ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের সুপার লিগে এসেই যেন পথ হারিয়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। সুপার লিগের তিন ম্যাচে টানা হেরে শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে গেছে শিরোপা প্রত্যাশী ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি। সুপার লিগে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কাছে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে শুভাগত হোমের দল।
এই ম্যাচ জিতে শিরোপার আশা বাঁচিয়ে রাখলো শেখ জামাল। তবে শিরোপা জিততে বাকি দুই দল আবাহনী ও প্রাইম ব্যাংকের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে শেখ জামালকে। আজ রেলিগেশন লিগের একমাত্র ম্যাচে জয় পেয়েছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জও। গতকাল দ্বিতীয় ম্যাচ জিতেই অবনমন ঠেকিয়ে ছিল রূপগঞ্জ।
রেলিগেশন লিগের ম্যাচে ব্যাট হাতে অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন মেহেদী মারুফ ও জাকির আলী। দুজন উদ্বোধনী জুটিতে করা ১৬৯ রান এবারের আসরের যে কোন জুটিতে সর্বোচ্চ রান। কিন্তু সেঞ্চুরি মিস করেছেন দুজনই। জাকিরের ব্যাট থেকে আসে ৭৬ রান ও মেহেদী করেন ৯৪ রান।
আর শেখ জামালের জয়ে ব্যাট হাতে শেষের দিকে ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছেন নুরুল হাসান সোহান ও তানভির হায়দার। এই দুজনের দারুণ ইনিংসে ভর করেই জয় নিশ্চিত করে শেখ জামাল। তবে মোহামেডানের দেওয়া ১৩৪ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি শেখ জামালের।
ইনিংসের প্রথম ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই আবু জায়েদ চোধুরী রাহীর প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান সৈকত আলী। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে জুটিতে ৫৫ রান যোগ করে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন মোহাম্মদ আশরাফুল ও ইমরুল কায়েস।
কিন্তু উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। ২১ বলে ২৫ রান করা ইমরুলকে শুভাগত হোম ফিরিয়ে দেওয়ার পর ৪২ বলে ৩৮ রান করা আশরাফুলকে ফিরিয়ে দেন আসিফ হাসান। তবে ৮৪ রানে ৩ উইকেট হারালেও জয় পেতে সমস্য হয়নি শেখ জামালের।
চতুর্থ উইকেটে তানভির হায়দার ও নুরুল হাসান সোহানের ৫৩ রানের জুটিতে জয় নিশ্চিত করে শেখ জামাল। ৩১ বলে ৩৬ রান করে সোহান ও ১৭ বলে ৩২ রান করে তানভির অপরাজিত থাকেন। মোহামেডানের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন শুভাগত হোম, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী ও আসিফ হাসান।
এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা মোহামেডানের শুরুটা ভালো হয়নি। ইনিংসের প্রথম ওভারে ১ রান করে আব্দুল মজিদ ফিরে যাওয়ার পর পঞ্চম ওভারে ফিরে যান ইরফান শুকুর। ১৮ বলে ১৭ রান আসে শুকুরের ব্যাট থেকে। ৩১ রানে দুই উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন পারভেজ হোসেন ইমন ও শামসুর রহমান।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ৬১ রান। কিন্তু হাফসেঞ্চুরি মিস করেছেন দুজনই। ৩৫ বলে ৪৬ রান করে ইমন বিদায় নেওয়ার পর ৪০ বলে ৪৯ রান করে ফিরে যান শামসুর। এরপর দ্রুত উইকেট হারানোর ফলে শেষের দিকে দ্রুত রান তুলতে পারেনি মোহামেডান।
২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রান সংগ্রহ করে মোহামেডান। ৯ রান করে অপরাজিত থাকেন ইয়াসিন আরাফাত। শেখ জামালের পক্ষে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন এবাদত হোসেন ও জিয়াউর রহমান। এছাড়া একটি উইকেট পেয়েছেন মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদি।
বিকেএসপিতে রেলিগেশন লিগের ম্যাচে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে ২৭ রানে হারিয়েছে রূপগঞ্জ। রূপগঞ্জের দেওয়া ২০১ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সোহাগ গাজী বোলিং তোপের মুখে পড়ে ১০০ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় পারটেক্স।
তবে নবম উইকেট জুটিতে ম্যাচ জমিয়ে দেন ইজহারুল ইসলাম ও জয়নাল ইসলাম। তবে ৭৩ রানের হার না মানা জুটি গড়েও দলকে জেতাতে পারেননি দুজন। ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৭৩ রান সংগ্রহ করে পারটেক্স। ইজহারুল ২২ বলে ৩৮ ও জয়নাল ১৪ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। সোহাগ গাজী তিনটি উইকেট শিকার করেন।
এর আগে টেসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা রূপগঞ্জকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন মেহেদী মারুফ ও জাকির আলী। উদ্বোধনী জুটিতে দুজন যোগ করেন ১৬৯ রান। যা এবারের আসরে যে কোন জুটিতে সর্বোচ্চ রান। দারুণ খেলতে থাকা দুই ওপেনারের সামনেই ছিল সেঞ্চুরি করার সুযোগ। কিন্তু সেঞ্চুরি মিস করেছেন দুজনই।
প্রথমে ৪৮ বলে ৭৬ রান করে জাকির ফিরে যাওয়ার পর ইনিংসের শেষ ওভারে ৬৩ বলে ৯৪ রান করে ফিরে যান মেহেদী। ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০০ রান সংগ্রহ করে রূপগঞ্জ। যা এবারের আসরের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। পারটেক্সের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন নাহিদুজ্জামান ও শাহাদাত হোসেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
- মোহামেডান-শেখ জামাল
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ১৩৩/৯ (ওভার: ২০; পারভেজ- ৪৬, শামসুর- ৪৯, ইরফান- ১৭)
(এবাদত- ৪-০-১৭-৩, জিয়াউর- ৪-০-২৯-৩)
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ১৩৭/৩ (ওভার: ১৯; আশরাফুল- ৩৮, ইমরুল- ২৫, সোহান- ৩৬*, তানভির- ৩২*) (শুভাগত- ৩-০-১৯-১)
ফলাফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৭ উইকেটে জয়ী।
- রূপগঞ্জ-পারটেক্স
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ২০০/৩ (ওভার: ২০; জাকির- ৭৬, মেহেদী- ৯৪) (শাহাদাত- ৪-০-৪২-১)
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ১৭৩/৮ (ওভার: ২০; জনি- ২৬, ইজহারুল- ৩৮*, জয়নাল- ৩৭*) (সোহাগ- ৪-০-১৭-৩)
ফলাফল: লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ২৭ রানে জয়ী।