লুকা মড্রিচ ব্যালন ডি অর হাতে দাঁড়িয়েছিলেন মঞ্চে, প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার হাতে দাঁড়াচ্ছেন ভ্যান ডাইক। পিছনে একে একে দাঁড়িয়ে নিজেদের ভবিষ্যতের মঞ্চ দেখে নিচ্ছেন ডি জং, ডি লিট, এমবাপ্পেরা। ঝলমলে মঞ্চের পিছনে আদিম ফুটবলীয় অর্কেস্ট্রা বাজছে।
মেজর কর্ডের জোড়ালো প্রগ্রেশনের ভেতর মাইনর কর্ডদুটো কানের আরাম এখনো। এখনো প্রথম শেখা সরগম অবচেতনে গেয়ে ওঠে গায়ক – ১৫ কি ১৬ বছরের অভ্যাস! এক যুগের মিথ! এক প্রজন্মের প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্তরে স্তরে গড়েছে ইমারত।প্রত্যাশার ইমারত, ভালবাসার ইমারত, ভরসার ইমারত, বিশ্বাসের ইমারত।
একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা দুই বিষ্ময় বালককে বানিয়েছে বিশ্বফুটবলের দুই সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। পেলে-বেস্ট-মারাদোনা-বাজ্জিও-জিদান হয়ে গাউচোর এই কিংবদন্তী বৃত্ততেও কোথাও লেগেছিল ‘খারাপ সময়’ শব্দবন্ধটুকু। কেরিয়ারের কোনো এক সময়ে এইসব বিষ্ময়দের সাফল্যে থাবা বসিয়েছে সময়। ইউরোপের জনপ্রিয় ফুটবলপত্রিকা হয়ত এ জন্যেই মেসি ও রোনালদো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে লিখেছিল – ‘A rivalry that is beyond the time, beyond the imagination!’
সমস্ত কিংবদন্তীর সাথে এখানেই হয়ত আলাদা হয়ে যায় বিশ্ব ফুটবলের দুই বিষ্ময়ের ১২-১৩ বছরের অনন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস। এনারা দুজন সময়ের সবুজ ঘাসের ওপর বলটাকে বসান, জোড়ে নিঃশ্বাস নিয়ে দৌড় শুরু করেন তারপর সময়ের তেকাঠির জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যায় ফুটবল ঈশ্বরের বরমাল্য।
‘The Greatest rivalry the football has ever seen’ – সঞ্চালিকার মুখ থেকে ভেসে আসতেই হাততালিতে ফেটে পড়ে মঞ্চ। ফুটবলের নতুন প্রজন্মকে হাত ধরে আসতে আসতে মঞ্চে নিয়ে আসেন দুই বিষ্ময়। নিজেদের বিশ্বাস-ভালবাসা-অধ্যাবসায় আর প্রতিভা দিয়ে গড়া রাজসিংহাসন ছেড়ে দেন নতুন সম্রাটকে, কালের নিয়মে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যান আধা আধি ভেঙে যাওয়া দুই পৃথিবী, ফুটবল ঈশ্বর দূর থেকে মাথার টুপিটা খুলে আহবান করে দু’জনকে।
রাতের ডিনার টেবিলে মুখোমুখি বসেন মেসি-রন। কাচের টেবিলে ছায়া পড়ে ফুটবলের। দু’জনের অনন্ত বিষ্ময়ের দুর্লঙ্ঘ যোগসূত্র, নীচে দেখা যায় নতুন প্রজন্ম মাঠে নামছে বল পায়ে। হেসে ওঠেন দুজনে। মোমবাতির আলোয় হাত ধরে থাকেন তাঁরা। এই সময়ের সুতোয় বাঁধা পৃথিবীর দুই অদম্য ফিনিক্স সময়ের জাল ছিঁড়ে হেঁটে যান অনন্তলোকের পথে।
আমরা বেঁচে থাকব তাঁদের সেই ফেলে যাওয়া ঘ্রাণটুকু নিয়ে, আর তো কটা দিন। বলেছিলাম না, ঘৃনার চেয়ে ভালোবাসা অনেক সোজা, অনেক।