ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে বার বার একটি কথাই ভেসে আসছিল। লিওনেল মেসি সেই ২৫ বছর বয়সে ফিরে গেছেন। একদম ঠিক তাই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলতে মেসি যা করে দেখালেন তা অভূতপূর্ব, দৃষ্টিনন্দন, মুগ্ধ জাগানিয়া।
অস্ট্রেলিয়া দলের রক্ষণ দূর্গ ভেঙে প্রথম গোলটা এসেছিল মেসির পা থেকেই। এরপর সুযোগ তৈরি থেকে শুরু করে নজরকাড়া ড্রিবলিংয়ে পুরো ম্যাচেই মাতিয়ে রেখেছিলেন আর্জেন্টাইন এই নাম্বার টেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম গোলের সুবাদে মেসি বিশ্বকাপের গোলসংখ্যায় ছাপিয়ে গেছেন স্বয়ং ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে। বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার গোল ৮ টি। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে মেসির গোলও ছিল একই সংখ্যক – ৮ টি।
এরপর অপেক্ষার অবসান হল। সকারুজদের বিপক্ষে গোল করে ম্যারাডোনাকে ছাপিয়ে গেলেন মেসি। তবে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটি গড়তে মেসির এখনো ১ টি গোল প্রয়োজন। আর্জেন্টাইন আরেক কিংবদন্তি গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার বিশ্বকাপে ১০ টি গোল রয়েছে।
পেশাদার ফুটবলে ১০০০ তম ম্যাচ খেলতে নেমে আরেকটি রেকর্ডও গড়েছেন মেসি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। এ নিয়ে অষ্টম বারের মতো বিশ্বকাপের ম্যাচে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হলেন তিনি। যা এখন বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
সাত বার ম্যাচ সেরা হয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন পর্তুগিজ সুুপার স্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, যিনি আবার মেসির চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে, এখানেও কার্যত দু’জনের লড়াই বেশ জমে উঠেছে।
ম্যারাডোনার গোলসংখ্যাকে ছাপিয়ে যাওয়ার দিনে তাঁরই গড়া আরেকটি রেকর্ডকে স্পর্শ করেছেন লিওনেল মেসি। এতদিন পর্যন্ত বিশ্বকাপের ম্যাচে সুযোগ তৈরি করার দিক দিয়ে শীর্ষে ছিলেন ম্যারাডোনা। এখন সেখানে তাঁর নামের সাথে নিজের নাম লেখালেন মেসিও।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চারটি গোলের সুযোগ তৈরি করে এবার ম্যারাডোনার পাশে চলে এলেন মেসি। দু’জনই বিশ্বকাপে সমান ৬৭ টি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
অধরা বিশ্বকাপ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়েই কাতারে এসেছিলেন মেসি। শুরুতে সেই স্বপ্নে কিছুটা ধাক্কা আসলেও তা ঠিকই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে আর্জেন্টিনা। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে উঠে গেল শেষ আটে। বিশ্বজয়ের জন্য প্রয়োজন আর তিনটি ধাপ টপকানো। মেসিদের পরের বাঁধার নাম এখন পর্যন্ত একটিও ম্যাচ না হারা নেদারল্যান্ডস।
ডাচদের বিপক্ষে তাই আর্জেন্টিনাকে একটু বেশিই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। সঙ্গে এখন পর্যন্ত মেসি যেভাবে খেলেছেন সেই ধারাও তাঁকে অব্যাহত রাখতে হবে। তবেই আরো কাব্যগাঁথা লেখা হবে। আরো কিছু রেকর্ড যুক্ত হবে তাঁর পাশে। ব্যক্তি রেকর্ডের চেয়ে অবশ্য মেসির কাছে এখন দলগত সাফল্যই বেশি প্রয়োজন। কারণ মেসির ট্রফির ক্যাবিনেটে ঐ একটি ট্রফিই যে নেই।