সাকিবের বিকল্প মিরাজ বাড়াচ্ছে দুশ্চিন্তা

যদিও বাংলাদেশের টপ অর্ডারের দুর্বলতার খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে যাবে মিরাজের এমন ধীরলয়ের ইনিংসগুলো। কিন্তু একটা দলে ঠিক কতজন অ্যাংকর প্রয়োজন?

সাকিব আল হাসানের অভাব পূরণ করবেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তেমন ভাবনা নিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ছক আঁকছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। দারুণ ফর্মেও রয়েছেন তিনি। সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের টুর্নামেন্ট সেরার মুকুট উঠেছে তার মাথায়। তবুও একটা প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন, মিরাজ কি আদতে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে?

মিরাজকে এক প্রকার বাধ্য হয়েই চার নম্বর ব্যাটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার প্রয়াশ চলছে। মিরাজেরও ইচ্ছে তাই।সাকিবের অভাব পূরণে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন মিলেছে মিরাজের। ২০২৪ সালে ছয়টি ইনিংসে তিনি ব্যাট করেছেন চার নম্বর পজিশনে। পরিসংখ্যান বলছে প্রতি দুই ইনিংসে একটি ফিফটি এসেছে, চমকপ্রদ! এই সময়ে তিনটি ফিফটি এসেছে মিরাজের ব্যাট থেকে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১১৯ বলে ৬৬, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০১ বলে ৭৪ ও ৭৭ রান করেছেন ৭৩ বল থেকে।

এই হচ্ছে মিরাজের তিন ফিফটির ফিরিস্তি। বাকি তিন ইনিংসে ২৮, ২২, ও এক রান করতে সক্ষম হয়েছেন। এর মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৮ রান তুলতে তার খেলতে হয়েছে ৫১ বল। ২২ করতে ৩৩ বল সময় নিয়েছেন। এক রানের ইনিংসটিতে আউট হয়েছেন পাঁচ বল খেলে।

এর মধ্যে ৩৩ বলে ২২ রান করা ম্যাচটিতেই কেবল বাংলাদেশ জয়ের দেখা পেয়েছে। এই পরিসংখ্যানগুলো বলে দিচ্ছে, চার নম্বরে খুব একটা সুবিধা মিরাজ করতে পারছেন না। মিরাজকে দিয়ে একই সাথে লম্বা ইনিংস ও চলনসই স্ট্রাইকরেট বজায় রাখা সম্ভব নয়। ২০২৪ সালে খেলা নয় ইনিংসে তার স্ট্রাইকরেট স্রেফ ৬৯.৩১। এর মধ্যে শেষ ছয় ইনিংসে তার স্ট্রাইকরেট ৬৬.৯২।

ওয়ানডে ক্রিকেট বদলে গেছে অনেকটাই। প্রায় প্রতিটা দলই ৩০০ এর বেশি দলীয় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া পাকিস্তানের উইকেট বরাবরই রানপ্রসবা। তাছাড়া আইসিসি ইভেন্টে সাধারণত ট্রু উইকেট হয়ে থাকে। সেদিক বিবেচনায় সংযুক্ত আরব-আমিরাতের উইকেটেও রান হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

এমন উইকেটে মিরাজের এমন ধীরলয়ের ব্যাটিং বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা বাড়াবে নিশ্চিতরূপেই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে আরব আমিরাতের মাটিতে খেলা তিন ইনিংসেও তার স্ট্রাইকরেটে ৫৯। দুশ্চিন্তার ঘনীভূত হচ্ছে নিশ্চয়ই।

যদিও বাংলাদেশের টপ অর্ডারের দুর্বলতার খুঁটির উপর দাঁড়িয়ে যাবে মিরাজের এমন ধীরলয়ের ইনিংসগুলো। কিন্তু একটা দলে ঠিক কতজন অ্যাংকর প্রয়োজন? তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাটিং ইনিংসের হাল ধরার কাজটা করেন। অনেক সময় ইনিংস মেরামতের কাজও তিনিই করেন। এরপরের ব্যাটারকে স্বাভাবিকভাবেই, বলের সাথে তাল মিলিয়ে রান করা উচিত। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেট এখন অবশ্য এমন ধারায় নেই।

শুরু থেকে শেষ, প্রায় প্রত্যেকেই, বল প্রতি রান তোলার কাজটা করে যান। সেদিক থেকে বাংলাদেশ ঢের পিছিয়ে। যদিও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলি অনিকরা শেষের দিকে দ্রুত কিছু রান তুলতে সক্ষম। কিন্তু মিরাজের অতিরিক্ত বল খরচ করা তাদের কাজের পরিধি সংকীর্ণ করে দেয়।

তাছাড়া বিপিএলে মিরাজের দ্রুত রান তোলা একটা ভ্রম। তিনি অধিকাংশ ম্যাচে খেলেছেন ওপেনিং পজিশনে। পাওয়ার প্লে-র সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাউন্ডারি নির্ভর ব্যাটিং করেছেন তিনি। তাছাড়া পেশিশক্তিও যথাযথ নেই তার, যে চাইলেই তিনি বড় বড় সব শটের পসরা সাজিয়ে বসবেন। তাইতো তার ইনিংস মেরামতের চাইতেও বল প্রতি রান তোলার দিকে নজর বাড়ানো প্রয়োজন। নতুবা সেরা সাফল্য প্রত্যাশার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আবারও হবে বাংলাদেশের ভরাডুবি।

Share via
Copy link