খেয়ে আনন্দ করে নিজেদের যেন সতেজ এবং চাঙ্গা থাকতে পারে মেসিরা তারই উদ্দেশ্য এত কিছু করা।

অপরদিকে উরগুয়ে ফুটবল এসোসিয়েশন এর প্রধান ইগনাসিও আলানসো মাংস নিয়ে আসা প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিদেশে উরুগুয়ের ঐতিহাসিক প্রতিনিধি হচ্ছে ফুটবল দল। এক প্রতিনিধি কাতারে আরেকটি প্রতিনিধিকে নিয়ে গেছে, সেটা হচ্ছে উরুগুয়ের মাংস, যা বিশ্বসেরা।’

এবারের বিশ্বকাপে অবশ্য মেসিদের মতো খোলামেলা জায়গাতে থাকছে না উরুগুয়ে ফুটবল দল। তাঁরা থাকছে কাতারের বিখ্যাত পার্ক হায়াত হোটেলে। মেসিদের মত খোলা জায়গাতে নিজেদের রান্না করার সুযোগ না থাকলেও হোটেলে নিজেদের জন্য স্পেশাল শেফ এর ব্যবস্থা করেছে উরুগুয়ে।

অপরদিকে আর্জেন্টিনা উরুগুয়ের মত  ‘আসাদো’ দক্ষিণ আমেরিকার আরেক দেশ ব্রাজিলে জনপ্রিয় হলেও নিজেদের সাথে মাংস বয়ে আনছে না তারা।বরং তারা সাথে নিয়েছে ব্রাজিলের সবচেয়ে বিখ্যাত কফি। এছাড়াও ব্রাজিলে জনপ্রিয় খাবার ‘সিজনিং’ এবং প্রায় ৩৬ কেজি ‘কাসাভা ময়দা’ যা দিয়ে ‘ফারোফা’ নামক একটি ডিশ তৈরি করা হয়।

এই খাবার গুলো খেয়ে মেসি অধরা বিশ্বকাপটা কি ধরে দেখতে পারবেন কি না – এখন সেটাই প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link