টি-টোয়েন্টি ওপেনার হওয়া ছাড়া গতি নেই মিরাজের

ওই একটা রোলেই মিরাজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার হতে পারে দীর্ঘায়িত। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতে টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়াবে তার জন্যে।

ওপেনিংয়ে নেমে ৭০ রানের একটা ইনিংস খেললেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে তার ইনিংসটি খুলনা টাইগার্সের জয়ের ভীত গড়ে দিয়েছে। তাইতো ওই একটা রোলেই মিরাজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার হতে পারে দীর্ঘায়িত। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতে টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়াবে তার জন্যে।

মিরাজ অলরাউন্ডার। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে তিনি বড্ড বেশি নিষ্ক্রিয়। বল হাতে এবারের বিপিএলটা তার কাটছে বেজায় বাজে। টেস্ট লেন্থের বোলিং দিয়ে বেধম প্রহারের শিকার হচ্ছেন তিনি। এই যেমন সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষেও তিনি দেদারছে রান বিলিয়েছেন।

ব্যক্তিগত চার ওভারে ৪০ রান হজম করেছেন তিনি। এবারের বিপিএলে প্রায় ৮.৫৮ ইকোনমিতে রান খরচা করছেন তিনি। খুলনাতে খেলা নিয়মিত স্পিনারদের মধ্যে তার রান ব্যয়ের মাত্রাই বেশি। পাশাপাশি উইকেট পেয়েছেন নয়টি। এর মধ্যে উইকেট শূন্য থেকেছেন চার ম্যাচে।

টি-টোয়েন্টি ঘরোনার বোলিংটা অন্তত তাকে দিয়ে হয় না। তিনি ব্যাট হাতেও খুব একটা মারকুটে নন। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে প্রথম ফিফটি তুলে নিয়েছেন তিনি ওপেনিংয়ে নেমে। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেছেন তিন নম্বরে নেমে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ রানও করেছেন তিন নম্বরে ব্যাট করতে এসে।

এই হচ্ছে তার ব্যাটিংয়ের ফিরিস্তি। বাকি ম্যাচগুলোতে খুব একটা কার্যকর ইনিংসের দেখা মেলেনি তার ব্যাট থেকে। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন তার ওপেনার হিসেবে খেলা উচিত। এর প্রধান কারণ হচ্ছে পাওয়ার প্লে-তে থাকা ফিল্ড রেস্ট্রিকশন।

ক্ষুদ্র সংস্করণে ইনিংসের শুরুতে মাত্র দুই জন খেলোয়াড় থাকেন ত্রিশ গজ বৃত্তের বাইরে। সেই সময়টায় দারুণ কাজে লাগাতে পারেন। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ইনিংসটিকে উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। এই ম্যাচে পাওয়ার প্লে চলাকালীন দুইটি ছক্কা ও পাঁচটি চার মেরেছেন মিরাজ।

পাওয়ার প্লে শেষে ২৩ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থেকেছেন তিনি। ঠিক এরপর থেকেই মিরাজের বাউন্ডারি হাঁকানোর প্রবণতা কমতে শুরু করে। আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত আর মাত্র তিনটি চার মারতে পেরেছেন মিরাজ। প্রথম ছয় ওভারের পর পরবর্তী ২৯ রান নিতে খরচ হয়েছে ২৭ বল।

শুধু সেই ম্যাচ নয়। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৩৯ করা ইনিংসটিতেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। পাওয়ার প্লের মধ্যে তিনটি চার ও দুইটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন মিরাজ। দশ বলে ২৫ রান ছিল তার নামের পাশে। এরপরে ১৪ বলে ১৪ রান নিতে সক্ষম হন মিরাজ। একটিও বাউন্ডারি মারতে পারেননি তিনি সে ইনিংসে।

কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম ঘটেছিল ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ৩৩ রান করা ইনিংসটিতে। পাওয়ার প্লে শেষে তার রান ছিল ১২ বলে সাত। এরপর ২৬ রান নিয়েছেন ১৭ বল থেকে। এই ম্যাচেও রান করতে তাকে সেট হওয়ার সময় নিতে হয়েছে। কেননা এদিন পাওয়ার প্লে-তে খুব বেশি বল খেলার সুযোগ মিরাজের মেলেনি। এই তিন ইনিংসে পাওয়ার প্লে-তে মিরাজের স্ট্রাইকরেট ছিল ১৬২। আর পাওয়ার প্লে শেষে তার স্ট্রাইকরেট নেমে দাঁড়ায় ১১৯-এ।

এই ছোট্ট তথ্য-উপাত্তই শুরুতে বলা স্টেটমেন্টের স্বপক্ষের যুক্তি। স্রেফ ওপেনার হিসেবে নিজেকে গড়তে পারলেই মিরাজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার এগিয়ে যাবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সে সুযোগ পেতে হলে তাকে অপেক্ষা করতে হবে বাকি ওপেনারদের ব্যর্থতার। এছাড়া মিরাজের উচিত টি-টোয়েন্টির চিন্তা বাদ দেওয়া। ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে তার দেওয়ার অনেক কিছুই আছে।

Share via
Copy link