সবার আগে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করলে স্বস্তি নেই ভারতীয় ক্রিকেট শিবিরে। স্কোয়াড ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনা–সমালোচনা। কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমর্থক ও বিশ্লেষকরা, আবার অনেক সাবেক ক্রিকেটার ও বিশেষজ্ঞ এই দলকে বলছেন একটি ‘ব্যালান্সড ইউনিট’।
ব্যাটিং-বোলিংয়ের সমন্বয়, অভিজ্ঞতা আর নতুনত্ব—সব মিলিয়ে ভারত যে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই বিশ্বকাপে নামছে, তা স্পষ্ট।এই পরিকল্পনার সবচেয়ে বড় ফোকাস মাঝের ওভারগুলো। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৭ থেকে ১৫ ওভার—এই সময়টাই ম্যাচের গতি বদলে দেয়। উইকেট পড়ে, রান আটকে যায় কিংবা হঠাৎ হাতছাড়া হয়ে যায় ম্যাচ। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট এই জায়গাটাকেই বিশ্বকাপে তাদের শক্তির জায়গা বানাতে চাইছে।
ভারত ও শ্রীলঙ্কার স্পিন-সহায়ক কন্ডিশন ভারতকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে। সেই বাস্তবতা মাথায় রেখেই স্কোয়াড সাজানো হয়েছে। ভারতের ১৫ সদস্যের দলে মিডল ওভারের জন্য ছয়জন নির্ভরযোগ্য বোলিং অপশন রয়েছে। স্পিন বিভাগে আছেন কুলদীপ যাদব, বরুণ চক্রবর্তী, অক্ষর প্যাটেল ও ওয়াশিংটন সুন্দর। পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে আছেন হার্দিক পান্ডিয়া ও শিভম দুবে।

এই কম্বিনেশন ইতোমধ্যেই দারুণ ফল দিয়েছে। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪-এর পর থেকে এই বোলিং আক্রমণ ব্যবহার করা হয়েছে ১৩টি ইনিংসে। সেখানে ভারত পেয়েছে ৩৩ উইকেট, স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১.৭, আর ইকোনমি ৭.৩৮। এমনকি এক ম্যাচে সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৫/২৬—যা মিডল ওভারে ভারতের দাপটই তুলে ধরে।
অন্য বড় দলগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে পার্থক্যটা আরও পরিষ্কার। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা নিউজিল্যান্ড—কেউই মিডল ওভারে ভারতের মতো নিয়ন্ত্রণ দেখাতে পারেনি। এমনকি সহ-আয়োজক শ্রীলঙ্কার স্ট্রাইক রেটও ভারতের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ ঘরের মাঠ হোক বা বাইরে—মিডল ওভারে ভারতই এই মুহূর্তে সবচেয়ে কার্যকর দল।
এই শক্তিটাই বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচ কিংবা সুপার এইটের ভার্চুয়াল নকআউটগুলোতে বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। স্পিন-বান্ধব দিনে ভারত খেলাতে পারে দুইজন খাঁটি স্পিনার—অক্ষর-বরুণ বা কুলদীপ-ওয়াশিংটন জুটি। আবার যদি পিচে সিম বা সুইং থাকে, তাহলে হার্দিক আর দুবে আছেন বিকল্প হিসেবে। এই ফ্লেক্সিবিলিটিই অন্য দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের ‘অলরাউন্ডার দর্শন’। বর্তমান কোচিং সেটআপের অধীনে ভারত ইচ্ছে করেই বেশি অলরাউন্ডার নিয়ে খেলছে। অনেকেই এটাকে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবলেও, এর বড় সুবিধা হচ্ছে মিডল ওভারে ব্যাটিং গভীরতা।
টপ অর্ডার ব্যর্থ হলেও, ভারতের আছে সাত-আট নম্বর পর্যন্ত এমন ব্যাটার, যারা ইনিংস গুছিয়ে নিতে কিংবা হঠাৎ গতি বাড়াতে পারে। এই কৌশল নিয়ে সমালোচনা আছে, কিন্তু চাপের ম্যাচে—বিশেষ করে রান তাড়ার সময়—এই অলরাউন্ডাররাই হতে পারেন ভারতের ত্রাতা।
মিডল ওভারে নিয়ন্ত্রণ, অলরাউন্ডার নির্ভর গভীরতা আর কন্ডিশন অনুযায়ী টিম কম্বিনেশন — এই তিন অস্ত্রই হতে পারে ভারতের শিরোপা ধরে রাখার চাবিকাঠি। আরেকটি বিশ্বকাপ জয়ের পথে ভারত যে শক্ত দাবিদার—সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ খুব কমই।











