সবার আগে কুসুম বাগে…

তিনি হলেন বাইশ গজের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার। ১৯৫৯ সালে যখন লাহোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মত টেস্ট খেলতে নামেন, বয়স তখন ছিল মাত্র ১৫ বছর ১২৪ দিন। তিনি, প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন ১৭ বছর ৮২ দিনে, তখনকার দিনে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। আর প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক হয় ১৩ বছর ৪১ দিনে, মানে রীতিমত শৈশব থেকেই তিনি শীর্ষপর্যায়ের প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেট খেলেছেন।

পাকিস্তান ক্রিকেটের ইতিহাসে মোহাম্মদ ভাইয়েরা আলাদা একটা অধ্যায়ের দাবী রাখে। চার ভাই ক্রিকেট খেলতেন, তিনজনই ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটার। আর তাঁদের মধ্যে মুশতাক মোহাম্মদ শুধু পাকিস্তানের ক্রিকেটেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসেই আলাদা আলোচনার দাবী রাখেন।

তিনি হলেন বাইশ গজের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার। ১৯৫৯ সালে যখন লাহোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মত টেস্ট খেলতে নামেন, বয়স তখন ছিল মাত্র ১৫ বছর ১২৪ দিন।

তিনি, প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেন ১৭ বছর ৮২ দিনে, তখনকার দিনে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান। আর প্রথম শ্রেণিতে অভিষেক হয় ১৩ বছর ৪১ দিনে, মানে রীতিমত শৈশব থেকেই তিনি শীর্ষপর্যায়ের প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেট খেলেছেন।

চৌকশ ব্যাটসম্যান, ধূর্ত লেগ স্পিনার। বয়সটা ২০-এর কোঠায় পৌঁছায়নি। ক্রিকেটের প্রথম লিটল মাস্টার খ্যাত স্বয়ং হানিফ মোহাম্মদের ছোট ভাই তিনি। মুশতাক মোহাম্মদকে নিয়ে তাই আলোচনা হওয়াটা নিয়তিই ছিল।

আর ৭০-এর দশকে রিভার্স সুইপকে জনপ্রিয় করার পেছনে হানিফের সাথে সাথে তাঁর ছোট ভাইয়েরও ছিল বড় অবদান। ৪০-এর কাছাকাঠি গড় নিয়ে ব্যাট করে গেছেন টেস্টে। বোলিং গড় ছিল ৩০-এর নিচে।

তাঁকে তাই কোনো ‘ছাড়’ না দিয়েই পুরোদস্তর অলরাউন্ডার বলা যায়। ক্যারিয়ারে সবচেয়ে স্মরণীয় সময় আসে ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে, ক্যারিবিয়ান সফরে।

মুশতাক তখন অধিনায়ক। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া বলতে যা বোঝায় তার অনন্য এক নজীর গড়েন। দুই ইনিংসে করেন যথাক্রমে ১২১ ও ৫৬ রান। প্রথম ইনিংসে ২৮ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৯ রান দিয়ে নেন তিন উইকেট।

বোলিংটা ছিল ‘চলনসই’-এর চেয়ে বেশি। লেগব্রেক, গুগলি, ফ্লিপারগুলো ভালই পারতেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯৩৬ টি উইকেট পাওয়া তো আর মুখের কথা নয়। তাকে, পাকিস্তানের ইতিহাসেরই সেরা স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে গণ্য করা হয়।

পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের একজন তিনি। তার নেতৃত্বেই ৭০’র দশকে পাকিস্তান চূড়ান্ত একটা অতিমানবীয় দল হয়ে ওঠে। দলের সেরা ব্যাটসম্যান তখন জাভেদ মিয়াঁদাদ, সেরা বোলার ইমারন খান।

মাজিদ খান, জহির আব্বাস, ওয়াসিম রাজারা তখন ছিলেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে। মুশতাকের গড়ে দেওয়া মানসিকতার ভীতটাই পরবর্তীতে সামনে এগিয়ে নেন ইমরান খান। আর এরই হাত ধরে ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ জয় সম্ভব হয়।

পাকিস্তানের মধ্যে জয়ের মানসিকতা তৈরি করে দিয়ে যান মুশতাক। মুশতাকের অধীনে পাকিস্তান আটটি টেস্ট জিতে, হারে মাত্র চারটিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জয়। আর জিতেছেন ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট সিরিজ।

তবে, মুশতাক বড় পরিবর্তন আনেন পাকিস্তানের বোলিং সেট-আপে। তাঁর সময় থেকে কমপক্ষে ৪৫ শতাংশ উইকেট নিয়েছেন পাকিস্তানের স্পিনাররা। মানে মুশতাক অধিনায়ক হওয়ার পরই পেস বোলিংয়ের সাথে সাথে স্পিনেও বড় শক্তি হয়ে উঠেছে পাকিস্তান দল।

অবিভক্ত ভারতের গুজরাটে জন্ম মুশতাকের। শেষ টেস্ট খেলেন ১৯৭৯ সালে। মানে ২০ বছর পাকিস্তান দলকে সার্ভিস দিয়ে গেছেন এই কিংবদন্তি। মুশতাক ক্যারি প্যাকার ওয়ার্ল্ড সিরিজ খেলেন বিশ্ব একাদশের হয়ে।

অধিনায়ক কিংবা ব্যাটার – দুই পরিচয়েই পাকিস্তানের বাইরেও সফল ছিলেন মুশতাক। ইংলিশ কাউন্টিতে তিনি খেলেছেন নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে। একটা সময়ে তাঁদের ঘরের ছেলেই হয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৭৫ থেকে বছর তিনেক দলটির অধিনায়কত্বও করেন। এর মধ্যে ১৯৭৬ সালে মুশতাকের নেতৃত্বেই জিলেট কাপের শিরোপা জিতে দলটি!

কোচিংয়ে যুক্ত হয়েছেন খেলোয়াড়ী জীবন শেষে। পাকিস্তান দলের কোচও ছিলেন। তাঁর অধীনেই দলটি ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে এরপরের ২৪ বছরে আর ফাইনালে খেলার সৌভাগ্য হয়নি পাকিস্তানের।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...