মোহাম্মদ আব্বাস, ঝরে পড়া পাকিস্তানি নক্ষত্র

এই বয়সে এসে আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারটা কিছুটা থেমে গেলেও ফিরে দেখার মতো অর্জনের অভাব নেই আব্বাসের। পাকিস্তান টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলার না হলেও তার সময়ের অন্যতম নির্ভরযোগ্য একজন বোলারের খেতাবটা তাকে দেয়াই যায়।

টেস্ট হোক বা সীমিত ওভারের ক্রিকেট পাকিস্তান ক্রিকেট বরাবরই চমকপ্রদ সব পেস বোলার ক্রিকেট বিশ্বকে উপহার দিয়ে আসছে। কিন্তু আজ এমন কোনো অতিমানবীয় সিম বোলার এর কথা বলবো না।

বরং আজ পাকিস্তান টেস্ট ক্রিকেটের সেই হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্রের কথা বলবো যিনি অশেষ সম্ভাবনাময় ছোট্ট ক্যারিয়ারেই বেশ কয়েকবার ঝলসে উঠেছেন। তবে নাসিম,শাহীনদের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছেন। তিনি হলেন পাকিস্তানের ছোট্ট এক গ্রাম জাতেকেয় থেকে উঠে আসা মোহাম্মদ আব্বাস।

আব্বাসের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল কিছুটা দু:স্বপ্নের মতো। প্রথম পাঁচ বছর তিনি অন্য সাধারণ সাদামাটা দশজন সিম বোলার এর মতোই কাটিয়েছেন। তিনি প্রথম চমকের দেখা পান ২০১৪ সালে।

সেই থেকে ২০১৭ নাগাদ তিনি ১৭০ টি উইকেট লাভ করেন। এর ভেতরেই তার উল্লেখযোগ্য অর্জন ৬১ টি উইকেট নিয়ে ১৫-১৬ কায়েদে আজম ট্রফির সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এবং সেই প্রতিযোগিতারই ১৭-১৮ সিজনে তার দল সুই নর্দান গ্যাস পাইপলাইন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭ খেলায় ৩৭টি উইকেট লাভ করেন।

তার এই সাফল্যের জের ধরেই এপ্রিল ২০১৭ সালে ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান টেস্ট দলের হয়ে উইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজে উইন্ডিজের সাবিনা পার্কে আন্তর্জাতিক টেস্ট অভিষেক করেন। যেখানে তার প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ক্রেইগ ব্রাথওয়েইট কে তিনি সাজঘরে ফেরান। পরবর্তীতে সেই টেস্টে তার নামের পাশে আরও দুইটি উইকেট যুক্ত হয়। সেই সিরিজের ৩য় ম্যাচেই তার প্রথম পাঁচ উইকেটের সাক্ষাত পান।

সেই সিরিজের পর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৮ সালের মে-জুন ব্যপি সিরিজেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পান ১০ উইকেট এবং প্লেয়ার অব দ্যা সিরিজ হন। সেই বছরের আগস্টেই হাতে পান বহুলাকাঙ্ক্ষিত সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্ট এবং অর্জন করেন পিসিবির টেস্ট প্লেয়ার অব দ্যা ইয়ার খেতাব।

তারপর সংযুক্ত আরব আমিরাতে অজিদের বিরুদ্ধে ওই বছরেরই অক্টোবর মাসে দেখা পান তার ৫০তম উইকেটের। যা যুগ্মভাবে পাক টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম ৫০ উইকেট শিকারের রেকর্ড(১০টেস্ট) । স্বীকৃতি পান ৫ জন আইসিসি ব্রেক আউট স্টারদের একজন হিসেবে।

ফলোতো, আব্বাস অন্য পাঁচ জন সফল পাকিস্তানি সিম বোলারের মতো গতি নির্ভর কখনোই ছিলেন না। বরং তার মধ্যে ছিল বলকে সিমের বিপরীতে মুভ করার অনবদ্য ক্ষমতা। তার এই ক্ষমতাকেই তিনি আরও জোড়ালো করেন বলকে সুইং করানোর মাধ্যমে। যার জন্য তিনি বাতাসেও কিছুটা মুভমেন্ট পেতেন।

টেস্ট বোলিং এ উইকেট সংখ্যা বা বলের বৈচিত্র‍্যের বাইরেও আরেকটি দিকে তিনি অন্য সমস্ত পাক বোলার কে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। তা হলো তার অতিমানবীয় বোলিং গড়। প্রথম দশ টেস্টে তিনি ১৫.৬৪ গড়ে ৫৯টি উইকেট শিকার করেন। যা পরবর্তী ১১ টেস্টে পৌঁছোয় ৯০ এর কোঠায় তাও আবার ২৩.০২ গড়ে। যার তুলনা কেবল কিংবদন্তি ইমরান খানের সাথেই সম্ভব। সবশেষ পাকিস্তান টেস্ট দলের হয়ে এর চেয়েও কম গড়ে তিনিই বল করেছেন।

দু:জনক ভাবে ‘১৮ এর সেই ক্ষুরধার আব্বাস ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকেন। ‘২১ সালের মাঝামাঝিতে এসে তিনি কেবল দলে নিজের জায়গাই খোয়াননি বরং বাদ পরে যান সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্ট থেকেও। ওই বছরের শুরুতেই দলের ফিজিওর কাছে তার ডাক পরে। কারণ হচ্ছে, প্রশিক্ষণের পন্থা এবং স্বল্প গতি।

এ অবস্থায় আব্বাস ‘২১ সালের ৪ঠা মার্চ ২ মাসের জন্য একজন বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে যোগ দেন হ্যাম্পশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট দলে। যেখানে তিনি মিডলসেক্সের বিরুদ্ধে এক হ্যাট্রিক সহ ১২ ম্যাচে ৫০ উইকেট শিকার করেন। এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। পরের বছরও তিনি সেই একই মেজাজে কায়েদে আজম ট্রফিতে সাজঘরে ১৮ জন ব্যাটার কে।

এত চমৎকার পারফর্মেন্সের পরেও বাদ সাধে তার বয়স। পাকিস্তান দল ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হোম সিরিজে দলে ভেরায় কিছুটা তারই মতো বৈচিত্র্যনির্ভর তুলনামূলক তরুণ সিম বোলার মোহাম্মদ আলীকে। সেই থেকেই বৈচিত্রের জাদুকর আব্বাস কে আন্তর্জাতিক টেস্টে আর দেখা যায়নি।

যদিও, সদ্য শেষ হওয়া পাকিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজ বা তার আগের কিছু সিরিজেও মোহাম্মদ আলী নিজেকে নাসিম, শাহীনদের ভিড়ে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। বরং পাক-বাংলাদেশ সিরিজের সিরিজ নির্ধারনী ২য় ম্যাচে কিছুটা খেই হারানোই মনে হয়েছে তাকে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে দলে ৩৪ বছর বয়েসী মোহাম্মদ আব্বাস থাকলে পাকিস্তান সাজঘরের আমেজ হয়তো কিছুটা ভিন্ন হলেও হতে পারতো।

এই বয়সে এসে আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারটা কিছুটা থেমে গেলেও ফিরে দেখার মতো অর্জনের অভাব নেই আব্বাসের। পাকিস্তান টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলার না হলেও তার সময়ের অন্যতম নির্ভরযোগ্য একজন বোলারের খেতাবটা তাকে দেয়াই যায়।

Share via
Copy link