বাংলাদেশের এক্স ফ্যাক্টর

২০১৫ সাল।

একটার পর একটা চমক উপহার দিচ্ছে সে বছর বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা, ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়। বাংলাদেশ দল তখন যা স্পর্শ করছে সোনা ফলছে। কিন্তু এই সবকিছু ছাপিয়ে সারা বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিলো একটি নাম – মুস্তাফিজুর রহমান – দ্য ফিজ।

ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ম্যাচেই নিলেন ১১ উইকেট। কিন্তু এই সংখ্যার চেয়েও বিস্ময়কর হয়ে উঠলো তাঁর বোলিং। কিছুতেই এই ছেলেটিকে পড়ে ফেলা যাচ্ছিলো না। স্লোয়ার, ফাস্টার, ইয়র্কার, কাটার – প্রায় একই অ্যাকশনে বিচিত্র সব ডেলিভারি করছিলেন বলে লোকে বলছিলো ফ্রিক। দূর্বোধ্য এক বোলার।

সাধারণত রহস্য বোলাররা খুব দ্রুতই তাদের মিস্ট্রিটা হারিয়ে ফেলেন। মুস্তাফিজের ক্ষেত্রেও সে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু বারবার প্রবল বিক্রমে এবং আরও কিছু জাদু নিয়ে ফিরে এসেছেন মুস্তাফিজ। সময়ের সাথে সাথে আরও দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছেন তিনি।

অভিষেকের পর থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার মুস্তাফিজ। এই সময়ে মিশেল স্টার্কদের টপকে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া বাহাতি বোলার মুস্তাফিজ। এবং বর্তমানের অন্যতম সেরা ডেথ ওভারের বোলার মুস্তাফিজ।

গত কিছুদিন ধরে মুস্তাফিজ আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের ছিলেন একেবারেই দুর্বোধ্য। আইপিএলেও দারুন ছন্দে ছিলেন। আর এবার মুস্তাফিজের সামনে সুযোগ, প্রথমবারের মত বিশ্বমঞ্চে শ্রেষ্ঠ বোলার হয়ে ওঠার।

বিশ্বকাপ তিনি আগেও পেয়েছেন। কিন্তু ঘটনাচক্রে বিশ্বকাপ আসরগুলোতে জ্বলে ওঠা হয়নি। এবার মুস্তাফিজ বিশ্বকাপের আগে আছেন দারুন ছন্দে। আর বিশ্বকাপটাও অনুষ্ঠিত হবে মোটামুটি উপমহাদেশিয় কন্ডিশনে। ফলে মুস্তাফিজকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখার সুযোগ আছে বৈকী!

অবশ্য মুস্তাফিজের জন্য সবটা ফুলের বিছানা হয়ে থাকবে, এমন আশা করাটা ঠিক হবে না। তার সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ খুব বড় হয়ে দেখা দেবে।

প্রথম কথা, দলের বোলারদের কাছ থেকে তাকে ভালো সমর্থন পেতে হবে। মুস্তাফিজ ইদানিং যে বোলিং করছেন, তা যত না উইকেট নেওয়ার জন্য, তার চেয়ে বেশি রান আটকানোর জন্য। এখন মুশকিল হলো ওপরের দিকে কোনো বোলার এই উইকেট নেওয়ার ভূমিকাটা পালন করতে না পারলে মুস্তাফিজকে দুটি কাজই করতে হতে পারে। আর তেমন ক্ষেত্রে মুস্তাফিজের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই উইকেট নেওয়ার কাজটা করেছেন সাকিব আল হাসান ও নাসুম আহমেদ। আর মুস্তাফিজ টানা কৃপণ বোলিং করে গেছেন। এখন আরব আমিরাত বা ওমানের কন্ডিশনে নাসুমের ঠিক ওরকম হন্তারক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুব কম। সে ক্ষেত্রে মুস্তাফিজকে উইকেট নেওয়ার কাজটাও করতে হবে সাকিবের সাথে। তখন মুস্তাফিজ যে স্লোয়ার বা কাটার দিয়ে রানকে একেবারে চেপে রাখবেন, সেটা কঠিন হবে।

মুস্তাফিজের জন্য আরেকটা চ্যালেঞ্জ হবে কন্ডিশন। তার যে বোলিং, তাতে স্পিন সহায়ক উইকেট খুব জরুরি। সবচেয়ে জরুরী মন্থর উইকেট। আরব আমিরাতে সেরকম উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। ফলে মুস্তাফিজ যে দারুণ কৃপণ থাকতে পারবেন, সে আশা করাটা ঠিক হবে না।

তারপরও লোকটি ফিজ। তিনি এসব ছোটখাটো চ্যালেঞ্জ অনায়াসে পার করে নিতে পারার কথা। এখন দেখার ব্যাপার বাংলাদেশকে কতদূর নিয়ে যেতে পারেন মুস্তাফিজ।

আরেকটা বিষয় হল – বৈশ্বিক মঞ্চে এই সময়ে যে গুটিকয়েক বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে এখন আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত মুস্তাফিজ। তিনি বাংলাদেশের এক্স ফ্যাক্টর।

কেন তিনি দূর্বোধ্য? কেন ডেথ বোলিংয়ে তিনি এত সফল? কিভাবে তিনি দ্রুতগতিতে স্পিন বোলিং করেন? – এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় আইপিএলের ধারাভাষ্য কক্ষে। আলোচনা হয়, তার মানে তাঁর বোলিংয়ের দূর্বলতার জায়গা হারিকেন দিয়ে খুঁজতে শুরু করেছে দলগুলো, অ্যানালিস্টরা করছেন কাটাছেড়া। এসব পাশ কাটিয়েও যদি সামর্থ্যের পুরোটা দিতে পারেন মুস্তাফিজ – তাহলেই তো তিনি সত্যিকারের নায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link