মঈন ‘দ্য ইমপ্যাক্টফুল’ আলী

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বড় ইনিংস খেলার চেয়ে ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস খেলা বেশি দরকার, এই ক’দিন আগেই এমন দর্শনের কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল হেড শ্রীধরন শ্রীরাম। সে দর্শনের পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছিল অনেকেই। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে একটু বেরিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি দিলেই বুঝা যায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দলের পাশে ‘জয়ী’ নামক শব্দটা বসে ঐ ছোট ছোট ইম্প্যাক্টফুল কন্ট্রিবিউশনের কারণেই।  

করাচিতে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে ১৯৯ রান। ১৩ তম ওভারের ৩য় বলে বেন ডাকেট যখন আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছেন তখন তাদের রান ১০১। এ সময়ে ব্যাটিংয়ে আসলেন অধিনায়ক মঈন আলী। মঈন আলীর পরে পুরোদস্তুর ব্যাটার বলতে তেমন কেউ নেই। স্যাম কারান, উইলিরা যা একটু স্লগে ব্যাটিং করতে পারেন। এই আরকি।

তাই চাইলেই ২/৩ ওভার দেখে শুনে খেলতে পারতেন মঈন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। পাকিস্তানের বোলিং অ্যাটাককে উল্টো কাউন্টার অ্যাটাক করলেন তিনি। চার বাউন্ডারি আর চার ছক্কায় ২৩ বলে খেললেন অপরাজিত ৫৫ রানের ইনিংস। আর সেই ইনিংসের বদৌলতেই ১০১ থেকে এক ঝটকায় দলের রান সংখ্যা নিয়ে গেলেন ১৯৯ তে। অর্থাৎ মঈন আলী উইকেটে আসার পর পরবর্তী ৪৫ বলে দলে রান হয়েছে ৯৮। 

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে মঈন আলীর গড় ২০ এরও কম। পরিসংখ্যান বিবেচনায় এক কথাতেই বলে দেওয়া যায় ব্যাটার হিসেবে তিনি আর যাই হোক সফল নন। কিন্তু পরিসংখ্যান তো আর ইম্প্যাক্টের কথা বলে না। পরিস্থিতির কথা বলে না। ম্যাচজয়ে অবদানের কথা বলে না।

পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগে মঈন আলীর শেষ  পাঁচটি টোয়েন্টি ম্যাচের দিকে একটু তাকানো যাক। এক শূণ্যসহ এই ৫ ম্যাচে তিনি রান করেছেন ১১৮ রান। অর্থাৎ এই ২০ পেরিয়ে ২২ এর কাছাকাছি গড়। পরিসংখ্যান আপনাকে দেখাবে তাঁর শেষ ৫ ম্যাচে গড়, ২১ এর কিছু বেশি। 

কিন্তু এই ৫ ম্যাচকে যদি আলাদা করে বিবেচনা করা হয়, তাহলে দেখা যায় তিনি এক ম্যাচে একটি ১৮ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলেছেন, আরেকটিতে ২১ বলে ৩৫ করেছেন, আর বাকি ৩ ম্যাচের একটিতে ১৭ বলে ২৮ এবং বাকি দুটিতে ০ ও ৩ করেছেন। এই ০ ও ৩ এর কারণে গড়টা তাঁর ঠিকই কমেছে। কিন্তু বাকি তিনটি ম্যাচের ইনিংস গুলো দেখলেই বুঝা যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেটা তিনি কম বলে দলে কত বেশি রান যোগ করা যায় সেই তাগিদেই খেলেন।  আর ক্রিকেটের এ ছোট্ট সংস্করণে মিডল অর্ডার ব্যাটার কিংবা ফিনিশারদের এমন ভাবনা থাকাই উচিৎ। 

মঈন আলী এবারের বছরের শুরুটা করেছিলেন শূণ্য দিয়ে। এক ম্যাচ বাদে আবারো শূণ্য। একদমই যাচ্ছেতাই ফর্ম। কিন্তু তারপরও নিজের ইন্টেন্টটা বদলালেন না। যেভাবে তিনি খেলতে পছন্দ করেন সেভাবেই ব্যাটিং করতে থাকলেন।  এতেই মিলল সফলতা। পরবর্তী নয় ম্যাচে করলেন তিনটি হাফ সেঞ্চুরি। তিন হাফসেঞ্চুরির প্রত্যেকটাতেই ২০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেট। 

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৮ বলে ৬৩, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৮ বলে ৫২ আর পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩ বলে ৫৫। প্রত্যেকটাই ঝড়ো ইনিংস, একই সাথে কার্যকারী। বছরে তিনটা ফিফটির সাথে তিনটা শূণ্য রানের ইনিংসও তাঁর আছে। এখানেই তিনি গড়ে পিছিয়ে পড়বেন। কিন্তু এই ৬ ম্যাচে ১১০ স্ট্রাইকরেটে ৫০ গড়ে রান করা যেকোনো ব্যাটারের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন মঈন। অন্তত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বিবেচনায় বড় কিংবা গড় রানের চেয়ে এই ইম্প্যাক্টফুল ইনিংসগুলোই বেশি দরকার। 

যদিও শেষমেশ বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের দেয়াল ভাঙতে পারেনি ইংল্যান্ডের কোন বোলার। ফলাফলস্বরুপ পরাজয় বরণ করতে হয়েছে থ্রি লায়ন্সদের।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link