মৃত্যুঞ্জয়, পেস বোলিং অলরাউন্ডারের স্বপ্নপূরণ?

বাংলাদেশ ক্রিকেট পাড়ায় তাঁর নামটা বহুদিন ধরেই আলোচিত। এই সুযোগ পেলেন বলে— এমন সব ভবিষ্যদ্বাণীও সমর্থককূলের কাছ থেকে মিলছিল বারংবার। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সেই সম্ভাবনার পালে হাওয়াও লেগেছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত সেবারের এশিয়া কাপে স্ট্যান্ডবাই তালিকায় ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। কিন্তু ঠিক চূড়ান্ত দলে সুযোগ মিলছিল না। অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান হলো। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দলে ডাক পেয়েছেন বাঁহাতি এ পেসার।

মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর মূল শক্তির জায়গা তাঁর পেস বোলিং। নতুন বলে ইনসুইং আর পুরোনো বলে ইয়র্কার — এমন সব অস্ত্র রয়েছে তাঁর বোলিংয়ে। তবে মৃত্যুঞ্জয় বাংলাদেশ দলে তাঁর রোলটা প্লে করতে চান ভারতীয় অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার মতো। কারণ বোলিংয়ের পাশাপাশি টুকটাক ব্যাটিংও করতে পারেন মৃত্যুঞ্জয়। আর তাই নিজেকে অলরাউন্ডার হিসেবেই দলে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তিনি।

মৃত্যুঞ্জয়ের নাম আগে থেকেই ক্রিকেটাঙ্গনে পরিচিত হলেও ধারাবাহিক পারফর্ম করেই তিনি দলে জায়গা করে নিয়েছেন। হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে পরিণত অবস্থাতেই দলে পেতে চেয়েছিল। আর সেই চাওয়া পূরণ করেই মৃত্যুঞ্জয় এখন রীতিমত ধারাবাহিক পারফর্মার হয়ে উঠেছেন।

দুই বছর ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মার তিনি। ২০২১ সালের বিপিএলে ৮ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়েছিলেন এ বাঁহাতি পেসার। যার মধ্যে একটি ছিল হ্যাটট্রিকও। এ ছাড়া ডেথ ওভারগুলোতে দারুণ দক্ষতা দেখিয়ে বোলিং করেছিলেন তিনি।

সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও (ডিপিএল) দারুণ ছন্দে আছেন মৃত্যুঞ্জয়। গতবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের হয়ে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়েছেন এ পেসার। একই সাথে শেষ দিকে ব্যাটে নেমে কার্যকরী দুটি ইনিংসও খেলেছেন তিনি।

আয়ারল্যান্ড সিরিজের খেলাগুলো হবে ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে মৃত্যুঞ্জয়ের। যে অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবেই কাজে দিবে তাঁর বোলিংয়ে। সময়ের ব্যবধানে মৃত্যুঞ্জয়ে হয়ে উঠেছেন আরো পরিণত বোলার। আগের চেয়ে বলে গতিও বেড়েছে বেশ। তাই ইংল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের পেস বোলিং শক্তিতে ভিন্ন মাত্রা দিতে পারেন মৃত্যুঞ্জয়।

অবশ্য মৃত্যুঞ্জয়ের এমন দুর্বার গতিতে চলার আড়ালে শঙ্কাও আছে। পেসাররা বরাবরই চোটজর্জর। আর তাতেই বেশ সখ্যতা মৃত্যুঞ্জয়ের। কখনো পিঠের চোট, কখনো কাঁধের চোট —ছোট্ট ক্যারিয়ারে এসব ইনজুরি বেশ ভুগিয়েছে মৃত্যুঞ্জয়কে। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা হয়নি এ ইনজুরির কারণেই। সেবার ইনজুরিতে না পড়লে হয়তো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফিরতে পারতেন তিনি।

তবে ক্যারিয়ারে এত ঘাত প্রতিঘাতই তাঁকে আবার মানসিকভাবে আরো শক্তিশালী করে তুলেছে। আর এই অভঙ্গুর, সবল মানসিকতাতেই মৃত্যুঞ্জয় বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। যা মৃত্যুঞ্জয়ের পেসের পাশাপাশি আরেকটি শক্তির জায়গা।

ইংল্যান্ড সফরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে মৃত্যুঞ্জয়ের সুযোগ মিলবে কিনা, তা কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে বটে। তাসকিনের অনুপস্থিতিতে হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজ, এবাদতদের উপরেই অর্পিত হতে পারে পেস আক্রমণের দায়িত্ব। তবে মৃত্যুঞ্জয়কে চাইলে চতুর্থ পেসার কাজে লাগাতেই পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। এতে করে বোলিং শক্তি তো বাড়বেই, তার সাথে বোনাস হিসেবে যুক্ত হবে লোয়ার অর্ডারে মৃত্যুঞ্জয়ের ব্যাটিং।

ইংল্যান্ডের কন্ডিশন এমনিতেই পেস সহায়ক। তাই চার পেসার নিয়ে খেলতেই পারে বাংলাদেশ। টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনায় ‘চার পেসার তত্ত্ব’ থাকলে একাদশে অনায়াসেই সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন মৃতুঞ্জয় চৌধুরী।

পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে এর আগে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের আগমন আশা জাগিয়েও সময়ের ব্যবধানে তা ব্যর্থতাতেই শেষ হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয় নিশ্চয়ই সেরকম ব্যর্থতা উপহার দিবেন না। অবশ্যই চোখ থাকবে বলে ব্যাটে সমান আগ্রাসনে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার দিকে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link