বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল। চট্টগ্রাম পর্বে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের পঞ্চম ম্যাচের ঘন্টাখানেক আগে তথ্য এলো অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের পরিবর্তে দলের নতুন অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় নাঈম ইসলাম।
হঠাৎ করে দলের এমন সিদ্ধান্ত খানিক বিস্মিত সবাই। শুরু থেকেই অন্তরকোন্দলের একটা আভাস পাওয়া যাচ্ছিলো। ঠুনকো কারণ দেখিয়ে টুর্নামেন্টের মাঝপথে অধিনায়কের অপসারণ স্বাভাবিকভাবেই নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাঁর উপর প্রধান কোচের প্রস্থানে জল যেন ঘোলাটে হয়েই চলছিলো।
সেই আভাস আরেকটু বেশি ঘণিভূত হলো মেহেদী হাসান মিরাজের বক্তব্যে। এর আগে অবশ্য মিরাজ চট্টগ্রামের অসাধরণ এক ম্যাচ জয়ের পরই জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আর খেলতে চান না বিপিএল এর অষ্টম আসর। নিজের নাম প্রত্যাহার করার যথাযথ নিয়মনীতি মেনেই তিনি ছেড়ে যেতে চাইছিলেন দল। প্লেনের টিকিটও কেটে ফেলেছিলেন মিরাজ। সস্ত্রীক চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগ মুহূর্তে তিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মিরাজ বলেন, ‘খেলার মাত্র তিন ঘন্টা আগে একজন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে অধিনায়কের দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া সত্যিই অপমানজনক। এমন অপমানের পর আমি আর খেলতে চাই না।’
এদিকে মিরাজকে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে অপসারণের পক্ষে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের টিম ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে যে কোচ পল নিক্সনের পরামর্শেই তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন কথা মানতে নারাজ মেহেদী মিরাজ।
তিনি বলেন, ‘আমার সাথে তাঁর (পল নিক্সন) প্রায় ৩০ মিনিট এর মতো কথা হয়েছে। সে আমাকে স্পষ্টই বলেছে যে সে দলকে এমন কোন পরামর্শ দিয়ে যায়নি। তাছাড়া তিনি আমার অধিনায়কত্বে নারাজও ছিলেন না।’
মেহেদী আরো বলেন কর্তৃপক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে যে তিনি নাকি শুধু নিজের জন্যে খেলেন। একজন দলের সদস্য হিসেবে খেলতে চাননা। এমন মত নাকি প্রকাশ করে গেছেন পল নিক্সন। কিন্তু নিক্সন এসব কিছুই অস্বীকার করেছেন মিরাজের ভাষ্যমতে।
এমন বিদঘুটে এক কাজের জন্যে মেহেদী মিরাজ আঙুল তুলেছেন দলের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আলীর দিকে। মিরাজের অভিমত তিনিই নাকি এমন অপেশাদার কার্যকলাপের সাথে যুক্ত। তিনিই নাকি কলকাঠি নাড়ছেন পেছন থেকে। তাছাড়া মিরাজ নিজেকে অপসারণের যৌক্তিক কোন কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বুলেন, ‘সে (ইয়াসির আলী) বিবৃতিতে যা বলেছে সব মিথ্যা।’
এমনকি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামানের বিপক্ষে কোন অভিযোগ করেননি মিরাজ বরং তিনি বলেছেন, ‘মালিক নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নেই। তিনি খুব ভাল মানুষ।’
তবে মিরাজ এটা স্বীকার করেছেন যে তিনি ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিপিএলে আগের দুই বছর আমি ওপেনিং করেছি, ওয়ান ডাউনে নেমেছি। আমি তো ভালই খেলেছি। সেই দিক বিবেচনায় আমি দলকে আমার মতামত জানিয়েছি। আমি তো জোর করিনি। জোর করলে তো আপনারা আমাকে খেলতে দেখতেনই।’
এ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে মিরাজ এবং চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স কর্তৃপক্ষের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে মোটামুটি এতটুকু নিশ্চিত রুপেই বলে দেওয়া যায় চট্টগ্রামের সাথে মিরাজের এবারের বিপিএলের সম্পর্ক শেষ হতে চলেছে।
কেননা মিরাজ মায়ের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঢাকা চলের আসার ই-মেইল পাঠিয়ে দিয়েছেন। ব্যাটে বলে সমানতালে পারফর্ম করার পরও মিরাজের এমন প্রস্থান সত্যিই হতাশাজনক।
শেষমেশ পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় তাও এক চিন্তার বিষয়। তবে অপেশাদারিত্বের আরো এক দৃষ্টান্ত উপহার দিলো বিপিএল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনামুক্ত বিপিএলের প্রত্যাশা হয়ত করেন সকলেই।