বিজ্ঞাপন ছিলেন তিনিও

সেই বিস্ময় জাগানো বোলারটি ছিলেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার এনামুল হক মনি। সাঈদ আনোয়ার আর শচীন টেন্ডুলকারকে আউট করেছিলেন ১৯৯৭ সালের এশিয়া কাপে। এর মাঝে শচীনকে করেছিলেন সরাসরি বোল্ড আউট। ৯৯ এর বিশ্বকাপে করেছিলেন মার্ক ওয়াহ কে আউট যেখানে ওয়াহকে ফাঁদে ফেলেছিলেন স্ট্যাম্পিং এর। ওয়ানডেতে পাকিস্তানের ইউনুস খান আর মোহাম্মদ ইউসুফকেও ১ বার করে আউট করেছেন। এছাড়া টেস্টে চন্দরপল কে আউট করেছেন ২ বার, সেটাও মাত্র ৪ আর ১৬ রানে।

৯০ এর দশকে যারা ক্রিকেট খেলা দেখেছেন তাদের মোটামুটি জানা আছে যে শচীন টেন্ডুলকার কোন মানের ব্যাটসম্যান ছিলেন। তবে সেই সময় ওয়ানডে ক্রিকেটের খুব দুর্দান্ত দুই ব্যাটসম্যান ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ওয়াহ আর পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ারও। মার্ক ওয়াহ তো ব্যাটিং স্টাইলের জন্যেও সমাদৃত ছিলেন।

যে কোন একজন বোলারের কাছে এই উইকেট গুলো খুবই কাঙ্ক্ষিত ছিল। তবে আপনি যদি ৯০ দশকের বাংলাদেশ দল খেলেন তখন এসব ব্যাটসম্যানের উইকেট আশা করা কিছুটা বাড়াবাড়িই বটে। সবচেয়ে বড় কথা তখন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামা মানেই এসব ব্যাটসম্যানদের রান সংখ্যা কিংবা ব্যাক্তিগত গড় একটু বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ। তুলনামূলক দূর্বল দলে খেললে চাইলেও সবসময় উইকেট নেওয়ার বোলিং করতে পারবেন না, একটু রানের গতির দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে কারণ উইকেট নিতে চাইলে রান বেশি দেওয়ার একটু ঝুঁকি থেকে যায়।

তবে আপনি যখন জানবেন এসব সীমাবদ্ধতা সত্বেও কোন একজন বোলার তাঁর ক্ষুদ্র ক্যারিয়ারে শচীন, সাঈদ আনোয়ার আর মার্ক ওয়াহর মতো ব্যাটসম্যানদের মতো উইকেট পেয়েছেন তখন তার সম্পর্কে একটু বিস্ময় জাগলেও জাগতে পারে।

সেই বিস্ময় জাগানো বোলারটি ছিলেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার এনামুল হক মনি। সাঈদ আনোয়ার আর শচীন টেন্ডুলকারকে আউট করেছিলেন ১৯৯৭ সালের এশিয়া কাপে। এর মাঝে শচীনকে করেছিলেন সরাসরি বোল্ড আউট। ৯৯ এর বিশ্বকাপে করেছিলেন মার্ক ওয়াহ কে আউট যেখানে ওয়াহকে ফাঁদে ফেলেছিলেন স্ট্যাম্পিং এর। ওয়ানডেতে পাকিস্তানের ইউনুস খান আর মোহাম্মদ ইউসুফকেও ১ বার করে আউট করেছেন। এছাড়া টেস্টে চন্দরপল কে আউট করেছেন ২ বার, সেটাও মাত্র ৪ আর ১৬ রানে।

১০ টেস্টে ৫৭.০৫ গড়ে ১৮ উইকেট কিংবা ২৯ টি ওয়ানডেতে ৫৭ গড়ে ১৯ উইকেট দেখে আপনার কাছে মনে হতেই পারে যে পরিসংখ্যানটা খুবই দুর্বল। তবে সেই মূহুর্তে বাংলাদেশের জন্য খুবই কার্যকরী খেলোয়াড় ছিলেন তিনি।

মূলত স্পিনার হলেও তিনি বাংলাদেশ দলের একজন অলরাউন্ডার ছিলেন। আইসিসি ট্রফিতে অংশ নিয়েছিলেন ৩ বার; ১৯৯০, ১৯৯৪ আর ১৯৯৭ সালে। এই তিন সিরিজে তিনি উইকেট পান ৩৫ টি। এছাড়া ১৯৯০ সালের দ্বিতীয় পর্বে ডেনিশদের বিপক্ষে জয়ী ম্যাচে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। ডেনিশদের করা ২৩৩ রানের জবাবে নূরুল আবেদিন (৮৫), আকরাম খান (৫০) আর নান্নু (৩৭) ভালো জবাব দিতে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় মনির ব্যাটের উপর ভর করে। সেই ম্যাচের শেষ ওভারে ১৭ রান নিয়ে ২ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশকে জেতান। বোলিং এ দুই উইকেট পাওয়ায় ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হন তিনি।

তার ক্যারিয়ারের স্মরণীয় ইনিংস ছিল ১৯৯২ সালে পশ্চিম বাংলার বিপক্ষে। সেই ম্যাচে সফরকারী দলের ৩৮৫ রানের জবাবে স্বাগতিক দল ৭৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। সেই মূহুর্তে মনি জুটি গড়ে তুলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সাথে। বুলবুল ৫৫ রান করে আউট হয়ে গেলেও মনি শেষ পর্যন্ত ১৩১ রানের একটা ইনিংস খেলেন।

এছাড়া মনি বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে জয়ী দলের সদস্য ছিলেন এবং সেই ম্যাচে ১০ ওভার বল করে ৪৫ রানের বিপক্ষে দুইটি উইকেট দখল করেন।

খেলোয়াড়ী ক্যারিয়ার শেষ করে মনি রেফারির ভুমিকায় অবতীর্ণ হন। ২০১২ সালে ন্যাপিয়ারে নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের টেস্ট ম্যাচে অ্যাম্পায়ারিং এর দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম বার এই গৌরব অর্জন করেন। বলাই বাহুল্য, বাংলাদেশের শীর্ষ আম্পায়ারদের একজন ছিলেন  তিনি। আম্পায়ারিং ছেড়ে দেওয়ার আগে বিদেশের বুকে তিনিও কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন ছিলেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...