ফজলে রাব্বি ৮৯ রান করে বাংলাদেশ টাইগার্সের রানের খাতা বড় করেই চলছিলেন। আর তখনই হাই পারফর্মেন্সের অধিনায়ক বোলিংয়ে নিয়ে এলেন তাঁর সেরা পেসারকে। আর রাজশাহীর পেস সহায়ক উইকেটকে কাজে লাগিয়ে কাজের কাজটাও করে দিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।
ফজলে রাব্বিকে সাজঘরে ফিরিয়ে নিজের দলকে আবার ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন। গত বিপিএল থেকে মৃত্যুঞ্জয়ের এই প্রমাণ করে চলা নজর কেড়েছে নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনেরও। এমনকি জাতীয় দলের ভাবনাতেও এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারকে রাখতে চান তিনি।
গত বিপিএল থেকেই শুরু হয়েছে মৃত্যুঞ্জয়ের বল হাতে এই ছুটে চলা। বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা অনূর্ধ্ব-১৯ দলটার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। তবে ইনজুরির কারনে শেষ পর্যন্ত আর বিশ্বকাপটা খেলা হয়নি তাঁর। এতে অবশ্য তাঁর ছুটে চলা থামানো যায়নি।
এবছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে মাঠে নেমেই হ্যাটট্রিক করে বসেন। এরপর পুরো আসরেই ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। বিশেষ করে ডেথ ওভারে তাঁর বোলিং যেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের মত ত্রাস হয়ে উঠেছিল। স্লগ ওভারে বোলিং করতে এসে তুলে নিয়েছেন উইকেটের পর উইকেট। ছিলেন আসরের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুণ অবশ্য এখানেই থামেন না। এরপর এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও একই চিত্র। এবার আগুন ঝড়ান চ্যাম্পিয়ন দল শেখ জামালের হয়ে। এই আসলে ১৪ ম্যাচ খেলে মাত্র ২২ বোলিং গড়ে তুলে নেন ১৭ উইকেট। ডেথ ওভারে বোলিং করলেও তাঁর ইকোনমি রেট ছিল পাঁচের কম। ফলে শেখ জামাল ধানমন্ডী ক্লাবের চ্যাম্পিয়ন হবার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল এই পেসারের।
এতো গেল সাদা বলের ক্রিকেটে মৃত্যুঞ্জয়ের কার্যকারিতা। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটে মাত্র ২১ বছর বয়সী এই পেসার কেমন করবেন সেটা একটা বড় ব্যাপার ছিল। আদৌ সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েও ছিল সংশয়।
তবে রাজশাহীতে বাংলা টাইগার্স ও হাই পারফর্মেন্স ইউনিটের মধ্যকার চারদিনের ম্যাচে পারফর্ম করে নির্বাচকদের বিশেষ নজর কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এমনকি জাতীয় দলের জন্যও তাকে বিবেচনায় রাখতে চান বলে জানিয়েছেন হাবিবুল বাশার সুমন।
মৃত্যুঞ্জয়ের বোলিং এর কথা বলতে বলতে তাঁর ব্যাটিংটায় তো নজর দেয়াই হলো না। তবে রাজশাহীতে সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। হাই পারফর্মেন্সের হয়ে প্রথম ইনিংসে যখন অন্য ব্যাটসম্যানরা নিজেদের উইকেট দিইয়ে এসেছে তখন দলের হাল ধরেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়।
শেষ বেলায় ৩৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে ২০০ রান পার করতে সাহায্য করেছেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৩৭ রানের ইনিংস। এরপর বল হাতেও নিলেন তিন উইকেট। নাঈম শেখকে ইনিংসের শুরুতেই ফেরান, এরপর দারুণ ব্যাট করতে থাকা ফাজলে রাব্বিকেও তিনিই ফিরিয়েছেন।
আর মৃত্যুঞ্জয়ের এই পারফর্মেন্স মাঠে বসে দেখেছেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন। তিনি জানিয়েছেন বছরের শুরু থেকেই এই অলরাউন্ডার তাদের মুগ্ধ করে চলেছেন। এছাড়া সাইফউদ্দিনের মত আরেকজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার যে বাংলাদেশের প্রয়োজন সেটাও তাদের মাথায় আছে এবং এই জায়গাটায় নির্বাচকরা মৃত্যুঞ্জয়কেই ভাবছেন।
তরুণ এই বোলিং অলরাউন্ডারকে নিয়ে রাজশাহীতে হাবিবুল বাশার সুমন বলেন,’চিন্তাভাবনা করেছি বলেই সে এখানে আছে। আমরা যদি কাওকে সুযোগ দেই লম্বা সময় ধরে সুযোগ দিতে চাই এবং চাই তিনি একটু তৈরি হয়ে আসুক। আমরা যেটা খুঁজছি তিনি সে বক্সটা টিক করছেন।
বোলিং অলরাউন্ডার সে। ব্যাটিংটা করতে পারেন। আমাদের সাইফউদ্দিন তো আছেন কিন্তু আমাদের আরেকজন দরকার ছিল। মনে হচ্ছে মৃত্যুঞ্জয় ভবিষ্যতে ভাল কিছুই দিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাঁকে ইন্ট্রোডিউস করার আগে তাঁকে একটু তৈরি করে নিতে চাই।’