নজফগড় নবাবের মুলতান বিজয়

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে আগ্রহ উদ্দীপনার শেষ নেই। দর্শকদের হিসেবে বৈশ্বিক ক্রীড়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লড়াই এটি। আর এই লড়াইয়ে জয়-পরাজয় দেশ দুইটির জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে দাপুটে পারফরম্যান্স করতে সবাই-ই তো চায়৷ তবে চাওয়ার সাথে পাওয়ার মিল হয় অল্প কয়েকজনের। এমন অল্প কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম বীরেন্দ্র শেবাগ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে পেলেই এই বিধ্বংসী ব্যাটারের ব্যাট আরো চওড়া হয়ে উঠতো। টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেবাগ করেছিলেন ১২৭৬ রান আর ওয়ানডেতে করেছেন ১০৭১ রান।

দুই ফরম্যাট মিলিয়ে এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ১০ টি সেঞ্চুরি আর ৪ টি হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন এই ব্যাটার। তার মধ্যে রয়েছে কিছু স্মরণীয় ইনিংস যা এখনো পুলকিত করে দর্শকদের। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের বিপক্ষে ২০০৪ সালে এমনই একটা ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

সেবছর মুলতান টেস্টে ৩০৯ রান করে মহাকাব্যের জন্ম দিয়েছিলেন বীরেন্দ্র শেবাগ। প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন তিনি।

শেবাগ টেস্ট খেলতে পারে না, তাঁর ব্যাটিং স্টাইল লাল বলের খেলার সাথে যায় না – এমন সব সমালোচনা তখন ভেসে আসছিল বীরেন্দ্র শেবাগের কানে। এছাড়া টেস্ট সিরিজের আগে ওয়ানডতে তেমন কিছু করতে না পারায় সমালোচনার মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণে। তাই সাদা পোশাকেই নিন্দুকদের জবাব দিতে প্রস্তুতি নেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

বীরেন্দ্র শেবাগ বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতি মুলতানে ৩০৯ রানের ইনিংসটি। কেননা কেউই আশা করেনি যে শেবাগের মত একজন ওপেনার ৩০০ রান করতে পারে। দর্শক, সাংবাদিক এমনকি ধারাভাষ্যকার সবাই বলাবলি করেছিল শেবাগ টেস্ট ক্রিকেটার নয়। সে বড় রান করতে পারে না।’

সিরিজের প্রথম দুই টেস্টেও বলার মত কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন শেবাগ। তৃতীয় ম্যাচটি তাঁর জন্য ছিল টেস্ট দলে টিকে থাকার সম্ভাব্য শেষ সুযোগ। এই ম্যাচে রান করতে না পারলে দল থেকে বাদ পড়া প্রায় অবধারিত ছিল; তাই একবার সেট হতে পারলে ইনিংস বড় করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন তিনি।

ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার স্বীকার করেছেন ব্যাটিংয়ে নামার পর প্রথম দিকে কিছুটা ভীত ছিলেন। কিন্তু শোয়েব আখতার, মোহাম্মদ সামির প্রথম স্পেল খেলার পর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন তিনি।

শেবাগ বলেন, ‘উইকেট আর বল তখন নতুন ছিল, শোয়েব আখতার এবং মোহাম্মদ সামি দু’জনেই প্রচণ্ড গতিময় বোলার। একদিকে শোয়েব বল করছিলেন ঘণ্টায় ১৫৫ কিমি গতিতে, অন্য দিক থেকে সামির বল ছুটে আসছিল ১৪৫ কিমি/ঘন্টা গতিতে। কিন্তু যখন দুইজনের স্পেল শেষ হয়ে যায় তখন ব্যাটসম্যান হিসেবে আমার কাজটাও বেশ সহজ হয়ে গিয়েছিল।’

পরের স্পেলে পেসার শাব্বির আহমেদ এবং আব্দুল রাজ্জাককে আক্রমণে এনেছিলেন পাকিস্তানি অধিনায়ক। কিন্তু মাত্রই শোয়েব, সামিদের খেলা শেবাগের কাছে তুলনামূলক ধীরগতির বোলার রাজ্জাক, শাব্বিরদের খুব একটা হুমকি মনে হয়নি।

নিজের বক্তব্যে শেবাগ বলেন, ‘শোয়েব আর সামির ১২ ওভার ব্যাটিং করার পর আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। সেই সাথে বলের গতির সাথে মানিয়ে নেয়ার কারণে যখন রাজ্জাক এবং সাব্বির বল করছিল তখন আমার মনে হয়েছে দুইজন স্পিনার বল করছে।’

এরপর পাকিস্তানি বোলারদের উপর তাণ্ডব চালাতে ভুল হয়নি শেবাগের। চারজন বোলার সেই ইনিংসে ১০০ এর বেশি রান খরচ করেছিলেন৷ সবচেয়ে বড় ঝড় গিয়েছিল সাকলাইন মুস্তাকের উপর দিয়ে, ৪৩ ওভার বল করে এই স্পিনার হজম করেছিলেন ২০০ রানের বেশি।

নিজের বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ারে বীরেন্দ্র শেবাগ এমনই ছিলেন। ফরম্যাট কিংবা ম্যাচ পরিস্থিতি যেমনই হোক নিজের দর্শনের সাথে কখনো আপোস করেননি তিনি। তাই এখনো আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ের কথা ভাবলে সবার আগে শেবাগের নাম মনে পড়ে সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link