নি:সঙ্গ যুদ্ধের নীরব লড়াই

কে জানে, হয়তো কোনো একটা আশার আলোর দিকে চেয়ে আরো বেশ কিছুদিন এই নি:সঙ্গ লড়াইটা ‘সাইলেন্টলি’ চালিয়ে যাবেন ‘সাইলেন্ট কিলার’। সব লড়াইয়ের শেষটা যে জাতীয় দল দিয়েই হতে হবে - সেই দিব্যি কে দিয়েছে!

দু:সময়টা পিছু নিয়েছিল বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মাস তিনেক আগেও যিনি ছিলেন অধিনায়ক সেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই জায়গা পেলেন না বিশ্বকাপ দলে। টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন বছর দুয়েক হতে চলল, আর টি-টোয়েন্টি দলেও আর বিবেচিত হচ্ছেন না। ওয়ানডে ফরম্যাটেও দলের চাহিদা মেটাতে পারছিলেন না দীর্ঘদিন ধরেই। তাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যারিয়ারে ফুলস্টপ পড়াটা অনেকটা সময়ের ব্যাপারই ছিল।

এমনিতে অনেক রান খরায় ভুগছিলেন রিয়াদ তেমনটা মোটেও নয়। তবে সমালোচনার বিষয় যেটি ছিল তা হলো নিজের পজিশনে দলের চাহিদা মেটাতে না পারা। ভারত সিরিজের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ, সব কিছু বিবেচনায় ব্যর্থই বলতে হবে। এদিকে আবার বাংলাদেশের কোচ হয়ে এসেছেন ‘কড়া হেডমাস্টার’ চান্দিকা হাতুরুসিংহে।

এই হাতুরুসিংহের প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে দল থেকে বাদ পড়েছিলেন রিয়াদ। নিজেদের শততম টেস্টের দল থেকে রিয়াদকে বাদ দিয়েছিলেন হাতুরু। গুঞ্জন, আছে বাদ দিতে চেয়েছিলেন ওয়ানডে থেকেও। কিন্তু তখনকার অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজার হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত ওয়ানডে দলে রাখা হয় রিয়াদকে।

৬ বছর পর আবারো সেই হাতুরুসিংহে কোচ হয়ে আসার এক সিরিজ পরেই বাদ পড়লেন মাহমুদউল্লাহ। জায়গা হয়নি, আয়ারল্যান্ড সফরের দলেও। এ বছরই ৩৮ এ পা দিতে যাওয়া রিয়াদের ক্যারিয়ারেই তাই এক অর্থে ফুলস্টপ পড়ে গেছে। বিশ্বকাপে মাত্র ছয় মাস আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছে একমাত্র লাইফ লাইন হিসেবে হয়তো ছিল চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ।

সেই ঢাকা লিগে দারুণ কিছু করে দেখানোর বিকল্প নেই রিয়াদের। মোহামেডানের জার্সিতে দারুণ কিছু করতে নি:সঙ্গ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন মিরপুরের একাডেমি মাঠে। জাতীয় দলে ফিরতে রিয়াদও যে মরিয়া তা বোঝা যায় অনুশীলনে, কিংবা ম্যাচে। যতটুকু পারেন – নিজেকে উজাড় করে দেন। কোনো দিন ব্যাটে-বলে হয়, কোনো দিন বা হয় না।

ইদানিং বেশ সিরিয়াসই দেখা যায় বাংলাদেশের সাবেক এই টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ককে। তবে, রিয়াদের এখন বয়স যেমন, তাতে শুধু ইচ্ছাশক্তি আর সিরিয়াসনেস দিয়ে কি আর চিড়ে ভিজবে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এর মাঝে তাঁকে অবসরের প্রস্তাবও দিয়েছিল, তাতে তিনি রাজি হননি। মানে এখনও ফিরতে চান পুরনো রূপে।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলে ফেরার আরেক নিয়ামক হতে পারতো তাঁর পজিশনে অন্যদের ব্যর্থতা। বেশিরভাগই মনে করেছিলেন মাহমদউল্লাহর জায়াগায় হয়তো তৌহিদ হৃদয়কে বাজিয়ে দেখবেন চান্দিকা হাতুরুসিংহে। কিন্তু, সবাইকে অবাক করে দিয়ে ছয় নম্বরে চান্দিকা খেলালেন মুশফিককে।

নিজের পুরোনো পজিশনে মুশফিক যেন জ্বলে উঠলেন ক্যারিয়ারের সেরা সময়ের মত করে। চান্দিকা হাতুরুসিংহের ‘মাস্টার স্ট্রোকে’ আয়ারল্যান্ড সিরিজে মুশফিক, হৃদয়দের হাত ধরে বাংলাদেশ পেতে থাকলো দারুণ ফিনিশিং।

পাঁচ আর ছয় নম্বর পজিশনে মুশফিক, হৃদয়রা দলের চাহিদা মিটিয়ে ব্যাট করেছেন। তাদের ব্যাটিংয়ে পাওয়া গেছে আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটের স্বাদ। তাই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় ফিরে আসাটা এখন অনেকটাই দূরের বাতিঘর। কোচ হয়ে ফিরে এসেই চান্দিকা হাথুরুসিংহে জানান দিয়েছেন, কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে দুইবার ভাববেন না তিনি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পর আফিফকেও দল থেকে বাদ দেয়া তারই প্রমাণ দেয়।

প্রথম মেয়াদেও চান্দিকা হাতুরুসিংহের গুড বুকে ছিল না রিয়াদের নাম। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে দল থেকে বাদ পড়ার পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও বোধহয় বুঝে গেছেন তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা এখানেই শেষ। কিন্তু ক্রিকেটে তো শেষ বলে কিছু নেই। কে জানে, হয়তো কোনো একটা আশার আলোর দিকে চেয়ে আরো বেশ কিছুদিন এই নি:সঙ্গ লড়াইটা ‘সাইলেন্টলি’ চালিয়ে যাবেন ‘সাইলেন্ট কিলার’। সব লড়াইয়ের শেষটা যে জাতীয় দল দিয়েই হতে হবে – সেই দিব্যি কে দিয়েছে!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...