পর্তুগালের কোচ হতে পারেন মরিনহো, তবে…

কাতার বিশ্বকাপে শেষ আটেই থেমে গেছে পর্তুগালের পথযাত্রা। একই সাথে পর্তুগিজ কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের কোচিও ইনিংসও প্রায় শেষের পথে। পর্তুগালের সাথে আর চুক্তি নবায়ন হচ্ছে না তাঁর। কানাঘুষা এটাও শোনা যাচ্ছে যে, তিনি নাকি এরই মধ্যে পর্তুগালের কোচ হিসেবে অব্যাহতি চেয়েছেন।

পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশনও তাতে আপত্তি জানায়নি। বরং নতুন কোচের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা একটা চমক নিয়েই হাজির হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বেশ কিছু গণমাধ্যম জানাচ্ছে, পর্তুগালের পরবর্তী কোচ হিসেবে সান্তোসের জায়গায় আসতে পারেন দ্য স্পেশাল ওয়ান হোসে মরিনহো।

মরিনহো এখন ইতালিয়ান ক্লাব এএস রোমার দায়িত্বে আছেন। তাই পর্তুগালের কোচ হওয়ার ক্ষেত্রে এখনও বেশ কিছু ধোঁয়াশা কিংবা অনিশ্চয়তা আছে। তাছাড়া এর আগে কোনো জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে বারবারই অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন মরিনহো।

২০১৪ বিশ্বকাপের পর গ্লোবাল ফুটবল অ্যাম্বাসেডর অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার জাতীয় দলের কোচ হওয়ার কোয়ালিটি নেই। কারণ ন্যাশনাল টিমের কোচরা খেলোয়াড়দের পান খুবই কম সময়ের জন্য। এর মধ্যেই তাঁকে পরিকল্পনা আটতে হয়, ট্যাক্টিস সাজাতে হয়। আমি এতে অভ্যস্ত নই। আর আমি এভাবে খাপ খাইয়ে নিতেও পারবো না।’

তবে মরিনহো এটাও জানিয়েছিলেন যে, ‘যখন আমি ক্যারিয়ারের শেষে থাকব তখন আমি এটা ভেবে দেখব।’ হোসে মরিনহোর এখন বয়স ৫৯। ক্লাব ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সকল ট্রফিই তিনি জিতেছেন। ক্লাব ক্যারিয়ারে সফলতম কোচের ভীড়ে মরিনহো প্রথম সারিতেই থাকবেন। এই মুহূর্তে তিনি ক্যারিয়ারের শেষ দিকেই আছেন। তাই ক্লাব ক্যারিয়ার ছেড়ে নতুন দায়িত্বে মরিনহোকে এবার দেখা যেতেই পারে।

তবে এর মাঝে একটি বাঁধাও রয়েছে। মরিনহো এখন রোমার সাথে চুক্তিতে রয়েছেন। ২০২১ এর জুলাইতে তিন বছরের চুক্তিতে রোমাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। সেই হিসেবে এখনও ১৮ মাসের চুক্তি বাকি রয়েছে মরিনহোর। অবশ্য এ চুক্তি ভেঙ্গে পর্তুগালে যোগ দেওয়ার পথ তাঁর সামনে যথারীতি খোলা রয়েছে। পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশন চুক্তিভঙ্গের জরিমানা ফি দিয়েও তাঁকে দলে নিতে রাজি।

সব কিছু ঠিক থাকলেও এই মহূর্তে পর্তুগালে নতুন এক সমস্যার নাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই ৩৯ বছরে পা দেবেন রোনালদো। কিন্তু জাতীয় দল নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কিছুই জানাননি এ পর্তুগিজ ফুটবলার। এ বারের বিশ্বকাপে অধিনায়ক তিনিই ছিলেন। কিন্তু একটি ম্যাচেও পুরো নব্বই খেলার সুযোগ পাননি তিনি।

নক আউট পর্বের ম্যাচগুলোতে তো শুরুর একাদশেই তাঁর জায়গা হয়নি। শেষ ১৬-র ম্যাচে তাঁর বদলে নামা গনসালো রামোস করেছিলেন হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে কাতার বিশ্বকাপে একদমই ভাল যায়নি রোনালদোর। কিন্তু তিনি শেষের বার্তাও দেননি। আর এখানেই কিছুটা বিপাকে পড়েছে পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশন। কারণ নিজের বাজে সময়ে কোচের দিক আঙুল তোলাটা এখন এ তারকার নিত্যদিনের চিত্র হয়ে উঠেছে।

আর এ কারণেই সিংহভাগ কোচই তাঁর অধীনে রোনালদোকে কোচিং করাতে ঠিক আগ্রহী নয়। সেই তালিকায় আছেন স্বয়ং হোসে মরিনহোও। একটু অবাক শোনালেও এটাই সত্যি। রিয়াল মাদ্রিদে মরিনহোর অধীনে ৩ টি মৌসুম খেলেছিলেন রোনালদো। সেখানে এই যুগলবন্দী রিয়াল মাদ্রিদের ক্যাবিনেটে একটি লা লিগা, একটি কোপা দেল রে আর দুটি সুপার কাপ যোগ করেছিল। কিন্তু শেষ দিকে এসে তাদের সম্পর্ক তেমন ঠিকঠাকভাবে আর চলেনি। ২০১৩ সালে মরিনহো সে ব্যাপারে খোলাসাও করেছিলেন।

টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘কোচ আর খেলোয়াড়ের মধ্যে একটা সময়ে এসে ভিন্নমত থাকতেই পারে। আমার তাতে সমস্যা নেই। আমার তাঁর (রোনালদো) সাথে একটা সমস্যা হয়েছিল।’

সে সমস্যার কথা বলতে গিয়ে মরিনহো আরো বলেন, ‘যখন একজন কোচ তাঁর ট্যাকটিকাল জায়গা থেকে খেলোয়াড়ের ভুল ধরে তখন ঐ খেলোয়াড়ের সেটি শোধরানো উচিৎ। কিন্তু রোনালদো এটা ভালভাবে নিতো না। সে ভাবতো, সে-ই ঠিক, সে-ই সব জানে, কোচ তাঁর উন্নতির ব্যাপারে কিছুই করতে পারবে না।’

বছর দেড়েক পরে আবারো গণমাধ্যমের সামনে মরিনহো সরাসরিই বলেছিলেন যে, তাঁর সাথে রোনালদোর আর কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রায় দশ বছর পর তাই সেই রোনালদোকেই আবার কোচিং করানোর ব্যাপারে পিছু হটতেই পারেন মরিনহো। কারণ মরিনহো-রোনালদোর শেষটা হয়েছিল তিক্ততায়। আর খুব সাম্প্রতিক কালে রোনালদোকে যারা কোচিং করিয়েছেন তারা সবাই অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন।

তাই এমন সব ঘটনার পর নিশ্চিতভাবেই রোনালদোকে কোচিং করাতে চাইবেন না মরিনহো। আর কোচিং ক্যারিয়ারে সব সময়ই তারুণ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে দল সাজিয়েছেন দ্য স্পেশাল ওয়ান। সেই হিসেবে রোনালদো এখন তাই পর্তুগালের নতুন গলার কাঁটা, অন্তত মরিনহোকে দলে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে।

রোনালদোকে এক পাশে রাখলেও দারুণ এক স্কোয়াডে সমৃদ্ধ পর্তুগাল। এই দলটাতে যেমন দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ মিডফিল্ড আছে, তেমনি রক্ষণভাগেও রয়েছে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে মাতিয়ে বেড়ানো প্রতিষ্ঠিত সব নাম। এমন একটা দল তাই দুর্দান্তভাবে বদলে দিতে পারেন মরিনহো।

তাঁর অভিজ্ঞতায় ঠাঁসা ক্যারিয়ার অন্তত সেটিই বলে। ক্লাব ক্যারিয়ারে ইংলিশ লিগ থেকে শুরু করে স্প্যানিশ লিগ, ইতালিয়ান লিগ- সব জায়গায় নিজের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। এমনকি নিজ দেশ পর্তুগালের ক্লাব পোর্তোকেও জিতিয়েছেন চ্যাম্পিয়ন লিগ শিরোপা। সব মিলিয়ে তাই পর্তুগালের কোচ হিসেবে দারুণ এক সংযুক্তি হতে পারেন হোসে মরিনহো। তবে মরিনহো থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছুই জানা যায়নি। যতটুকু জানা গেছে তা হলো, পর্তুগাল তাঁকে দলে ভেড়াতে তৎপর। কিন্তু এখনও অনেক কিছু ‘যদি’, ‘কিন্তু’র ব্যাপার আছে। সেগুলো কাটাতে পারলেই মরিনহো হতে পারেন পর্তুগাল ডাগআউটের প্রধান হর্তাকর্তা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মরিনহো ক্লাব ফুটবলে যেমন  সাফল্যের চূড়ায় গেছেন সেই ধারাবাহিকতা তিনি ন্যাশনাল টিমেও টেনে আনতে পারবেন কিনা। তবে এই প্রশ্নের বাইরেও আরেকটি বিব্রতকর ব্যাপার হলো, মরিনহো শেষ কয়েক বছরে ক্লাব ফুটবলেও ঠিক তেমন সাফল্যের দেখা পাননি। মোদ্দাকথা হলো, ক্যারিয়ারের পিক টাইম বেশ কিছু বছর আগেই তিনি ফেলে এসেছেন।

এখন এমন একজন কোচকে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে পর্তুগালের ব্যতি ব্যস্ত হওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। হয়তো মরিনহোর সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের কারণেই তাঁকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে। অবশ্য এখন শুধু সেই ‘ভাবনা’ থাকলেই হবে না। মরিনহোকে পর্তুগালের ডাগআউটে পাওয়ার জন্য এখনো বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশনকে। তবেই দেখা মিলবে দ্য স্পেশাল ওয়ানের।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link