পার্টটাইম বোলাররাও মিরাজের চাইতে এগিয়ে

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মিরাজ কি নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারেন? তিনি কি চেষ্টা করবেন নিজেকে শুধরে নিতে? যদি বোলিংটা তার দ্বিতীয় স্কিল হয়, তবুও তো স্রেফ ব্যাটিং দিয়ে মিরাজের টিকে থাকার কথা নয়।

সাকিবের বিকল্প হবেন মিরাজ- এই ভাবনার মৃত্যু ঘটছে প্রতিনিয়ত। মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট হাতে যথেষ্ট নড়বড়ে। যদিও তিনি রান পান টুকটাক, তবে বল হাতে একেবারেই বেহাল দশা মিরাজের। তিনি রীতিমত এক নির্বিষ বোলিং মেশিন। না তিনি রান বাঁচাতে পারেন, না তিনি উইকেট শিকার করতে পারেন প্রত্যাশামাফিক।

এই আলাপ মোটেও ভিত্তিহীন নয়। মিরাজের পরিসংখ্যান অন্তত বেশ জোরালভাবে জানান দিচ্ছে মিরাজের দুর্দশার। মিরাজের ওয়ানডে বোলিং গড় ৩৫.৯১। তার বোলিং স্ট্রাইকরেট ৪৫.৭। এই পরিসংখ্যান দ্বারা আসলে কি বোঝায়? প্রতি ৩৫.৯১ রান খরচের পর একটি উইকেট পান তিনি। আর প্রতি ৪৫.৭ বল পর পর একটি করে উইকেট গিয়েছে তার পকেটে। বিষয়টা কতটা দুশ্চিন্তার সেটা বোঝা যাবে বাকিদের পরিসংখ্যান টেনে আনলেই।

সাকিব আল হাসানের বোলিং গড় ২৯.৫২। আর তার স্ট্রাইকরেট ৩৯.৬। এতটুকুতেই বলে দেওয়া যায় মিরাজ অন্তত সাকিবের পদচিহ্ন অনুসরণ করছেন না। তিনি বরং উলটো পথে হাঁটছেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্য দুই নিয়মিত মুখ মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ। এই দুই জন বোলারের ওয়ানডে পরিসংখ্যানও মিরাজের চাইতে বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থানে রয়েছে।

মুস্তাফিজ ২৬.১৮ গড়ে ৩০.৩ স্ট্রাইকরেটে বোলিং করছেন এখনও। অথচ বলা হয় মুস্তাফিজ তার সেই কাটারের ধার হারিয়ে ফেলেছেন। অন্যদিকে নতুন বলে বাংলাদেশ দলের উইকেট শিকারি বোলার তাসকিন। তিনি ৩০.০৫ গড় ও ৩৩.৫ স্ট্রাইকরেটে বোলিং করছেন এখন ওয়ানডে ক্রিকেটে। এক্ষেত্রে সাকিবের চাইতে বল প্রতি উইকেট শিকারে তাসকিন এগিয়ে। রান প্রতি উইকেট শিকারে আবার সাকিব এগিয়ে। মুস্তাফিজ তাদের সবার চাইতেই এগিয়ে।

মিরাজ রয়েছে এই সংক্ষিপ্ত তালিকায় সবার পেছনে। তবে তালিকা যতটা দীর্ঘায়িত হবে মিরাজ ততই পিছিয়ে যেতে থাকবেন। কেননা পার্টটাইম বোলারদের চাইতেও তার বোলিং পারফরমেন্স বেজায় বাজে। উদাহরণ হিসেবে মাত্র ২৮ ওয়ানডে খেলা মুমিনুল হক সৌরভকে টেনে আনা যায়। মোটে ২৮টি ওয়ানডে খেলেছেন এর মধ্যে ১২ ইনিংসে হাত ঘুরিয়েছেন।

২৭.১৪ গড় আর ৩৩.৪ স্ট্রাইকরেটে সাত উইকেট শিকার করেছেন তিনি। সমসাময়িক খেলোয়াড়দের মধ্যে সৌম্য সরকারও পার্টটাইম বোলিং করেন। এমনকি তার বোলিং পরিসংখ্যানও মিরাজের চাইতে ভাল। ৩৫.৪৩ গড়ে বোলিং করেছেন তিনি। তার স্ট্রাইকরেট ৩৪.৮। সামগ্রিক চিত্রই  বলে দিচ্ছে মিরাজ কতটা নিষ্ফলা একজন বোলার।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মিরাজ কি নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারেন? তিনি কি চেষ্টা করবেন নিজেকে শুধরে নিতে? যদি বোলিংটা তার দ্বিতীয় স্কিল হয়, তবুও তো স্রেফ ব্যাটিং দিয়ে মিরাজের টিকে থাকার কথা নয়। কালেভদ্রে দু’একটা ম্যাচ তো যে কেউ জেতাতে পারে। এখন তাই প্রয়োজন মিরাজের আত্মোপলব্ধি, নতুবা মিরাজ শুধু নামের ভারে টিকে রইবেন, বাড়াবেন তিক্ততা।

Share via
Copy link