চান্দিকা হাতুরুসিংহে, সৌম্যর শেষ লাইফ-লাইন

প্রতিভাবান অনেক খেলোয়াড় তাদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের যেমন একটা উচ্চতায় নিয়ে যায়, মানুষের কাছে তাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে তোলে ৷ তেমন আবার, সেই প্রতিভাবানদের অনেকেই তারকা খ্যাতির ছোঁয়ায় বা অন্য কারণেই হোক, কিছুদিন পরে হারিয়ে যেতে থাকে অদৃশ্য ব্লাক হোলের গহীন অতলে ৷

সৌম্য সরকার ও কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে দুজনেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে সমসাময়িক ৷ ২০১৫ বিশ্বকাপের কিছু আগে কোচের নজরে পড়েন সৌম্য ৷ ঐ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পজিশন ৩নং এ কোচ আস্থা রাখেন নবাগত ঐ তরুণের ব্যাটেই এবং তিনি সেখানে মোটামুটি সফল ছিলেন ৷

অত:পর পর পর তিন শক্তিধর ক্রিকেট দলের বিপক্ষে তার অতি মানবীয় পারফরম্যান্স তাঁকে কোচের কেবল প্রিয়পাত্রই করেনি, সেই সময় কোচ হাতুরু যেভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন, তার রুপকার হিসেবে সৌম্য ছিলেন এক পরীক্ষিত মডেল ৷

কিন্তু পরিস্থিতি সব সময় এক রকম যায় না ৷ বেশ কিছু অজানা কারণে সৌম্যের পারফরম্যান্স নিচু হতে শুরু করল দ্রুত গতিতে ৷ দক্ষিণ আফ্রিকা পাকি মতন দলের পেসারদের বলে পেরিস্কোপ শটের জনককে পরে টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হয়েছে ৷ মাঝে মাঝে কিছু ঝলক দেখালেও সেই প্রত্যাশার ফর্ম তিনি ফিরে পাননি কখনো ৷

প্রতিভাবান বলে কোচ হয়তো ব্যাপক জনমত উপেক্ষা করেও দলে রাখতেন ৷ এবং কোচের আশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ও হাতুরু জনগণের গালাগাল হজম করতেন ৷ বিশেষ করে বলা হতো হাতুরু না থাকলে সৌম্য ঢাকা লীগেও চান্স পেতেন না ৷

সেই হাতুরু একদিন বিদায় নিলেন ৷ আগে যে সব কারণই থাকুক, প্রিয় কোচকে হারিয়ে সৌম্য অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলেন ৷ অবস্থা এমন যে সত্যিই তাকে মোহামেডান দলে বেঞ্চে বসে থাকতে হয়েছিল ৷ তো বাংলাদেশ ক্রিকেটে আবারও হাতুরুর প্রবেশ ৷

এসে যা দেখলেন, তার প্রিয় শিষ্যকে জাতীয় দলে তো দূরের কথা, এ দল বা ইমার্জিং দলে রাখাটাও মুশকিল ৷ তারপরও চরম রিস্ক নিয়ে তাকে ইমার্জিং দলে রাখা হল ৷ এবং যথারীতি এবারও মিডিয়া ও সমর্থকদের সমালোচনার শিকার হাতুরু ও সৌম্য ৷ এবং তাদের সমালোচনা কোনভাবেই অযৌক্তিক নয় ৷ কেননা যে ব্যাটসম্যান ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে টপ ৪০ রান সংগ্রাহকের বাইরে, তাকে যে কোন পর্যায়ের দলে নেয়াটাই মুর্খামি ৷

তবে আমার মতে, হাতুরুর মতন একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন কোচ এই যে মূর্খের মতন কাজ করছেন, এই যে এত মারাত্মক সমালোচনা শোনার ঝুঁকি নিয়ে নিজ হাতে বল ছুঁড়ে সৌম্যের ব্যাটিং শুধরে দিচ্ছেন, তাতে তার কিন্তু লাভ নেই ৷ সৌম্য যদি হাতুরুর ‘মাইডাস টাচ’-এ তাঁর পুরনো ফর্ম কিছুটা ফেরত পান, পাশাপাশি পেস বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে কিছুটা অবদান রাখতে পারেন, তাতে লাভ আমাদেরই ৷ না পারলে যা গালাগাল, যা সমালোচনা, তা কিন্তু সইতে হবে ঐ হাতুরুকে ৷

সৌম্যের কাছে একটাই প্রত্যাশা, হাতুরুকে আপনি আপনার জীবনে একটা মাইডাস টাচ হিসেবে নেন ৷ যে পেরিস্কোপ শটের জন্য দুনিয়া আপনাকে আলাদা করে চিনেছিল, সেই পেরিস্কোপ কিন্তু এক ধরণের দূরবীন ৷ এই দূরবীন এক আশ্চর্য যন্ত্র ৷ দূরবীন যদি আপনি সোজা করে ধরেন, তাহলে অনেক দূরের জিনিস আপনার চোখের সামনে ধরা পড়বে ৷ কিন্তু সেই দূরবীন যদি আপনি উল্টো করে ধরেন, দেখবেন, কাছের জিনিস গুলো অনেক দূরে দেখাচ্ছে ৷

সৌম্য, আমার মনে হয়, আপনি জীবনের দূরবীন আপনি দুভাবেই ধরে দেখেছেন ৷ দেখেছেন কত লক্ষ কোটি মানুষ আপনার জীবনের কাছে কাছে চলে এসেছে, আবার সেই মানুষগুলো এক সময় ঘৃণা ছড়াতে ছড়াতে আপনার থেকে কত দূরে চলে গেছে!

সেই দূরবীন (বল ব্যাট) এখন আরো একবার আপনার কোর্টে ৷ এটা কিভাবে খেলবেন এটা একান্তই আপনার ব্যাপার ৷ আমি কেবল জানি, আপনার ক্ষমতা আছে কিন্তু কতটা ইচ্ছা আছে তা জানি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link